রাজারহাটে বৈদ্যেরবাজারে দূর্গা প্রতিমা তৈরির মহোৎসব, ব্যস্ত সময় পাড় করছে কারিগররা
প্রকাশ: বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৯:৪৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আর মাত্র ৩০দিন বাকি। ২০অক্টোবর শুক্রবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে সনাতন হিন্দু ধার্মবলম্বীদের বড় উৎসব শারদীয় দূর্গাৎসব শুরু হবে। মঙ্গলভার(২৪) অক্টোবর দশমী বিহিত পূজা দিয়ে দূর্গাপূজার উৎসব সমাপ্ত ঘটবে। প্রতিবছর শরৎ ঋতুতে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দূর্গা উৎসব পালিত হয়। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে দুই/তিন মাস আগে থেকেই কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের বৈদ্যের বাজার নামক স্থানে প্রতিমা কারিগররা (ভাস্কর) প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যে তারা কয়েকটি স্পটে পাঁচ শতাধিক দূর্গা মূতির কাজ সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে দুরদুরান্ত থেকে আগত পূজা প্রস্তুত কমিটির লোকজন বেশ কিছু প্রতিমার বায়না দিয়েছেন বলে ভাস্কররা জানিয়েছেন। এছাড়া প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অ ল থেকে প্রতিমা ক্রয় কিংবা দর্শন করতে ভীড় করছেন। ক্রেতাদের সুবিধার্থে ১৫বছর ধরে এ এলাকায় প্রতিমার হাট বসান প্রতিমার কারিগররা।
বুধবার(২০সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৈদ্যের বাজার সংষ্কৃত টোল বিদ্যালয়র উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিম, স্মাট ক্লাবের পাশে, বৈদ্যর বাজারের পাশে ৪টি স্পটে প্রায় পাঁচ শতাধিক দূর্গার মূর্তি, কার্তিক, গনেশ, ল´ী, স্বরস্বতী, মহিষাসুর ও মহিষের মুন্ড সহ তাদের বাহন মূর্তি তৈরি করেছেন। অনেক জায়গায় মূর্তিগুলোকে আলাদা আলাদা আবার কিছু মূর্তি এক পাঠে(ফ্রেমে) রেখেছেন। প্রায় মূর্তিগুলোতে মাথা লাগিয়ে দিয়ে রুপ দেয়ার চেষ্টা করছেন। আবার কিছু মূর্তি মাথা ছাড়াই রেখেছেন। ভাস্করা জানান, দুই মাটি হয়ে গেছে। মূর্তিগুলো রোদে শুকিয়ে গেলে আবার এর উপর মাটি দেয়া হবে। এভাবে তিনবার মাটি দিয়ে শুকানোর পর হাতের তুলি পরশে রং করা হয়। তার পর মূর্তিগুলোকে বিভিন্ন অলংকার দিয়ে সাজিয়ে প্রকৃত রুপ দান করে বিক্রির উপযোগী করা হয়। প্রটি এক একটি দূর্গার ফ্রেম সহ মূর্তির ধরন অনুযায়ী ১৫হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে হিন্দু ধর্মাবলীগণ এসে এসব প্রতিমা কিছুটা সস্তা দরে ক্রয় করে নিয়ে যায়। কারখানার মালিক মিতু মালাকর(২৬) বলেন, তার কারখানায় ৫জন ভাস্কর কাজ করে। সে এবারে ২৫টি দূর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ১০টি প্রতিমার কাজ অর্ধেক সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিজন কারিগরকে মৌসুমে ১৫ থেকে ২০হাজার টাকা প্রদান করা হয়। কারখানায় কাজ করার সুবিধা হলো অনেক গুলো প্রতিমা তৈরি করা যায়।
আর মন্দির মালিকদের বাড়ীতে কাজ করলে সে সুবিধা পাওয়া যায় না। এছাড়া প্রতিমা তৈরির উপকরনও তারা সঠিক সময়ে দিতে পারে না। সে কারনে সময় অনেক বেশী লাগে। কারখানার মালিক সন্তোষ (৪০) বলেন, ৪০বছর আগে সে ভারতে যায়। সেখানে কারিগরদের প্রতিমা তৈরি করতে দেখে নিজে তৈরি করার কাজে উৎসাহিত হন। সে জন্য প্রথমে স্বরস্বতী প্রতিমা তৈরি করেন। আস্তে আস্তে সে দূর্গা প্রতিমা তৈরি করার চেষ্টা করেন। তার প্রতিমা দেখে মুগ্ধ হয়ে অনেকে প্রতিমা তৈরি করতে উৎসাহ যোগান। এর পর থেকে সে নিয়মিত প্রতিবছর বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে প্রতিমা তৈরি করে আসছেন। এক একটি প্রতিমা তৈরি করতে ১০/১২হাজার টাকা খরচ পড়ে। গত ৪বছর ধরে সে আর বাইরে প্রতিমা তৈরি করতে যায় না। বাড়ীর পাশে প্রতিমা তৈরির কারখানা দিয়েছেন। সেখানে প্রতিমা তৈরি করে বিক্রি করেন।
শুধু তিনি নন সেখানে তপন মালাকর, নরেশ মালাকর, বিধান, বিপিন, সুদয়, অজয়, জগদীশ চন্দ্র সহ বেশকিছু মালিক ও কারিগর মৌসুম এলেই শতশত প্রতিমা তৈরি করেন। প্রতিমা তৈরি করে বিক্রি করাই তাদের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সব মিলে প্রতিবছর দূর্গা পূঁজার আগে বৈদ্যের বাজার এলাকায় প্রতিমা তৈরির মহোৎসব শুরু হয়। এই হাট থেকে প্রতিবছর গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থেকে আসা জাকের পার্টির লোকজন সস্তা দরে তৈরি প্রতিমা নিয়ে গিয়ে জাকজমকভাবে উৎসব পালন করেন। এছাড়া দুর-দুরান্ত থেকে লোক জন এসে কিছুটা সস্তা দরে প্রতিমা ক্রয় নিয়ে যান।
এব্যাপারে ছিনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সাদেকুল ইসলাম নুরু জানান, বৈদ্যেরবাজার দূর্গা প্রতিমার তৈরির কারখানা থেকে প্রতিমা কারিগররা কয়েক লাখ টাকা আয় করেন। আবার জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন হওয়ায় কখনো কখনো তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। বছরের প্রতিটি দিনই এসব কারখানায় বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা বিক্রি করছেন কারখানার মালিকরা। তাই সরকারী পিষ্ট-পোষকতা পেলে কারিগররা কর্মমূখী হয়ে আরো লাভবান হবেন।