সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ, তাঁর ছেলে, ভাই ও প্রয়াত বাবার কাছে প্রায় ৯ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল পাওনা নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেডের। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত এসব বকেয়া জমেছে। মাসের পর মাস বিল পরিশোধ না করা হলেও পাওনা আদায়ে উদ্যোগী হচ্ছে না নেসকো।
নেসকো থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নামে একটি সংযোগ রয়েছে। যার ডিজিটাল কনজুমার নম্বর ২৮০০৪৮৯৪; মিটার নম্বর ৫১৫৬২৫১৩। এ মিটারে প্রায় চার বছরে ৬১ হাজার ৩৪৪ টাকা বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে।
এখনও বকেয়া রয়েছে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত গড়ে প্রতিমাসে সাড়ে ৯ হাজার টাকার বিল দেখানো হলেও জুন ও জুলাই মাসে শূন্য বিল দেখানো হয়েছে।
২০২২ সালের মার্চ মাসে ১৭ হাজার ২৩৬ টাকা বিল দেখানো হলেও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে শূন্য বিল দেখানো হয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাসে বিল দেখানো হয়েছে ৮০৪ টাকা এবং মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিমাসে বিল দেখানো হয়েছে ১৮০ টাকা।
মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নামে আরও একটি আবাসিক সংযোগ রয়েছে। সেখানেও একই অবস্থা। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে ৩২ টাকা। এছাড়া কোনো মাসে ৭২ টাকা আবার কোনো মাসে ৫২ টাকা, ৬৫ টাকা, ১১১ টাকা বিল দেখানো হয়েছে। সর্বোচ্চ একটি বিল ২৪০৮ টাকা দেখানো হয়েছে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে। এ সংযোগেও গত প্রায় চার বছরে বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে ১১ হাজার ৬২০ টাকা, যা এখনো বকেয়া রয়েছে।
মন্ত্রীর একমাত্র ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ একজন কলেজ শিক্ষক ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি নেসকোর একজন আবাসিক গ্রাহক। তার বাড়িতে ব্যবহৃত মাসিক বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে ৭২ টাকা, ১১১ টাকা, ১৫১ টাকা, ১৮৯ টাকা, ২২৯ টাকা ও ৫১২ টাকা। শুধু চলতি বছর জুলাই মাসে সর্বোচ্চ বিল ১৩,৫৬১ টাকা প্রস্তুত করা হয়েছে। গেল প্রায় চার বছরে বিল দেখানো হয়েছে ৭৯ হাজার ৯৯৫ টাকা, যা এখনো বকেয়া রয়েছে।
মন্ত্রীর ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুর একটি বাণিজ্যিক সংযোগে গেল প্রায় চার বছরে বিল বকেয়া রয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার ১১৩ টাকা। তার নামে একটি সেচ পাম্পের সংযোগও রয়েছে। গেল চার বছর ধরে বিল বকেয়া রয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১১ টাকা।
তার বাবা প্রয়াত এমপি করিম উদ্দিন আহমেদের নামে একটি আবাসিক সংযোগ রয়েছে। এ সংযোগটিও ব্যবহার করছেন তিনি। এ সংযোগে মাসিক বিল দেখানো হয়েছে ৬৩ টাকা, ১৭২ টাকা, ২৯৪ টাকা, ২৮০ টাকা। সর্বোচ্চ বিল ৪৯৬ টাকা দেখানো হয়েছে ২০২২ সালের আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে। গেল চার বছরে বিল দেখানো হয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৭ টাকা। এখনও বকেয়া রয়েছে এসব বিল।
মন্ত্রীর ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে বলেন, আমার নামে কোনো মিটার আছে কি না তা আমি জানি না। তবে পরিবারের বকেয়া থাকা বিদ্যুৎ বিল ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে।
রংপুর নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, অনেক গ্রাহকের বিল বকেয়া রয়েছে। বকেয়া বিল আদায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যৎ বিল প্রস্তুত করতে কোনো গাফিলতি করা হয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।