মন্ত্রিপরিষদে ‘সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ আইনের খসড়া অনুমোদন, জেলা নাগরিক কমিটির কৃতজ্ঞতা
গত ৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদের সভায় ‘সাতক্ষীরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ আইনের খসড়া অনুমোদন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সংগঠনের এক জরুরি সভা আহবায়ক এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দ্রুত সময়ের মধ্যে খসড়া আইনটি চুড়ান্ত অনুমোদন এবং আগামী শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য সাতক্ষীরার রাজনীতিবীদ, জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণের আহবান জানানো হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, সাবেক অধ্যক্ষ বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর আব্দুল ওয়াহেদ, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. দিলারা বেগম, সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা কিশোরী মোহন সরকার, প্রবীন আইনজীবী এড. আজাহারুল ইসলাম, অধ্যাপক পবীত্র মোহন দাস, অধ্যক্ষ মোবাচ্ছেরুল হক জ্যোতি, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুণ অর রশিদ, জেলা সিপিবির সভাপতি আবুল হোসেন, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিশ আলী, সদর উপজেলা জাতীয় পাটির সভাপতি আনোয়ার জাহিদ তপন, বাসদ নেতা নিত্যানন্দ সরকার, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুসফিকুর রহমান মিল্টন, উদীচীর সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান, জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জোৎন্সা দত্ত, সাবেক পৌর কাউন্সিলর ফরিদা আক্তার বিউটি, উন্নয়ন কর্মী এড. মুনির উদ্দীন, উন্নয়ন কর্মী জিএম মনিরুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক মুনসুর রহমান, সাংবাদকর্মী জহুরুল কবির, জেলা ভূমিহীন সমিতির সভাপতি আব্দুস সামাদ, শ্রমিক নেতা শেখ রবিউল ইসলাম রবি, সাবেক ছাত্র নেতা আবু তালেব মোল্লা, উন্নয়নকর্মী তমালিকা মল্লিক, জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবলু এবং সদস্য সচিব এড. আবুল কালাম আজাদ।
সভায় সাতক্ষীরা পৌর এলাকার বিরাজমান বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, কোনরকম গণশুণানী ছাড়াই গত ১ জুন থেকে সাতক্ষীরা পৌরসভা পানির বিল চারগুণ বৃদ্ধি করে। জনগনের আন্দোলনের মুখে প্রথম দফায় বিল কিছুটা কমিয়ে তিনগুণ পুননির্ধারণ করে পরে আবার সেটি স্থগিত করা হয়। কয়েকদিন পরে পুনরায় দ্বিগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু গত জুন মাসের পরে বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকদের এক এক জনকে এক এক ধরনের টাকার অংঙ্ক বসিয়ে বিল পাঠানো হচ্ছে। নাগরিক নেতৃবৃন্দ বলেন, যেসব গ্রাহক বছরের পর বছর পানি পায় না, তাদের পানি দেওয়ার ব্যবস্থা না করেই পূর্বের মত বিল পাঠানো হচ্ছে। অনিয়ম অব্যবস্থাপনার নিরসন হয়নি। ইতোমধ্যে পৌরকরসহ বিভিন্ন ট্যাক্স ও ফিস প্রতিনিয়ত বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু নাগরিক সেবার মানের কোন বালাই নেই সাতক্ষীরা পৌরসভায়।
নাগরিক নেতৃবৃন্দ বলেন, সাতক্ষীরা পৌরএলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন নতুন এলাকায় বাড়ি-ঘর, অফিস-আদালত, দোকানপাট-বিপনী বিতানসহ বড় বড় অট্টালিকা গড়ে উঠলেও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে দ্রুত সাতক্ষীরা বস্তি ঘিঞ্জি বিপজ্জনক শহরে পরিণত হচ্ছে। গত ৫০ বছরে পৌরসভার সীমানার মধ্যে অবস্থিত কাটিয়া, রথখোলা, রাজারবাগান, পুরাতন সাতক্ষীরা, মুন্সিপাড়া, সুলতানপুর, বাটকেখালী, পারকুখরালী, বাকাল, ইটাগাছা, কামানগর, পলাপপোল, রসুলপুরের বিল এলাকায় শহরের প্রসার ঘটেছে। কিন্তু এসব এলাকাতে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়নি রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে অগ্নিকান্ডসহ জরুরি রোগী পরিবহনেরও কোন সুযোগ নেই বিভিন্ন এলাকায়।
বক্তারা বলেন, পৌরএলাকার পানি নিষ্কাশনের পথগুলো ভেড়িবাঁধ দিয়ে বন্ধ করে মাছের ঘের করা হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে এসব মাছের ঘেরের ভেড়িবাঁধের কারনে এলাকার পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে বহু মানুষের বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে। নেরতৃবৃন্দ আরো বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন বাড়ি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে রাস্তার সীমানা বরাবর। পরবর্তীতে সামনের অংশে দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে সিড়ি এবং উপরের ছাদ সম্প্রসারণ করে রাস্তার উপর তুলে দেওয়া হচ্ছে। গত ৫০ বছরে পৌর এালাকায় চলাচলকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে শতগুণের বেশি। কিন্তু পৌর এলাকার সড়কগুলো প্রসস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে শহরের অধিকাংশ সড়কে সীমাহীন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষের কর্মঘন্টার একটা বড় সময় এখন সড়কে অপচয় হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত একবারও মেরামত করা হয়নি এমন সড়কের সংখ্যা একেবারে কম নয়। প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে মাঝে মধ্যে সংস্কার কাজ শুরু করা হলেও নি¤œমানের কারনে কাজ শেষ হওয়া আগেই তা নষ্ট হয়ে যায়।
নেতৃবৃন্দ বলেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পৌর আইন সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে তাদেরকে এসব কাজে নিবৃত করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। পৌরকতৃপক্ষের সাথে এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে নাগরিক নেতৃবৃন্দ আলোচনা করলেও এগুলো তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে বলে তারা মনেই করেন না। মানুষকে সচেতন করা এবং প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করার ক্ষমতা থাকলেও পৌরকতৃপক্ষের নিলিপ্ততা আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি শহর গড়ে তোলা শুধু বর্তমান নয় ভবিষ্যত সম্ভাবনাও নষ্ট করে দিচ্ছে। আগে ছিল এখন নেই এমন অনেক কিছুই এই পৌরসভাকে পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। নিউমার্কেট, ইটাগাছা হাট, সুলতানপুর বড়বাজারের চাল ও তরকারিপট্টি, পৌর অডিটরিয়াম, পৌরসভা পাবলিক মিলনায়তন, শিশু পার্ক, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ময়লা আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন, মোড়ে মোড়ে পানির ট্যাপ আগে থাকলেও এখন আর নেই। একমাত্র পার্কটিতে বিভিন্ন সময়ে ছোট বড় কমপক্ষে ১০টি অবকাঠামো গড়ে তুলে সেখানে অবসর বিনোদনের পরিবেশ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তার প্রবেশ পথে নির্মাণ করা হয়েছে ডাস্টবিনসহ প্রস্রাবখানা। সভার সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির ২১ দফার পাশাপাশি পৌরসভার এধরনের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে তা সমাধানের জন্য একটি দাবীনামা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ জেলা নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ, ভাষাসৈনিক এড. আব্দুর রহিমের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।