চলতি ২৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিনের চাকরি শেষ হচ্ছে। তার আগেই ভুয়া জন্ম জালিয়াতি নিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন তিনি। এদিকে মোহাম্মদ মহসিনের বায়োডাটার চার তথ্য চেয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর মধ্যে মাধ্যমিকের স্কুল সেকেন্ডারী সার্টিফিকেট-এস.এস.সি সাটিফিকেটের সত্যায়িত ছায়ালিপি,এলজিইডিতে প্রথম যোগদানের এলপিসির সত্যায়িত কপি, এলজিইডিতে যোগদানের পর প্রথম জ্যেষ্ঠতা তালিকার কপি এবং এলজিইডির প্রকৌশলীদের খসড়ায় সিনিয়রিটির তালিকা গত ২০২১ সালের কপি চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া এলজিইডি’র চলমান প্রকল্প আইইউজিআইপি, কোভিড ১৯ রেসপন্স, সুপার ব্রীজ, জলবায়ু সহনশীল গ্রামীণ অবকাঠামো প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি চলমান প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি না থাকা ও অনিয়ম দুর্নীতি ও অযোগ্যদের নিয়োগ এবং কাজে অগ্রগতি না থাকার ঘটনায় এডিবিও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। অপরদিকে প্রধান প্রকৌশলী শেখ মো. মহাসিনের চাকুরীর মেয়াদের শেষ সময় নিয়োগ ও বদলী বানিজ্যে তদন্ত করার নিদেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আব্দুর রহমানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশল সেখ মোহাম্মদ মহাসিন এর জম্ম তারিখের জটিলতা নিরশনের জন্য নি¤œবর্ণিত তথ্যাদি জরুরী ভিত্তিতে প্রেরণের জন্য নিদেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর যে সব তথ্য চাওয়া হয়েছে, সে গুলো হচ্ছে- সেখ মোহাম্মদ মহসিনের এস.এস.সি সাটিফিকেটের সত্যায়িত ছাড়ালিপি, এলজিইডিতে প্রথম গোগদানের এলপিসির সত্যায়িত কপি, এলজিইডিতে যোগদানের পর প্রথম জ্যেষ্ঠতা তালিকার কপি এবং এলজিইডির প্রকৌশলীদের খসড়া জ্যেষ্ঠতার তালিকা ২০২১ সালের কপি।
তিনি ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩ সালে জম্মগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম জেলায় এবং ২২ জুন ১৯৮৮ সালে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪ সালে জম্ম সনদ দেখিয়ে আরো এক বছর চাকরিতে থাকার পায়তারা করেছেন। ইতো মধ্যে বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগ জানতে পেরেছে এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন বলেন, আসলে মন্ত্রণালয়ে চিঠি এখনো আমি পাইনি। আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য নয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো অভিযোগে বলা হয়, অধিদপ্তরের এসব প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক পদে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ না দিয়ে জুনিয়র প্রকৌশলীদের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেখানে প্রধান প্রকৌশলী শেখ মো. মহাসিন সুপারিশ করেছেন। এসব নিয়োগ দিয়ে মোটার অংকের টাকা নিয়েছেন তিনি। সুপার ব্রিজ প্রকল্পে সেলিম মিয়াকে প্রকল্প পরিচালক পদে নিয়োগ প্রদান করে পরে বিশ^ব্যাংকের আপত্তিতে তিন মাস পর প্র্যতাহার করেছেন এই প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন। এই প্রকল্পের মেয়াদ ৭ বছরে সম্পূর্ণ হয়েছে অথচ কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ। এই প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি প্রমাণিত হয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এই প্রকল্পের ৯০০ কোটি টাকা গত অর্থ বছরে ফেরত নিয়েছে। অপর দিকে কোভিড- ১৯ রেসপন্স প্রকল্পের পিডি নিয়োগ করা হয়, বান্দরবানে কর্মরত তৎকালিন নিবার্হী প্রকৌশলী নাজমুল শাহাদাত মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি গত দু বছরে হয়েছে মাত্র দুই শতাংশ। আড়াই হাজার কোটি টাকার বিশ্ব ব্যাংকের প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল