ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২ অক্টোবর। নানা কারণে বর্তমান ডিএমপি কমিশনারের চুক্তির মেয়াদ আর বাড়াতে চাচ্ছে না সরকার। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দক্ষ ও পেশাদার পুলিশ কর্মকর্তাকে এ পদে বসাতে চায় সরকার। তাই ২ অক্টোবরের পর নতুন কমিশনার পেতে যাচ্ছে পুলিশের সবচেয়ে শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ডিএমপি।
এ ছাড়া নতুন ডিএমপি কমিশনারের সময় অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই নির্বাচনের আগে ও পরে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলার দায়ভার থাকবে নতুন ডিএমপি কমিশনারের কাঁধে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সবকিছু মিলিয়ে বর্তমান ডিএমপি কমিশনারের উত্তরসূরি কে হচ্ছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। ইতোমধ্যে বাছাই প্রক্রিয়ায়ও শুরু করে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আগামী রোববার অথবা সোমবার নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানাবো হবে কে হচ্ছেন পরবর্তী ডিএমপি কমিশনার।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপি কমিশনার পদের জন্য মোট তিনজনের নাম তালিকায় রয়েছে। প্রথা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার দিক দিয়ে এবারের ডিএমপি কমিশনার ১৫তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা থেকে হওয়ার কথা। তবে, শেষ পর্যন্ত এবার প্রথা ভাঙা হতে পারে।
পুলিশের দায়িত্বশীল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, ডিএমপি কমিশনার হওয়ার দৌঁড়ের তালিকায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত নামটি হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান (অতিরিক্ত আইজিপি) হাবিবুর রহমান। হাবিবুর রহমান বিসিএস ১৭তম ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি ডিএমপি সদরদপ্তরের ডিসি, ঢাকা জেলার এসপি, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এবং পুলিশ সদরদপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। হাবিবুর রহমান ১৯৬৭ সালে গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, হাবিবুর রহমানকে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিতে হলে প্রচলিত প্রথা ভাঙতে হবে। কারণ, বিসিএস ১৫ ও ১৬তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ডিঙ্গিয়ে বিসিএস ১৭তম ব্যাচের হাবিবুর রহমানকে ডিএমপি কমিশনার করতে হবে। তবে, পুলিশ হিসেবে কর্মজীবনের সফলতা, গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বিবেচনায় এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমানকেই এগিয়ে রাখা হয়েছে।
জ্যেষ্ঠতার দিকে দিয়ে সম্ভাব্য ডিএমপি কমিশনার হওয়ার দৌঁড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রধান (অতিরিক্ত আইজিপি) মো. মাহাবুবর রহমান।
অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান ১৫তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ১৫তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন।
তিনি এএসপি হিসেবে নরসিংদী জেলা পুলিশে, সার্কেল এএসপি হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলার সদর সার্কেল ও বাজিতপুর সার্কেলে এবং এএসপি সদর সার্কেল হিসেবে নেত্রকোনা জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ডিএমপি কমিশনারের পদে কে আসবেন সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে অনুমোদন দেন।
সম্ভাব্য ডিএমপি কমিশনার হিসেবে তালিকায় নাম রয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের। তিনিও ১৫তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সন্তান কৃষ্ণপদ রায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করার পর ১৯৯৫ সালে ১৫তম বিসিএস পরীক্ষায় এএসপি পদে বগুড়ায় যোগদান করেন তিনি।
কর্মজীবনে তিনি সিএমপিতে সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শেরপুর, চাঁদপুর জেলায় এবং বিশেষ পুলিশ সুপার হিসেবে সিআইডিতেও কর্মরত ছিলেন। ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন কৃষ্ণ পদ রায়। সিএমপি কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি ডিএমপিতে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। তিনি ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৩ সালে কসোভো, লাইবেরিয়া ও সুদানে জাতিসংঘের শান্তি কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদরদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিএমপি কমিশনারের পদে কে আসবেন সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে অনুমোদন দেন। পুলিশ হিসেবে কর্মজীবনের সফলতা, গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বিবেচনায় এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিনিয়র-জুনিয়র নির্বিশেষে যে কেউ এ দায়িত্ব পেতে পারেন।
আগামী রোববার কিংবা সোমবার নতুন ডিএমপি কমিশনার হিসেবে কে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন— এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।