প্রকাশ: সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৯:২২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বাড়ির চারপাশোত পানি ঘরে বাইরা কাঁদো। ৮ দিন ধরে পানি বন্দী হয়ে আছি। হাঁস-মুরগি গরু ছাগল নিয়ে খুব কষ্টে আছি। চুলার ভিতরে পানি রান্না করতে পাই না। অন্যের বাড়ি থেকে একবেলা রান্না করে এনে তিনবেলা খাই। কাজ নাই, কাম নাই। খুব কষ্টে আছি হামরা। মেম্বার চেয়ারম্যান তো খোঁজে নেয় না। পানিতে সংসারের কাজ করতে গিয়ে হাতে পায়ে ঘা ধরেছে।নিচু জায়গায় বাড়ি করে খুব কষ্ট করে থাকি। টাকা পয়সাও নাই উঁচু জায়গা জমি কিনে বাড়ি করবো।
এভাবে কথাগুলো বলেছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের রোকেয়া বেগম। শুধু রোকেয়া বেগমই নয় ওই এলাকার একাধিক পরিবারের দূর্ভোগের চিত্র একই।
সরেজমিনে দেখা যায়, রোকেয়া বেগম স্বামী রহিম আলী। স্বামী সন্তানসহ এক ঘরে বসবাস। পাশে হাঁসমুরগি খোয়ারা। ঘরে কাদা,আঙিনায় পানি। দুদিন আগে ওই বাড়িতে ছিল কোমর পানি।পুরুষ মানুষ নৌকা,সাঁতরিংয়ে উঁচু স্থান সড়কে সময় কাটাতে পারলেও বাড়ির শিশু বৃদ্ধ ও নারীরা পড়েছেন বিপদে।ভোগান্তি দূর্ভোগ কাটতে দিনের বেলা বসে আছেন হাঁস-মুরগি থাকা ঘরে।এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ সহযোগিতা নয় সরকারি বা কোন এনজিও যদি ভিটেমাটি উচু করে দেয় খুবই খুশি হতেন বলে জানান তিনি।
হাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা আকিলা বেগম বলেন, বর্ষা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের দুঃখ দুর্দশার শেষ নাই।এসময় বাড়ির কর্তাদের কাজ কাম না থাকায় আমরা খুব কষ্টে জীবন যাপন করি।মাঝে মধ্যে সরকারি সাহায্য সহযোগীতা পাই।সেটা দিয়ে কি আর চলে।গরীব মানুষের দুঃখ বারোমাস।
উপজেলার মাঝের আলগার চরের বাসিন্দা আলেয়া খাতুন বলেন, এক সপ্তাহ থেকে বন্যার পানিতে বসতবাড়ি তলিয়ে আছে। কাঠখড়ি-জ্বালানি যা ছিল সব শেষ, শান্তিমত রান্না করে দুই বেলা খাবো তাঁর উপায় নাই। খড়ির মঙ্গা দেখা দিছে।ঘরে চাল থাকলেও রান্না করি খাওয়ার উপায় নাই।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,জেলায় তিস্তা নদীর পানি ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৩৫ ও ৩৮ সে.মি নিচে রয়েছে।অনান্য নদ নদ নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত বন্যার পূর্বাভাসের তথ্যানুয়ায়ী সপ্তাহে বড় ধরনের কোন বন্যার শঙ্কা নেই।
হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শায়খুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পানিবন্দি হয়ে দূর্ভোগে আছে শতাধিক পরিবার।তাদেকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানির স্রোতে জেলায় ৫টি স্থানে ৭৮০মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৮. ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়ে ৫ হাজার ২৮০টি পরিবার বন্যার কবলে পড়েছে। আমাদের ত্রাণ বিতরনের কাজ চলমান রয়েছে। জেলায় বন্যার্ত মানুষের জন্য ১৮টি স্থায়ী ও ৩৬১টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ২৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুদ আছে। গো- খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ মজুদ রয়েছে।