দুই বছর। এই প্রকল্প এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এ ছাড়া টাকার বিনিময়ে এডিবি রক্ষণে বাস্তবায়িত আই ইউ জি আই পি প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বারেককে। সেখানে অভিজ্ঞ এবং জ্যেষ্ঠতাও মানা হয়নি। প্রকল্পের কাজে অনিয়ম অর্থ লোপাটের মতো ঘটনা ঘটেছে। প্রধান প্রকৌশলী শেখ মো. মহামিনের চাকরির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে এসে অধিদপ্তরে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের ভবন বানিয়েছেন। এ ছাড়া জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদায়নের ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য করেন প্রধান প্রকৌশলী ও তার নিয়োজিত সহকারীদের।
তার বিরুদ্ধে, স্বজনপ্রীতি দূর্নীতি স্বেচ্ছচারিতার অভিযোগও আছে। প্রধান প্রকৌশলীসহ তার সেন্ডিকেটের লোকজন দিয়ে এলজিইডিকে ২০ বছর পিছনে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ। সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য এলজিইডির বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প/মাস্টাররেলে নিয়জিত প্রায় ৩৮৩২ জন কর্মচারী দীর্ঘ ২৫/৩০ চাকুরী করা কর্মচারীদের চাকুরী নিয়মিত করনের আদেশ সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করে মোটা অংকের ঘুষ-বানিজ্য করার জন্য নতুন ভাবে সার্কুলার দিয়ে কর্মচারী নিয়োগ করছে। এসব অপকর্মের সহযোগী হিসেবে প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিনকে সহযোগিতা করছেন তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমান (প্রশাসন) (শৃঙ্খলা ও তদন্ত শাখা), মো, শরিফ উদ্দিন (শৃঙ্খলা ও তদন্ত শাখা) তার এজেন্ট বাস্তবায়ন করছেন। এমনকি তারা প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের বিভিন্ন লোকের দোহাই দিয়ে অপকর্ম করে আসছেন তারা। অতিঃ প্রধান প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় পূর্বের আন্দোলনকে স্থাগিত করেন এই দূর্নীতিবাজ সেখ মোহাম্মদ মহসিন। প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন নিজেকে একজন সৎ বলে মনে করলেও আসলেই তিনি কি সৎ, প্রশ্ন উঠেছে সরকারী উন্নয়ন মূলক কাজের কাজ না করে তিনি নিজের আখের গুছানোর কাজেই ব্যস্ত আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করার পরেও তিনি অতিরিক্ত আরো ৩টি গাড়ী ব্যবহার করেন নিজ পরিবারের জন্য গাড়ীগুলো ব্যবহার করছেন, গাড়ি গুলো হচ্ছে, ঢাকা- মেট্রো-ঘ-২১-০২৮১, ঢাকা মেট্রো-ঘ-২১-১৪০৯, ঢাকা মেট্রো-গ ৩৯-৬৩১২ এই ৩টি গাড়ী তিনি ১টি স্ত্রী লুবনা আলম চৌধুরী,১ টি কন্যা ফাইরুজ বিনতে মহসিন, ১টি কন্যা ফাররিন বিনতে মহসিন, ব্যবহার করেন। যার প্রতিদিনের তেল, ড্রাইভার সহ যাবতীয় খরচ এলজিইডি থেকে বহন করা হচ্ছে। তিনি প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার পরে এখনো ১টিও প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেননি, যে ২/১ টি প্রকল্প পাশ হয়েছে তাও আবার আগের প্রকল্পগুলো। তিনি এমন একজন প্রধান প্রকৌশলী যিনি তার অধিনে কর্মরতদের কখনোই বসতেও বলেন না বলে জানান অনেক কর্মকর্তা। কোন কর্মকর্তা তার রুমেও যান না। অফিসিয়ালি মিটিং বাদ দিয়ে তিনি ভার্চুয়াল মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এছাড়াও বেশ কিছু পদোন্নতি দিয়েছেন পিডি হিসেবে। অথচ ৯৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের দিয়ে তিনি নিয়ম বহির্ভুতভাবে নিজ এলাকার বেশ কিছু মসজিদ ও কবরস্থান নিয়েছেন, সীতাকুন্ডো। যা ডিপিপি বহির্ভূত। তিনি ক্ষমতার মদদে প্রথমেই আউট সোর্সিং (এলকেএস্্এস) এর নিয়োগ বন্ধ করেন, যা পূর্বের কোন প্রধান প্রকৌশলী করেননি। তিনি নিজে এবং তার একটি সেন্ডিকিটের কাছে সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজ পিছিয়ে দিয়েছেন বলে বেশীর ভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ।