শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
কক্সবাজারে ত্যাগী নয়, ভোগীদের গুরুত্ব বেশী!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১০:২০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

রাজনীতিতে দল গুছিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জনে অনীহা দেখাচ্ছেন তৃণমূলের কর্মীরা। প্রান্তিক পর্যায়ে দলের জন্য যতই ত্যাগ বা জনপ্রিয়তা থাকুক না কেন, দলীয় পদ-পদবী পাওয়ার জন্য এখন এসব আর কাজে আসছে না আগের মতো। অনৈতিক লেনদেন, পরিচিতি বা ‘মাই ম্যান’ হলে অনেক অনভিজ্ঞও দলের শাখা সংগঠনের সভাপতি-সম্পাদকের পদ পেয়ে যাচ্ছেন। আগের মতো কাউন্সিলে তৃণমূলের সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন না হওয়ায় কমছে ত্যাগী কর্মীদের কদর। এসব কারণেই তৃণমূলে এখন দল গোছানোর বদলে নিজের আখের গুছিয়ে পদ কেনার ধান্ধায় মাঠে বিচরণ করছেন পদপ্রত্যাশীরা। এসব বিষয় নিয়ে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূল কর্মীদের।

সম্প্রতি কক্সবাজার জেলায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের জেলা ও একাধিক উপজেলায় সম্মেলন শেষ হলেও কাউন্সিল না করে কেন্দ্রীয় নেতারা কমিটির কার্যক্রম কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে এই অসন্তোষ আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।

এর আগে কেন্দ্রকে খুশি রাখার জন্য কেন্দ্রঘোষিত কমিটি সবসময় অভিনয় করলেও জেলা-উপজেলা বা সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুতে কোনো পদক্ষেপই হাতে নেয় না। ফলে পদ পেয়ে অনেকে আখের গোছালেও নতুন নেতৃত্ব উঠে আসে না। এ পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে দল গোছাতে যোগ্য নেতৃত্ব পাচ্ছে না সংগঠনগুলো- এমনটাই মনে করছেন সাবেক ছাত্র, যুব ও আওয়ামী লীগ নেতারা।

দলীয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৯ মার্চ কক্সবাজার পৌর যুবলীগের সম্মেলন শেষ হলেও কাউন্সিল শেষ করা যায়নি। পরদিন ১০ মার্চ রামু উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন হলেও সেখানেও কাউন্সিল হয়নি। ১১ মার্চ সম্মেলন হয়েছে কুতুবদিয়া উপজেলা যুবলীগের। ১২ মার্চ উখিয়া উপজেলা যুবলীগ ও ১৩ মার্চ সম্মেলন হয় মহেশখালী উপজেলা যুবলীগের। কিন্তু কোথাও কাউন্সিল সম্পন্ন না হওয়ায় গঠিত হয়নি নতুন কমিটি। এসব সম্মেলন শেষ করে নতুন কমিটি ঘোষণার দায়িত্ব কেন্দ্রে নিয়ে যান জেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। এসব শাখা সংগঠন থেকে ‘নেতৃত্বকামীদের’ কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) আহ্বান করে কেন্দ্রীয় নেতারা। একইভাবে কমিটি না থাকা কক্সবাজারের নতুন উপজেলা ঈদগাঁও ও চকরিয়ার মাতামুহুরি সাংগঠনিক উপজেলার নেতৃত্ব প্রত্যাশালীদের কাছ থেকে গত ৫-৮ জানুয়ারি সিভি জমা নেওয়া হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়ন নিয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা যুবলীগ চালিত হয়ে এলেও গত বছর ৫ ইউনিয়ন নিয়ে ঈদগাঁও উপজেলা গঠিত হলে সেখানকার জন্য সিভি নেওয়া হয়। তবে কোন নির্দেশনা আসেনি মেয়াদোত্তীর্ণ কক্সবাজার সদর উপজেলা কমিটির বিষয়ে। সদর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল হক রিকো ঈদগাঁওর বাসিন্দা হিসেবে ঈদগাঁও উপজেলা আহবায়কের পদ পেতে সিভি দিয়েছেন। মেয়াদোত্তীর্ণ সদর কমিটির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন পুতু অর্ধাংশ নিয়ে কার্যক্রমহীন রয়েছেন।

