ঝালকাঠির রাজাপুরে দেশীয় পিস্তল, ১০ রাউন্ড গুলি ও ১৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের ঘটনার অভিযোগের মামলার প্রধান আসামী গ্রেফতারকৃত গৃহবধূ রোজিনা বেগম তার তিন বছর বয়সী শিশু তিন দিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। এ মামলায় ওই গৃহবধূর স্বামী আলামিন হোসেনকে ২ নম্বর আসামী করা হয়।
ঘটনাস্থানে গেলে গ্রেফতারকৃত রোজিনার বড় বোন আসমা বেগম, ভাবি মনোয়ারা বেগম, মামা সিদ্দিকুর রহমান, পিতা বারেক মিয়া ও ভাই জুয়েল মিয়াসহ স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ ও দাবি করে জানান, বসতঘরে কোন অস্ত্র-গুলি ও ফেনসিডিল পায়নি। প্রতিপক্ষরা খড়েরগাদায় পিস্তল-গুলি ও ফেনসিডিল রেখে ষড়যন্ত্র করে তাদের ফাসিয়ে দিয়েছে। বুধবার বিকালে বাড়ির উঠানের দক্ষিণপাশের খড়েরগাদার মধ্য থেকে পিস্তল-গুলি ও ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়, যাহা স্থানীয় সবাই দেখেছে কিন্তু সেই অস্ত্র ও মাদক ঘরের সিঁড়িতে সাজিয়েও রাখা হয়েছিলো। কিন্তু সন্ধ্যার পরে ওই অস্ত্র ও মাদক ঘরের ড্রয়ার থেকে উদ্ধারের ঘটনা সাজিয়েছে, এসময় কাউকে ঘরে ডুকতে দেয়নি। এমনকি ঘরের মহিলাসহ অন্য মহিলাদেরকেও মারধর ও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। ষড়যন্ত্র করে তাদের ফাসানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। বিষয়টি তদন্ত করার দাবি করে প্রকৃত দোষীদের বিচার দাবি করেন স্বজনরা।
অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রন আইনের মামলার ১ নম্বর স্বাক্ষী মোস্তফা বেপারী ভোরের পাতাকে বলেন, বরিশাল বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি দল এসে বিকেলে খড়েরগাদার মধ্য থেকে পিস্তল-গুলি ও ফেনসিডিল বের করে ঘরের সিঁড়িতে রাখছে। কিন্তু সন্ধ্যার পর স্বাক্ষীদের বলে ঘরের মধ্যে তল্লাশি করা হবে আপনারা সাথে আসুন, এরপর ওই অস্ত্র ও ফেনসিডিল ঘরের ড্রয়ার থেকে বের করা হয়। কিন্তু খড়েরগাদা থেকে বের করা অস্ত্র ও ফেনসিডিল কিভাবে ঘরের ড্রয়ারে গেল তা জানি না।
মামলার ৩ নং স্বাক্ষী রাব্বি হাওলাদার ভোরের পাতাকে বলেন, বিকালে তাকে দোকান থেকে ডেকে নিয়ে আসেন কয়েকজন গোয়েন্দারা বলে অস্ত্র ও ফেনসিডিল পাওয়া গেছে একটু বাড়িতে আসেন। স্বাক্ষী এসে দেখেন সিঁড়িতে অস্ত্র ও ফেনসিডিল রাখা। কিন্তু সন্ধ্যায় স্বাক্ষীদের বলে আপনারা একটু বাসায় আসেন চেক করবো। এই বলে ঘরের ড্রয়ার থেকে অস্ত্র বের করে, তখন স্বাক্ষী রাব্বি বলেন তাহলে তো অস্ত্র হবে দুইটা। সিঁড়ির একটা আর ড্রয়ারের মধ্যের একটা কিন্তু অস্ত্র দেখি একটাই। সেই সিঁড়িরটাই ড্রয়ার থেকে বের করা হয়েছে। তখন তিনি স্বাক্ষী দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে গোয়েন্দারা বলে আদালতে স্বাক্ষী দিতে যাওয়ার খরচ দিবো আর ফোন দিলে চলে আসবেন। ওই ঘরে বা বাড়িতে অস্ত্র বা ফেনসিডিল থাকার কথা নয়, এটা বিশ্বাস হয় না বলেও জানান রাব্বিা।
উল্লেখ্য, কানুদাশকাঠি থেকে বরিশাল বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি দল গত ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার ঘরের ড্রয়ার থেকে দেশীয় আগ্নেঅস্ত্র, ১০ রাউন্ডগুলি ও ১৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে দাবি করে শিশু জামিলার মা রোজিনাকে প্রধান আসামী এবং তার বাবা আলামিন হোসেনকে ২য় নম্বর আসামী করে বরিশাল বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখার উপ পরিদর্শন ইশতিয়াক হোসেন বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার সোয়া ১০ টার দিকে রাজাপুর থানায় অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রন আইনে পৃথক দুটি মামলা ( নং ২ ও ৩) দায়ের করেন। মামলায় বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে মা ও তার সাথে শিশু কন্যা কারাগারে রয়েছে।
বাদী এসআই ইশতিয়াক হোসেনের নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেনি। তবে আগের দিন তিনি বলেছিলেন, আলামিন যশোরের বেনাপোল থেকে মাদক এনে বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি করেন। তিনি এলাকায় বড় মাপের মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত। স্বামীর অনুপস্থিতিতে রোজিনা এ কারবার চালান। ক্রেতা সেজে তার কাছ থেকে আমরা মাদক নিয়েছি। কারও প্রভাবে নয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়েছে।
জানতে চাইলে অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজাপুর থানার এসআই মামুন হোসেন ভোরের পাতাকে বলেন, মামলাটি তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে। মামলার দুই নম্বর আসামী আলামিনকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের উপ পরিচালকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পরিচালক পরিতোষ কুমার কুন্ডু ভোরের পাতাকে বলেন, এ বিষয়ে রাজাপুর থানায় মামলা হয়েছে, তদন্ত হবে। সে অনুযায়ী আদালতে প্রমাণ করবে, বিচার হবে। আসামীরা নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণের জন্য অনেক কথা বলতে পারে।