প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবং মশার হাত থেকে বাঁচতে হলে মশারি ব্যবহার করতে হবে। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। মশা মেরে শেষ করা যাবে না। নিজেরাও সচেতন হতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গণভবনে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন মশার উপদ্রব, ডেঙ্গুর উপদ্রব। এই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সকলেরই কিছু করণীয় আছে। আপনারা নিশ্চয়ই যার যার নিজের ঘর-বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। নিজেদেরও সচেতনা সৃষ্টি করার জন্য আমি আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা তৃণমূলের জনগণের ভোটে নির্বাচিত সেবক। আপনারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করে মানুষের আস্থা অর্জন করে এগিয়ে যাবেন। মানুষ যেন আবার ভোট দেয়, সে পরিবেশ তৈরি করবেন। আমরাও এটা চাই, আজকে যে দীর্ঘদিনের উন্নয়নের ফসল, এটা যেন অব্যাহত থাকে। কেউ যেন পিছিয়ে দিতে না পারে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আমরা আরও উজ্জ্বল করে বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছে খালেদা জিয়া। আজ কৃষকের ঘরে সার পৌঁছে যায়। তাদের কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। এটা দিয়ে কৃষি উপকরণ কিনতে পারে। ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এর মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছে যায়। জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দিই।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ’৯৬ সালে ১৬০০ মেগাওয়াট ছিল। আমরা ৪ হাজার তিনশ করে যাই। পরে বিএনপির আমলে কমে গেছে সেটা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এখন ২৫ হাজার মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পায়। শিক্ষার্থীদের বই, বৃত্তি, উপবৃত্তি দিচ্ছি। ডিজিটাল সেন্টার করে দিচ্ছি।
ইনকিউবেটর, হাইটেক পার্ক করে দিয়েছি। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ৭৩ শতাংশ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ঘরে ঘরে মোবাইল ফোন। সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করি। কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না। নানান ভাবে তাদের এগিয়ে নেওয়ার কাজ করছি। প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, স্বামী পরিত্যক্তাদের ভাতা দিচ্ছি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বীকৃতি ও তাদের ভাতাও দিচ্ছি। ৫ কোটি মানুষের পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। এটা দিয়ে স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক আদর্শ নিয়ে সংবিধানে বর্ণিত পন্থায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌর ও সিটি করপোরেশন আইন করে আমরা এগুলো নিয়ে যাচ্ছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, ঘরে বসে চাকরির আবেদনসহ যাবতীয় সেবার কাজ করতে পারে মানুষ। অনলাইনে কেনা-বেচাসহ সব কিছু হচ্ছে। আমরা তরুণ-তরুণীদের ফ্রিল্যান্সিং শিখাচ্ছি। সে এই ট্রেনিং নিয়ে বিদেশেও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে গেছেন জাতির পিতা। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে ক্ষমতায়ন করে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন। তখনই এল আঘাত। জাতির পিতাকে সপরিবারে শাহাদতবরণ করতে হয়। হারিয়েছিলাম বাবা-মা ভাইবোন। পেয়েছি বিশাল জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের মানুষই আমার আপনজন। তারাই আমার সব শক্তি।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করার সঙ্গে সঙ্গে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজ করছি। আমাদের যা সম্পদ আছে, তা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। সেইভাবে কাজ করছি। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে বলেই এ কাজ করে যেতে পারছি। ৭৬৭ ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স করে দিয়েছি। ১১৯১টি সাইকোন সেন্টার নির্মাণ করেছি। গ্রাম পর্যায়ে অসংখ্য রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ কালভার্ট করে দিয়েছি। এখনো গ্রামে অনেক রাস্তা কাঁচা আছে, সামনে ক্ষমতায় এলে সেগুলোও থাকবে না। সব পাকা করে দেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মসজিদ, মন্দির ও প্রেগোডা, যখন যেখানে যেটা দরকার করে দিয়েছি। সবাই এক কাতারে যু্দ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। একসঙ্গে থাকবো।
তিনি বলেন, তৃণমূলের জন্য পল্লীসঞ্চয় ব্যাংক এবং প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি। তারা তো এ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এখনো দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়ে। এগুলো খেয়াল রাখবেন। পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে আপনাদের দাঁড়াতে হবে। কেউ যাতে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের না জড়ায়, সেটা আপনাদের দেখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। ৩০ ধরনের ওষুধ দিই। চিকিৎসা ও ওষুধ মানুষ পায় কিনা একটু দেখবেন। এতে নজর রাখবেন।
তিনি বলেন, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সব যায়গায় ফসল ফলাবেন। তাতে আপনারাই লাভবান হবেন। আমিও লাভবান হয়েছি। নিজেরা ফসল ফলাবো, নিজেরা খাবো। কারো কাছে হাত পাততে হবে না। আমি অনুরোধ করবো, আপনারা নিজেদের জমি চাষ করেন, গাছ লাগান, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হন।
দেশে প্রথমবারের মতো উদযাপিত হচ্ছে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস। এ উপলক্ষে বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর, পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ প্রায় আট হাজার জনপ্রতিনিধি অংশ নেন। তবে সাময়িক বরখাস্ত ও মামলার আসামিদের ডাকা হয়নি।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, নারায়ণগঞ্জের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ বিভিন্ন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইবরাহীম। এছাড়া দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর, পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
ভোরের পাতা/কে