একইভাবে মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে পেকুয়া, চকরিয়া, চকরিয়া পৌরসভা, টেকনাফ উপজেলা যুবলীগ ঢিমেতালে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের বেশ কয়েকজন সাবেক নেতাকর্মী জানান, ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন ও কাউন্সিলে সোহেল আহমদ বাহাদুর সভাপতি ও শহীদুল হক সোহেল সাধারণ সম্পাদক হন। এই দুজনের কমিটি পাঁচ বছর পার করে দিলেও নানা কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ হন। কোনো ওয়ার্ড কমিটিও গোছাতে পারেননি। ফলে তাদের পরে নেতৃত্বপ্রত্যাশী কয়েকটি ব্যাচ ছিটকে যায়। নতুন নেতৃত্ব উঠে না আসায় তৃণমূলে চরম অসন্তোষ রয়েছে। নানাবিধ অনিয়ম, অভিযোগ ও ব্যর্থতায় চলতি বছর জুনের মধ্যভাগে পাঁচ বছর পর কেন্দ্র থেকে দুই সোহেলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর নেতৃত্বপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে সিভি আহ্বান করে জমা নিলেও এখনও পর্যন্ত আহ্বায়ক বা নতুন কোনো কমিটিও আসেনি। সব কমিটির ঘোষণা কেন্দ্র নির্ভর হয়ে যাওয়ায় চরম এলোমেলো অবস্থানে রয়েছে জেলা ও উপজেলা যুবলীগ।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি সংগঠনকে ডুবিয়ে কর্মকাণ্ড চালাতেন উখিয়া-টেকনাফে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায়। ছাত্র ইউনিয়ন থেকে উঠে আসা সোহেল আহমদ বাহাদুরের যুবলীগের ‘জেলা সভাপতি’র পদ যেন ‘আলাদীনের চেরাগ’ হয়ে ধরা দেয়। এক সময় এনজিও সংস্থার কর্মজীবী বাহাদুর এখন অঢেল টাকার মালিক। প্রবাসে থাকা আত্মীয়ের মাধ্যমে সৌদি আরবে পেট্রল পাম্প ও আবাসিক হোটেলে বিনিয়োগ করেছেন। দেশে কয়েকটি কাভার্ড ভ্যান, স্পিড বোট, টেকনাফ সড়কে চলাচল করা একাধিক পরিবহনে, ফ্রেশ সিমেন্ট ডিলারশিপে বিনিয়োগসহ ও গ্রামের বাড়ি টেকনাফের কচুবুনিয়ায় বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছেন বলে প্রচার রয়েছে। অথচ সভাপতি হওয়ার আগে তার দৃশ্যমান তেমন কিছুই ছিল না। টেকনাফে বিগত উপজেলা ও ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি ভোট করার অভিযোগও রয়েছে বাহাদুরের বিরুদ্ধে। তার বাবা অ্যাডভোকেট নুর আহমদ একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেঈমানি করে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে জাসদে যাওয়ার অভিযোগ আছে। এ কারণে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে এসে যুবলীগের দায়িত্ব পেয়ে দল গোছানোর পরিবর্তে আখের গুছিয়েছেন।

তবে সব অভিযোগ সত্য নয়, বরং এসব প্রতিহিংসা বলে দাবি করেছেন সোহেল আহমদ বাহাদুর।

অন্যদিকে বাবা জেলা আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি মোজাম্মেল হকের নাম ভাঙিয়ে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে শহীদুল হক সোহেলও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়েছেন। কিন্তু সেভাবে সংগঠনের ভিত মজবুত করতে পারেননি। বলতে গেলে সভাপতি-সম্পাদক দুজনই নিজেদের আখের গুছিয়ে হাজার হাজার ত্যাগী নেতাকর্মীকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছেন। অবশ্য কক্সবাজার পৌর নির্বাচন ইস্যু নিয়ে সংগঠন থেকে বহিষ্কার হন সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সোহেল।

কক্সবাজারে যুবলীগের মতোই অবস্থায় রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। ২৮ জুলাই জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হলেও কাউন্সিল হয়নি। যুবলীগের পথ ধরেই কমিটির সিদ্ধান্ত কেন্দ্রে নিয়ে যান নেতারা। সভাপতি-সম্পাদক পদে নেতৃত্বপ্রত্যাশীদের কাছ হতে জীবনবৃত্তান্ত নেয়া হয়েছে সম্মেলন শেষে। এরপর থেকে পদপ্রত্যাশীরা ঢাকায় পড়ে রয়েছেন। একেকজন একেক নেতাকে ম্যানেজ (ব্যবস্থা) করার প্রণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছেন। অনেকেই মোটা অঙ্কের টাকায় পদ পেতে দর কষাকষি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। উল্লেখ্য, দেড় মাসেও আলোর মুখ দেখেনি জেলা কমিটি।

কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘গণতান্ত্রিক চর্চায় সম্মেলন ও কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন জরুরি। এতে নেতত্ব পাওয়ার আশায় পদপ্রত্যাশীরা কর্মী সৃষ্টি ও যোগাযোগ বাড়াতো। কিন্তু টানা ১৫ বছর দল ক্ষমতায় থাকায় এই ধারার ব্যত্যয় ঘটছে তৃণমূলে।’

জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে জেলা থেকে তৃণমূল কোথাও আগের মতো সুসংগঠিত নেই আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এমন অবস্থাও শুনি সভাপতি-সম্পাদক ছাড়া কমিটির অন্যরা একে অপরকে চেনেও না-নেই চেইন অব কমান্ড। কিন্তু যার কাছ থেকে কমিটি মিলবে, সেই নেতাকে তোয়াজ করতেও ভোলেন না।’

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক দায়িত্বশীল এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ বলেন, ‘ছাত্রলীগ ও যুবলীগ জেলার দায়িত্বশীলদের স্বেচ্ছাচারিতা, প্রতিহিংসা, উচ্চাভিলাষ ও অদক্ষতার কারণে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ত্যাগী হাজারো নেতাকর্মী থাকা সত্ত্বেও সংগঠনগুলো আজ একপ্রকার অস্তিত্ব সংকটে।’

জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে জেলা যুবলীগ তার অতীত জৌলুস হারিয়েছে। ছাত্রলীগের অভিজ্ঞ ও ত্যাগীরা পরবর্তীতে যুবলীগের দায়িত্বশীল হতো। কিন্তু গতবারে ছাত্রলীগের কর্মীরা অবহেলিত হয়ে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ও যুবদল এমনকি ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাকর্মীরাও যুবলীগের দায়িত্বশীলদের পেছনে সার্বক্ষণিক থেকে নিজেদের যুবলীগ কর্মী পরিচয় দিয়েছে।’

আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘নানা কারণে অগোছালো হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠা কক্সবাজারের সাংগঠনিক কার্যক্রম গোছাতে উদ্যোগ চলছে। যুবলীগের নিবেদিতপ্রাণ, ত্যাগী, আদর্শিক ও স্বচ্ছ নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে শিগগিরই নতুন কমিটি ঘোষণা হবে।’



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]