সরকারের নির্দেশনায় সুন্দরবনের দস্যু মুক্ত করা হয়েছে, এখন মনে হয় বিষ দস্যুদের দমন করার সময় এসছে। শোনা যাচ্ছে, বনের বিভিন্ন খালে ও নদীতে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে, তা আবার আমারা বাজার থেকে কিনে খাচ্ছি, এসকল মাছ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। তা ছাড়া কিট নাশক প্রয়োগে যখন মাছ ধরা হয়, তখন মাছসহ ছোট ছোট পোকা পর্যন্ত মারা যায়। শুধু মাছ মরে যাচ্ছে না, বনের জীববৈচিত্রেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এভাবে আর চলতে পারেনা, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করতে হবে। প্রতিবছর ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের নদীতে মাছের প্রজনন মৌসুম চলে। এই তিন মাস সুন্দরবনে সব ধরণের জেলে ও পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। অভয়ারণ্য এলাকাগুলোতে সারা বছরই জেলে-বাওয়ালিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকে। কিন্তুু জেলেদের একটি অংশ কোনো নিষেধাজ্ঞাই মানছে না বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। চোরাই পথে গোপনা গিয়ে জেলেরা বনের খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যায়। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কিছু নেতার মদদ রয়েছে এসব জেলের পেছনে। গোপন তথ্যে এগুলো বেড়িয়ে আসছে।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মোংলা থানা চত্বরে পুলিশের আয়োজনে থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সামসুদ্দীন'র সভাপতিত্বে উপজেলার সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট বনের পেশাজীবী, স্থানীয় সুধী সমাজ ও সাংবাদিকসহ অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে এক মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) জয়দেব চৌধুরী এমন কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করা ক্রমশে প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে বনের মৎস্য সম্পদ ধিরে ধিরে ধংশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সব জায়গাই শোনা যাচ্ছে খুব সহজেই মানুষ বেশী লাভের আশায় বিষ প্রয়োগে মাছ ধরা হয়। বিষের কারণে শুধু মাছ নয় বনের জীববৈচিত্রেরও এখন হুমকির মুখে ধাবিত হচ্ছে। সুন্দরবনের খালে ও নদীতে এভাবে মাছ ধরা চলতে থাকলে এক সময় সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ বিলুপ্ত হবে। অভয়ারণ্য এলাকাগুলোতে সারা বছরই জেলে-বাওয়ালিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকে। কিন্তুু জেলেদের একটি অংশ কোনো নিষেধাজ্ঞাই মানে না। তারা বনের খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যায়। কারা এদের মদদ দিচ্ছে, সবব কিছুই আমাদের নজরে আসছে। সরকার জল দস্যু ও বন দস্যু মুক্ত সুন্দরবন ঘোষনা করেছে, এখন বেড়েছে বিষ দস্যুদের তৎপরতা। আমরা প্রস্তুত, যদি বন থেকে বিষ দস্যুরা দ্রুত সরে না আসে আমারা তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই অভিযান শুরু করবো। যেভাবে সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত করেছি, ঠিক একই ভাবে তাদের কঠোর হচ্ছে দমন করা হবে। এখনও সময় আছে, ভারোর দিকে ফিড়ে আসুন। বনের সম্পদ আপনার আমার সকলের। আমরা এ এলাকায় চির দিন থাকবোনা। আপনারাই থাকবেন, আপনাদের পরবর্তি প্রজন্মম এখানে থাকবে। আপনাদের ছেলে মেয়েদের আগামী দিনের বভিস্যত আপনারা নিজের হাতে ধংশ করছেন। আর যদি সুন্দরবনের সম্পদ আমাদের রক্ষা করতে হয়, তা কঠোর হস্তে রক্ষা করবো।
মোংলা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ সামসুদ্দিন’র সভাপতিত্বে বাগেরহাট পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক, সহকারী পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর দাস, মোংলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ সুনীল কুমার বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম হোসেন, পৌরসভার মেয়র শেখ আব্দুর রহমান, বন বিভাগের চাদঁপাই ষ্টেশন কর্মকর্তা মোঃ খলিলুর রহমান, রামপাল থানা অফিসার ইনচার্জ এস এম আশরাফুল আলম, মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকরাম ইজারাদার সহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ, আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যু, সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলে, মৌয়াল, পর্যটক বহনকারী বিভিন্ন জলযানের মালিক/চালক, মোংলা বাজার মৎস্য সমিতির সভাপতি মোঃ আফজাল ফরাজী, বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মোংলা উপজেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মরত সাংবাদিকরা এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।