ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা) সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: আব্দুল হাই। এ আসন থেকে তিনি পর পর চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। যদিও তার বিরুদ্ধে দলে পকেট কমিটি দ্বারা একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দলকে সাংগঠনিকভাবে দূর্বল করার অভিযোগ রয়েছে।
আব্দুল হাই নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা নিজ দলীয় কর্মীদের মামলা-হামলা, হুমকি ও খুন-গুমের অভিযোগে তৃণমূলের নেতাকর্মীরদের মাঝে ক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে। অভিযোগ আছে ক্ষমতার কয়েকবছরে নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরক্ষভাবে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য বাগিয়ে নিয়েছেন দলের একাধিক পদ।
বিএনপির সাথে আতাত করে উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি জাহিদুন্নবী জাহিদকে বাদ দিয়ে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওহাবকে জরিপ বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের সভাপতি পদে মনোনয়ন দিতে একটি ডিও লেটার দিয়েছিলেন তিনি। তার পরোক্ষ মদদে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি মন্দিরের জমি দখল করে চারতলা বাণিজ্যিক ভবন গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও আব্দুল হাইয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিশ্বাস এবং তার সন্তান উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিনার বিশ্বাসের এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার অভিযোগ রয়েছে। পিতা-পুত্র মিলে চাঁদাবাজী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিমা ভাঙচুরসহ অসংখ্য সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম মেম্বার অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের কন্যা পারভীন জামান কল্পনা। তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। কল্পনা ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ফরিদুর রহমান ফরিদকে বিয়ে করে ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিএনপির সক্রিয় রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগ বিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। কথিত আছে কল্পনার অত্যাচারে তারই বড়বোন পুরান ঢাকার কে.এল.জুবিলি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে চাকুরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। কল্পনার বিরুদ্ধে এলাকায় তদবিরবাজী ও অসংখ্য মানুষের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া ঝিনাইদহ-১(শৈলকূপা) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম মেম্বার অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের পুত্র ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পারভেজ জামান। তিনি জিয়ার শাসনামলে নির্যাতনের শিকার হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বৃত্তি নিয়ে সেখান থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করেন, পরে নিউজিল্যান্ড থেকে পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং এ এমএসসি করেন।
বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে আরও যারা মনোনয়ন চাইবেন তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কালবেলা মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিল্পপতি নজরুল ইসলাম দুলাল, শৈলকূপা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়েব আলী জোয়ার্দার ও ঝিনাইদহ কলেজের অধ্যক্ষ বাদশা আলম।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ। সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াহাব, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ওসমান আলী বিশ্বাস।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির শৈলকূপা উপজেলা শাখার সভাপতি মনিকা আলম ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ফুল।
বিগত নির্বাচনগুলোর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঝিনাইদহ-১(শৈলকূপা) আসনটি এক সময় বিএনপির একক নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল হাই গত ১৯ বছর একক ভাবে এই আসনটি শাসন করে যাচ্ছেন। গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। দীর্ঘ সময় সংসদ সদস্য থাকার ফলে তার বিরুদ্ধে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ,নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা দলীয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের হুমকি হামলা-মামলাসহ নানান অভিযোগে তার প্রতি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে।
সাংগঠনিক দিক থেকে আওয়ামী লীগের অবস্থা কিছুটা সুসংহত হলেও বিএনপির অবস্থা সুসংগঠিত নয়। তবে প্রচুর ভোট রয়েছে তাদের। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতা কাগজে কলমে। দৃশ্যত জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক তৎপরতা দেখা না গেলেও গোপনে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না ধর্মভিত্তিক এই রাজনৈতিক দলটি। তাদের ভোট বিএনপির বাক্সেই যাবে। অপর ধর্মভিত্তিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনকে সামনে নিয়ে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে ঝিনাইদহ-১(শৈলকূপা) আসনে বিএনপি চাইবে তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চাইবে ধারাবাহিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে। আওয়ামী লীগ যদি তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায় তাহলে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে তৃণমূলের মতামতের কথা মাথায় রেখে বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল হাই'র পরিবর্তে নতুন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির জনদরদী ও ত্যাগী কোনো নেতাকে মনোনয়ন দিতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও স্থানীয় সচেতন মহলের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থী বাছাইয়ে আসনটিতে সত্তর হাজার সংখ্যালঘু ভোটারের কথা মাথায় রাখতে হবে।
সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম মেম্বার অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের পুত্র ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মানুষ পারভেজ জামানের কথায় বলছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।