যমুনা নদীতে পানি কমতে শুরু করায় সিরাজগঞ্জের ৫টি উপজেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙ্গন। ভাঙ্গনের তীব্রতা এত বেশি যে সাজানো গোছানো সংসারের জিনিসপত্রসহ ঘর-বাড়ি সরিয়ে নেয়ার সময়টুকু পাচ্ছে না এলাকাবাসী। এতে সহায় সম্বর হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
ইতিমধ্যে গত এক সপ্তাহের মধ্যে জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টানিয়ে অতিকষ্টে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
বৃহস্পতিবার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের মধ্যে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের হাটপাঁচিল ও জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের ২০টি বাড়িঘর, কাজিপুর উপজেলার তেকানি ইউনিয়নের তেকানি গ্রাম ও নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়নের ডিগ্রিদরতা গ্রামের ১২০টি বাড়িঘর ও ডিগ্রিদরতা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি টিনের ঘর, চৌহালি উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ভূতেরমোড় ও চরসলিমাবাদ গ্রামের ৫০টি বাড়ি-ঘর এবং বেলকুচি উপজেলার বড়ধূল ইউনিয়নের ক্ষিদ্রচাপড়ী গ্রামের ১০টি বাড়িঘর যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া শাহজাদপুর উপজেলার অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর, চৌহালি উপজেলার শতাধিক বাড়ি-ঘর ও ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কাজিপুর উপজেলার দুই শতাধিক বাড়ি ও ডিগ্রিদরতা উচ্চ বিদ্যালয় ভাঙন আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় এসব বাড়ি-ঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ নিয়ে আতঙ্কে দিন পার করছেন নদী পাড়ের মানুষেরা।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, চৌহালীর খাষপুখুরিয়া থেকে চরসলিমাবাদ পর্যন্ত নদী তীর সংরক্ষণের জন্য প্রায় ৪৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন হয়েছে। চলতি বছরের জুন মাসে পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এ প্রকল্পের উদ্বোধনও করেন। তবে উদ্বোধনের তিন মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ভাঙন কবলিতদের অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিতে নতুন করে আমরা গৃহহীন হয়েছি। যখন ভাঙন তীব্র হয় অল্প কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে চলে যায় আর খবর থাকে না। সময় মতো কাজ শুরু করলে নতুন করে শত শত ঘর-বাড়ি আর বিলীন হতো না।
ক্ষতিগ্রস্ত আজিদা বেগম, আরশাদ মিয়া ও নূরু জাজামান মন্ডল বলেন, যমুনায় বাড়ি-ঘর বিলিন হয়ে যাওয়ায় এবং অন্যত্র মাথা গোজার ঠাই না পেয়ে ভাঙ্গণ কবলিত এলাকায় পলিথিন দিয়ে ঝুপড়ি তুলে পরিবার পরিজন নিয়ে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে বসবাস করছি। এখনও পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন আমাদের খোজ খবর নেয়নি। কোনোরূপ ত্রাণ সহায়তা দেয়নি। তারা বলেন, গত ৩দিনে এ গ্রামে অন্তত ২৫টি বাড়ি-ঘর যমুনায় বিলিন হয়ে গেছে।
চৌহালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তিন বছর আগে পৈত্রিক ভিটেবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়। নদী আবারও বর্তমান বাড়ির কাছে চলে এসেছে। এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বাঘুটিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম মোল্লা বলেন, দেওয়ানগঞ্জ, চরসলিমাবাদ ভূতের মোড়ের ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে৷ জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুল্লুক চান জানান, তার ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম ও আরকান্দি গ্রামের অর্ধশত বাড়ি-ঘর এখনও বন্যার পানিতে ডুবে আছে। এসব বাড়িঘরের মানুষ চৌকি উঁচু করে বসবাস করছে। বন্যায় ডুবে যাওয়া বাড়িঘরের গবাদিপশু নিয়ে কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছে। এ ছাড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ নিচু গ্রাম ও রাস্তাঘাট এখনও বন্যার পানিতে ডুবে আছে।
কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন বলেন, বন্যার পানি কমতে থাকায় গত ৫ দিনে উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের হাটপাচিল ও জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের ২০টি বাড়িঘর যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এসব মানুষ যাওয়ার জায়গা না পেয়ে ভাঙনকবলিত এলাকায় পলিথিন টানিয়ে ও ঝুপড়ি ঘর তুলে বাস করছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বন্যার পানি কমতে থাকায় চৌহালি, শাহজাদপুর, বেলকুচি ও কাজিপুর উপজেলার ভাঙনকবলিত এলাকায় বস্তা ফেলার কাজ চলছে। তবে, চৌহালীতে দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙন রয়েছে। বন্যার পানি বাড়ার কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি, পানি কমে গেলে অক্টোবরে কাজ শুরু করা হবে। তখন আর এ সমস্যা থাকবে না।