বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকার ওয়াশিংটনের কাছে পুনর্ব্যক্ত করেছে ঢাকা। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত দু’দেশের নবম নিরাপত্তা সংলাপে মার্কিন প্রশাসনকে নির্বাচন ইস্যুতে আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বহুপাক্ষিক সব ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় জানিয়ে সচিব বলেন, সংলাপের পর তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিরা রেজনিক বলেছেন, সংলাপের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি এ ধরনের নিয়মিত বৈঠকের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। যাতে আমাদের মধ্যে মতবিরোধ সত্ত্বেও কোনো ধরনের গ্যাপ (দূরত্ব) তৈরি না হয়।
সকাল ১০টা থেকে প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যাপী এই সংলাপে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন সফররত মার্কিন রাজনৈতিক ও সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেজনিক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম। এই সংলাপের পর মিরা রেজনিক একই ভেন্যুতে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সচিব মোমেন।
নবম নিরাপত্তা সংলাপ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ২০২২ সালের এপ্রিলে দু’দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপের ফলো আপ হয়েছে এবার। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ পুলিশ, বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেন। সংলাপে প্রতিরক্ষা বিষয়ক নিরাপত্তা ইস্যুগুলো বাদে সাইবার নিরাপত্তা, পরিবেশ, জ্বালানি নিরাপত্তা, ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু দেখতে চায়। আমরা বলেছি, সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বদ্ধ পরিকর। প্রধানমন্ত্রীও এ কথা অনেকবার বলেছেন। নির্বাচন কমিশন বাকি কাজগুলো করছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা লাগলে যুক্তরাষ্ট্র করবে বলেছেন মিরা রেজনিক। আমরা আরও জানিয়েছি, নির্বাচনের যে ধরনের প্রস্তুতি হওয়া দরকার হচ্ছে দেখছি। রাজনৈতিক দল কে কি কীভাবে সেটা বলা যাচ্ছে না।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন জানিয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধি। তারা জবাবদিহিতা ও দায়মুক্তির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে সরকার সবসময় সচেষ্ট রয়েছে। ছোটখাটো যেসব ভুল ছিল তা শুধরে নেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয় এবং বিশ্বকে জানানো হয়। কোনো ধরনের দায়মুক্তি দেওয়া হয় না। জবাবদিহিতার ব্যাপারটা আছে। এসওপি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত সাজা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেনাবাহিনী, পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে মার্কিন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা বলেছি। তারাও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেছেন।
জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিসোমিয়া) ও অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট (আকসা) নিয়ে এ বৈঠকে সরাসরি কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে সচিব বলেন, এ বিষয়গুলো প্রতিরক্ষা সংলাপে আলোচনা হয়েছে। তবে আমরা বলেছি, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি নিয়ে কাজ হচ্ছে। জাপানের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্বের সম্পর্কে উন্নীত হয়েছে। জাপানও তাদের ওডিএ’র আলোকে আমাদের প্রার্থী দেশ করেছে। সামনে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে।
ইন্দো-প্যাসিফিক প্রসঙ্গে তিনি জানান, ইন্দো-প্যাসিফিকে আমাদের সাথে অনেক মিল আছে। আমরা চাই, ফ্রি নেভিগেশন ও বাণিজ্য সম্ভাবনাগুলো পুরো ব্যবহার হয়। তারাও বলেছে, কোন ধরনের আধিপত্য চায় না। এ ছাড়াও মানবাধিকার ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
উল্লেখ্য, মিরা রেজনিক গত সোমবার দু’দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। নিরাপত্তা সংলাপ ছাড়াও তিনি রাজনীতিক, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বুধবার ভোরে তার ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।