প্রকাশ: রোববার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৪:২০ পিএম আপডেট: ০৩.০৯.২০২৩ ৪:২৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশে উপস্থিত হয়ে ফের আলোচনায় ওঠে এসেছেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এমপি। সিলেট বিভাগের রাজনীতিতে তিনি এক পরিচিত নাম।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, ডাকসু’র ভিপি হওয়ার পর থেকেই সিলেট জুড়ে এক নামেই পরিচিতি পেয়েছিলেন। এরপর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পর গোটা বিভাগেই ছিল তার আধিপত্য। বর্তমানে যারা সিলেট বিভাগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন তারা অনেকেই এখন তার কর্মী ছিলেন। সেই সুলতান মনসুর গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। জয়ীও হন। মৌলভীবাজার-২ আসনে সুলতান মনসুরই এক সময় নৌকার টিকিটে এমপি হয়েছিলেন। কাকতালীয় বিষয় হলো; এ আসনেই ধানের শীষের সাবেক এমপি এমএম শাহীন নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। এবার মূলদল আওয়ামী লীগের কাছাকাছি সুলতান মনসুর।
তার নিজেরও সাফ কথা; নৌকা পেলে নির্বাচন করবেন নতুবা করবেন না।
সর্বশেষ গত শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সমাবেশে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
সমাবেশের মঞ্চে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানের পাশের আসনেই বসেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুলতান মনসুর। তার পরেই আওয়ামী লীগের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা বসেন।
তার এই উপস্থিতি নজরে পড়েছে সবার। এ নিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুঞ্জন রটেছে; সুলতান মনসুর ফিরছেন। গা-ঝাড়া দিয়ে উঠছেন সিলেট অঞ্চলের তার সাবেক সহকর্মীরা। তারা জানিয়েছেন, এরশাদের জামানায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হওয়ার আগেই সিলেট অঞ্চলের ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আধিপত্য ছিল সুলতান মনসুরের। আর সভাপতি হওয়ার পর তিনি ঢাকসু’র ভিপি হন। এরপর থেকে সিলেটে ছাত্রলীগের রাজনীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চলে যায় তার হাতে। তার সময়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অনেকেই কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। ৯৬ সালে নৌকা নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর সরাসরি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন সুলতান মনসুর। ফলে সিলেট বিভাগে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও সুলতান মনসুরের গুরুত্ব বেড়ে যায়। এরপর তিনি দুইবার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় অনেক সিনিয়র রাজনীতিকদের সঙ্গে মাঠে তাকে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়।
সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট অঞ্চলে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সুলতান মনসুরের অনেক অবদান রয়েছে। তার সময়ে সিলেটে ছাত্রলীগ ছিল চাঙা। প্রতিটি জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পর সেই ছাত্রলীগের নেতাদের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এনে দলকে চাঙা করেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় ‘সংস্কারবাদীর’ তকমা গায়ে লাগে সুলতান মনসুরের। তার সঙ্গে আলোচনায় এসেছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতার নাম। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর দলের যে সম্মেলন হয় সেই সম্মেলনে হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে বাদ পড়ে যান সুলতান মনসুর। সেখানে নতুন করে সিলেট বিভাগ থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অন্তর্ভুক্ত হন এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। মিসবাহ সিরাজ সেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সময় থেকে সুলতান মনসুরবিরোধী ছিলেন।
এরপর থেকে ব্যাকফুটে চলে যান সুলতান মনসুর। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ায় নিজেও অনেকটা রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নেন। তবে জাতীয় রাজনীতির নানা শাখা-প্রশাখায় সুলতান মনসুরের বিচরণ ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি ফের সরব হন। গণফোরামের হয়ে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে মৌলভীবাজার-২ আসনে নির্বাচন করেন। এ নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। এবং নির্বাচনে জয়লাভও করেন তিনি। একবার তিনি ওই আসন থেকে নৌকা নিয়ে অন্যবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা সিলেট অঞ্চলের রাজনীতিকদের মধ্যে বিরল কেবল সুলতান মনসুরই। তবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও পরবর্তীতে সংসদে যাওয়া-না যাওয়া নিয়ে বিএনপি’র সিদ্ধান্তে অটল থাকেননি তিনি। সংসদে গিয়েছিলেন, এখনো আছেন। এই ৫ বছরে পুরনো সম্পর্ককে অনেকটা ঝালাই দিয়েছেন সুলতান মনসুর। নির্বাচনের পর থেকে নির্বাচনী আসনের বিএনপি সহ বিরোধী জোটের সঙ্গে তেমন সম্পর্ক রাখেননি। আওয়ামী লীগের নেতারাও সম্প্রতি তার কাছাকাছি আসছেন। নতুন করে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে।
সুলতান মনসুর নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন; আগামী নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক পেলে নির্বাচন করবেন, নতুবা করবেন না। সর্বশেষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সমাবেশের দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমঞ্চে উপস্থিতি সুলতান মনসুরের বার্তা আরও পরিষ্কার হয়েছে। এই বার্তা মৌলভীবাজারের রাজনীতি ছাড়াও সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের রাজনীতিতে নতুন করে জল্পনা দেখা দিয়েছে। সুলতান মনসুরের হাত ধরে অনেকেই ছাত্রলীগ করেছেন, আওয়ামী লীগ করেছেন। এখন তারা সিলেট বিভাগের রাজনীতি চালাচ্ছেন। কর্তৃত্ব খাটাচ্ছেন কেউ কেউ। সেখানে অনেকের কাছে সুলতান মনসুর ভালোবাসার নাম, আবার অনেকের কাছে আতঙ্কের নাম। সুলতান মনসুর ফিরলে সিলেট অঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্যাটার্ন পরিবর্তন হতে পারে বলে নেতারা মনে করছেন।