শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বিলুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ‘পালতোলা নৌকা’
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৯:৩৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

নদীমাতৃক বাংলাদেশে এক সময় নৌকাই ছিল আদি বাহন। বর্তমানে যান্ত্রিক সভ্যতার অতলে বিলীন হয়ে গেছে আবহমান গ্রাম বাংলার মনমুগ্ধকর সেই সব চিত্র কল্প। নদীবেষ্টিত নওগাঁর আত্রাইয়ে নদীতে সারি সারি পাল তোলা নৌকা এক সময়ে চোখে পড়লেও সময়ের বিবর্তন, জৌলুস হারানো নদ-নদীর করুণ অবস্থা আর যান্ত্রিক সভ্যতা বিকাশের ফলে বিলুপ্তির পথে আবহমান গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ঐতিহ্যবাহী পালতোলা নৌকা।

হাতে গোনা দু’একটা পালের নাও বাদামী নাও চোখে পড়লেও তাদের নৌকায় আগের মতো আর মানুষ ওঠে না। নতুন বধূ শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য পালতোলা নৌকার বায়না আর ধরে না। রঙ বেরঙের পাল খাটিয়ে পণ্যের পসরা সাজিয়ে ভাটিয়ালির সুরের তালে তালে ভেসে বেড়ায়না সওদাগরি নৌকার বহর আর দেখা মেলেনা। আলোকচিত্রের বিশাল শক্তিশালী ক্যানভাসেই শুধু জীবন্ত হয়ে আছে চিরন্তন বাঙ্গালী সংস্কৃতির এই অমুল্য সম্পদ।

এক সময় নওগাঁ জেলার ছোট যমুনা নদীবেষ্টিত আত্রাই উপজেলার বেশির ভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিল নদী আর পালের নৌকা, ডিঙ্গি নৌকাসহ বিভিন্ন নৌকার সম্পর্ক। দশ থেকে পনেরো বছর আগেও দেশের পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা আর ধলেশ্বরী নদীর নৈসর্গ রূপের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে সারি সারি নৌকা। এসব নৌকায় ছিল রঙিন পাল। স্বচ্ছ পানির কলতান আর পালে লাগা বাতাসের পত পত শব্দ অনুভূতি জুগিয়েছে প্রাণে। পালতোলা নৌকায় নদী ভ্রমণে যতটা না তৃপ্ত হতো মন তার চেয়ে দূর পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা আর ধলেশ্বরীর পাড় থেকে সারি সারি নৌকার ছন্দবদ্ধ চলা আর বাতাসে পাল উড়ার মনোরম দৃশ্য দেখে মনপ্রাণ আনন্দে নেচে উঠেছে।

আত্রাইয়ের বুক চিরে বয়ে চলা যমুনা নদীর পাড়ে দল বেঁধে মানুষ পালতোলা নৌকার সে দৃশ্য দেখে চোখ জুড়ায়ি আসতো। আর মাঝনদী থেকে ভেসে আসা দরাজকণ্ঠে ভাটিয়ালি গানের সুর শুনে মনে তৃপ্ত এনে দিতো। নদীকে ঘিরে এক সময় পালতোলা নৌকা ছিল যাতায়াতের মাধ্যম। এপাড় থেকে ওপাড়ের যাত্রীদের ভাসিয়ে নিয়ে যেত নৌকা। তবে কালের পরিক্রমায় এসব নৌকা এখন অতীত। এখন নদীতে যেটুকু সময় পানি থাকে বিশেষ করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে নৌকা চলাচল করে। পালতোলা নৌকার দেখা মিলে না। এক সময় সাম্পান, যাত্রীবাহী গয়না, একমালাই নৌকা, কোষা নৌকা, ছিপনাও, ডিঙিনৌকা, পেটকাটা নাও, বোঁচা নাও সহ বিভিন্ন ধরণের পালের নাওয়ের ব্যবহার ছিল।

যান্ত্রিক সভ্যতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পালতোলা নৌকা। কদর নেই মাঝি-মাল্লাদেরও। নৌকায় পাল এবং দাঁড়-বৈঠার পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন। মাঝেমধ্যে দু’একটা পালের নাও এখনো নদ-নদীতে দেখা যায়। পালের নাওকে উপজীব্য করে যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকরা রচনা করেছেন তাঁদের অমূল্য সৃষ্টি কবিতা, ছড়া, গল্প, গান পালা ইত্যাদি। প্রখ্যাত শিল্পীরা তৈরি করেছেন উঁচু মানের শিল্পকর্ম। শুধু দেশী কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী বা রসিকজনই নন বরং বিদেশী অনেক পর্যটকের মনেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পালের নাও।

বিভিন্ন আকার ও ধরণের নৌকাই ছিল মানুষের যাতায়াত ও পরিবহনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। আর এ সব নৌকা চালানোর জন্য পালের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। হাজারীপাল, বিড়ালীপাল, বাদুরপাল ইত্যাদি পালের ব্যবহার ছিল নৌকাগুলোতে। পালের নৌকার পাশাপাশি মাঝিদেরও বেশ কদর ছিল একসময়। প্রবীণ মাঝিরা নৌকা চালানোর বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কে বেশ পারদর্শী ছিলেন। তাঁদের হিসেব রাখতে হতো জোয়ার-ভাটার, বিভিন্ন তিথির এবং শুভ-অশুভ ক্ষণের। কথিত আছে, বিজ্ঞ মাঝিরা বাতাসের গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারতেন ঝড়ের আগাম খবর। রাতের আঁধারে নৌকা চালানোর সময় দিক নির্ণয়ের জন্য মাঝিদের নির্ভর করতে হতো আকাশের তারার উপর। তাই আগেভাগেই শিখে নিতে হতো কোন তারার অবস্থান কোন দিকে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সি তা বিশ্বাস বলেন, “এক সময় গ্রাম-বাংলার মানুষের নৌকাই ছিলো আদি বাহন। যুগের চাহিদা অনুযায়ী ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা ট্রলারেরও অবেদন রয়েছে। তাই বলে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। সেই নৌকাগুলোর কদরও যাতে সব সময় থাকে তারও একটা ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখা প্রয়োজন বলেও আমি মনেকরি। #



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]