ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে এবার সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশ ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে। এ সংর্ঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই পুলিশ সদস্য ও আট ইন্টার্ন চিকিৎসক। এ ঘটনায় হাসপাতাল থেকে সড়িয়ে নেয়া হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি।
সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটেছ বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালের পুরনো ভবনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা যায় বুধবার রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার পুলিশ লাইনে কর্মরত এএসআই মাহমুদুল হাসান তার স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিনকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের পুরনো ভবনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। ভর্তি করার কিছুক্ষন পর তার স্ত্রীকে দেখতে দায়িত্বরত চিকিৎসককে বেশ কয়েকবার ডাকেন। তখন ওই চিকিৎসক অন্য রোগী দেখে পরে আসবেন বলে জানান।
এতে এএসআই মাহমুদুল হাসান ক্ষিপ্ত হয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে উচ্চ স্বরে কথা বলেন। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে অসধাচরণ ও কথাকাটাকাটি শুরু হয়। এসময় হাসপাতালে কর্মরত আনসার সদস্যরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
এমন খবর পেয়ে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে আসেন। ওয়াডের্র অবস্থার অবনতি দেখে তিনি চিকিৎসা নিতে আসা এএসআই মাহমুদুল হাসানকে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যান।
পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে ওই এ এস আই বিচার দাবী করেন। এসময় আবারও দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে আটজন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও দুই পুলিশ আহত হন। এদের মধ্যে ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. শামীম রেজা ও ডা. সাদিককে গুরুতর আহত অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
এদিকে এ ঘটনার পর রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে ছুটে আসেন ময়মনসিংহের জেলা পুলিশ সুপার মাসুম আহমেদ ভুঁঞা ও ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু।
এসময় পুলিশ মাসুম আহমেদ ভুঁঞা ঘটনার সঙ্গে জড়িত হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম ও এক পুলিশ সদস্য আরিফকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শাহ কামাল আকন্দ জানান, এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন পুলিশ সুপার। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনদিনের কর্মবিরতি ঘোষণা করে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার রাত ১০টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ইনটার্ন চিকিৎসকের ওপর রোগীর স্বজন এবং পুলিশ ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য হামলা করেন। এর প্রতিবাদে আগামী তিন কার্যদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।এতে আরও বলা হয়, উল্লেক্ষিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটির সুষ্ঠু সমাধানে ব্যর্থ হলে পরে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বেশ কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন গত ২ আড়াই বছর ধরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষসহ সাংবাদিকদের সাথেও হাসপাতালে কমর্রত কর্মকর্তা,কর্মচারি, চিকিৎসক, স্টাফসহ আনসারদের এমন ঘটনা ঘটেছে। এই হাসপাতালে ময়মনসিংহ বিভাগসহ আশ পাশের জেলা থেকেও অনেক রোগী আসেন চিকিৎসা সেবা নিতে। কয়েকদিন পর পর এভাবে কর্মবিরতির ঘটনা ঘটলে রোগীরা কোথায় যাবে। সাম্প্রতিক দেশের বিভিন্ন এলাকায় চিকিৎসকদের কর্মবিরতির খবর পাওয়া যায়। এমন খবর সত্যিই দুঃখজনক।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস বলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারনে সাময়িক সমস্যা হলেও হাসপাতালের পোস্টেড চিকিৎসকরা সেবা অব্যাহত রেখেছেন।