রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
হারিয়ে গেল পালকি!
মাসুম বিল্লাহ, শালিখা (মাগুরা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: রোববার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৯:৪৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

হুন হুনা হুন হুনরে চার বেহারার পালকি চড়ে যায়রে কন্যা পরের ঘরে' পালকির বেহারাদের এই ছন্দতোলা গানগুলো এখন আর শুনতে পাওয়া না গ্রাম বাংলার মেঠো পথে। হাজার বছরের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পালকিকে এখন আর শালিখার মেঠো পথে চলতেও দেখা যায় না। কালের বিবর্তনে আর্যদের বা বাবুয়ানিদের সাংস্কৃতির স্মৃতি স্মারক পালকি এখন স্থান পেয়েছে  জাদুঘরে ও বইয়ের পাতায়।  

উপজেলার নতুন প্রজন্মের সাথে পালকির পরিচয় নেই বললে তা অতুক্তি হবে না। তারা পালকির কথা বইয়ের পাতায় এবং লোক-কারু জাদুঘরে গিয়ে দেখছে ও শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু পূর্বের দিনে বিয়েরযাত্রায় পালকির ছিল একটি   আলাদা জৌলুস। নব বর-বধূকে পালকিতে চড়িয়ে পায়ে হেটে পালকির পিছু ছুটতো বরযাত্রীরা। পথ দীর্ঘ হলেও পালকির পিছনে হাটা যেন ছিল এক অসীম আনন্দের মুহূর্ত। পালকি শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ পালঙ্ক থেকে যার অর্থ শয্যা বা বিছানা। পালকি মানুষ চালিত চাকাবিহীন একটি বাহন। 

মানুষে মানুষ বহন এ যেন এক অন্যরকম অনূভুতি। সাধারণত একটি বা দুটি লম্বা বাশ বা কাঠের দন্ডে বড় চেয়ার বা খাট ঝুলিয়ে এবং কাঠ, বাশ বা কাপড় দিয়ে  পালকি তৈরী করা হতো। পালকি দেখতে অনেকটা কাঠের বাক্সের মতো। প্রতিটি পালকির দৈর্ঘ্য ছয় ফুট ও প্রস্থ তার অর্ধেক। কাঠামো লম্বা ও দুপাশে বাশের সাহায্য গাঁথা। পালকির উপরে দামি কাপড় মোড়ানো হয়। পালকি বহনকারীদের ডাকা হতো কাহার বস বেহারা নামে।  প্রতিটি পালকি চালাতে চারজন বেহারা বা কাহার প্রয়োজন হতো। বেহারাদের বাড়ি  ছিল ভারতের বিহারে। উপমহাদেশে পালকির প্রচলন কখন হয়েছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। তবে পালকির উৎপত্তির সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও 'বাল্মিকীর রামায়ণে' পালকির কথা উল্লেখ রয়েছে। তাই ধারণা করা হয়, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে পালকির প্রচলন শুরু হয়েছিল। শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই নয় এর বাইরেও  বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পালকির প্রচলন ছিল। 

প্রাচীন রোমে পালকিকে বলা হতো লেটিকা, চীনে জিয়াও,  ভিয়েতনামে কিউ, ইংল্যান্ডে সিডান চেয়ার, স্পেনে লিটারা, ফ্রান্সে পালানকুইন, পর্তুগালে লিটেইরা নামে পালকি পরিচিত ছিল। এমন কি  ব্রিটেনের রাজা ও লেখক অষ্টম হেনরি আমৃত্যু পালকিতে চড়েছেন বলে জানা গেছে।  এক সময় পালকি আমাদের দেশের জাতি ধর্ম বর্ণ ধনী ও গরি সবার কাছে সমান পছন্দনীয় বাহন ছিল তখন আবার সব পরিবারে পালকি ছিলনা বিত্তশালী জমিদার উচ্চ বংশীয় লোকদের প্রত্যেকের বাড়িতে পালকি ছিল। সে সময় পালকি বংশের মর্যাদার প্রতীক হিসেবেও  ব্যবহার হতো। নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকদের বাড়িতে পালকি ছিলনা তাই তাদের জন্য ছিল অন্য ব্যবস্থা তারা বিভিন্ন প্রয়োজনে পালকি ভাড়া করত অর্থ বা কড়ির বিনিময়ে। কিন্তু বিয়ে বা যেকোনো উৎসবে পালকি থাকতেই হতো। পালকি আমাদের দেশে হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য। পালকি নিয়ে লেখা হয়েছে ছড়া গান সহ হাজারো কবিতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত সহ অনেক কবি পালকি নিয়ে লিখেছেন। পালকি চলে পালকি চলে হলে আগুন জলে। বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা তার আশা ভ্রমণ কাহিনী রোহেলা তে তার লেখার মধ্যে এ কথাও পাওয়া যায় যে তিনি পালকি বহনের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন এছাড়াও সমাজের জ্ঞানীগুণীদের বরণ করতে পালকির বিকল্প কেবল পালকিই  ছিল। আমাদের দেশে এমন এক সময় গেছে যখন বিয়ের অনুষ্ঠান পালকি ছাড়া হতোই না। পালকি ছাড়া বিয়ে হলে তখন নিজেদেরকে হতভাগা বলে মনে হতো। 

পালকিকে ঘিরে অনেক লোক তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করত পালকি এখন স্থান পেয়েছে জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য সেদিন আর বেশি দূর নয় যখন নতুন প্রজন্ম লোকশিল্প জাদুঘরে গিয়ে সাজানো গোছানো কৃত্রিম পালকি দেখবে। পালকির সেই ঐতিহ্যময় হাজার বছরের ব্যবহার ক্রমে গ্রাস করেছে যান্ত্রিক সভ্যতার বিদেশি বিভিন্ন রঙ্গের  বাহারি গাড়ি। পালকি বহনের দৃশ্য এখন যেন অনেকটাই স্বপ্ন সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছে ছন্দমাখা পালকি বহনের গান ও। 

শালিখা উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের কমলা বেগম বলেন, ৮ বছর বয়সে বাজানের ভাড়া করা এক পালকিতে স্বামীর বাড়ি এসেছি। আজ ৬০ বছর পরও মনে পড়ে সেই পালকিতে চড়ার কথা। আমি আইছিলাম পালকিতে চড়ে আর মনিগের বাপে আইছিলো পিছে পিছে দৌড়ায়ে। অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন কমলা বেগম। শ্রী ইন্দ্রনীল এসোসিয়েটসের প্রধান সংগঠক শিক্ষক ও গবেষক ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, বর্ণিল 

সময়ের স্মৃতি সংরক্ষণ পূর্বক নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। তাতে করে নতুন প্রজন্ম আমাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারবে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]