নরসিংদীর বেলাবতে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক বাংলাদেশ সমাচার বিশেষ প্রতিনিধি সফিকুল ইসলাম সুমন'সহ ৩ জন। মুক্তিযোদ্ধার কাছে দাবি করা চাঁদার টাকা না দেওয়ায় মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। যা অসত্য ও বানোয়াট। যার কোনো ভিত্তি নেই।
ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম মো. আতাউর রহমান। তিনি বেলাব উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের ধুকুন্দী গ্রামের মৃত আসমত আলী প্রধানের ছেলে।
মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান জানান, পারিবারিক দ্বন্দ্বকে পুঁজি করে কতিপয় নামধারী সাংবাদিক আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন, টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমার এবং আমার ছেলে ভাস্কর অলি মাহমুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচার করে। যা সম্পূর্ণ সামাজিক ও রাজনেতিক প্রতিহিংসার ফসল। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
তিনি আরো বলেন, যেই দেশের জন্য যুদ্ধ করলাম,যে দেশ আমরা স্বাধীন করলাম, সেই দেশে স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর পর আমি মুক্তিযোদ্ধা কিনা সে প্রশ্নের সমক্ষীন করা হয়, তার চেয়ে ভালো ছিলো যুদ্ধে শহীদ হয়ে যাওয়া ।প্রয়োজনে দেশ ছেড়ে চলে যাব, কিন্তু চাঁদা দিতে পারব না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান ১৯৫৭ সালের পহেলা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ জন্মগ্রহণ করেন । ১৯৭০ সালে লক্ষীপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা অংশগ্রহণ করে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন।১৯৭৩সালে অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আতাউর রহমান ছিলেন একজন ভোটার এবং ৬ ডিসেম্বর ১৯৭৬ সালের নির্বাচনে প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকায়ও তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ মহাকুমা (বর্তমান নরসিংদী জেলা )রায়পুরা উপজেলা (বর্তমান বেলাবো উপজেলা) আমলাব ইউনিয়নের ধুকুন্দি গ্রামের ৪৫ নাম্বার ভোটার হিসেবে তার নাম রয়েছে। তখনই তার বয়স ২১ বছর। এমনকি বীরমুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমানের বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা হযরত আলী এই ভোটার তালিকার ৪৪ নাম্বার ভোটার ও তার ছোট ভাই আব্দুল বারিকও ১৯৭৬ সালের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় তিনি একজন ভোটার এবং তার বয়স তখন ১৮ বছর। ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি তৎকালীন আমলাব ইউপি চেয়ারম্যান বশির আহমেদ পরশ মোল্লা আতর মিয়া পিতা আসমত আলী প্রধানকে মো.আতাউর রহমান একই ব্যক্তি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী বলে প্রত্যয়ন প্রদান করেন।
বেলাবো উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ শমসের জামান ভূঁইয়া রিটন এবং সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের যৌথ স্বাক্ষরিত এক প্রত্যয়নপত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আতাউর রহমানকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মতাদর্শী ও আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী বলে দাবি করেন।
এ দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমানের ছোট ভাই আব্দুল বারিক বলেন ১৯৭১ সালে আমার বয়স ১০ বছর কিংবা তার কাছাকাছি অথচ জাতীয় পরিচয়পত্র এনআইডি তে তার জন্ম ১২ মার্চ ১৯৭১ লেখা রয়েছে। বারিক মিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী তিনি ১৯৬০ সাল কি কাছাকাছি সময় জন্মগ্রহণ করেন। সে অনুপাতে আতাউর রহমান ১৯৫৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। যা জাতীয় পরিচয়পত্রে বিদ্যমান।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসিম উদ্দিন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর ভাই আমি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন একই বাংক্কারে ছিলাম। রামপুরের যুদ্ধের কমান্ডার শেখ হারুন ভাইয়ের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুর রশিদ তারা মাষ্টার, টাঙ্গাইলের বল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব ভাই, কমান্ডার রিয়াজ ড্রেনের ঘাট, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ নয়ন ভাই, নেভাল সিরাজ, মন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন তাজ, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী, যশোরের কাজী সাইদুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোজাম্মেল ১৬ জুলাই সেই যুদ্ধে কমপক্ষে ৮০ জন পাক হানাদারদের শলীল সমাধি ঘটে রামপুরের যুদ্ধে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মানিক মাঝি আহত ও শহিদ হন। যাদের জন্ম তখন হয়নি, তারা না জেনে কেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বির্তক ফেলবে। কেন তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাদা চাইবে। চাঁদা না দিলে মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার হতে হবে?
আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন তার ফেইসবুক ওয়ালে লিখেন, আমার কাছেও নামধারী সাংবাদিক
শাকিল চাঁদা চেয়েছিলো এবং মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছিলো। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আমি আমার সম্মান ফিরে পাই। এসব কুলাঙ্গারদের জনতার আদালতে বিচার হওয়া উচিত।
নরসিংদী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কার্যকরী সদস্য বেলাবো উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের বীর মুক্তি যোদ্ধাদের নিয়ে এরকম প্রপাগান্ডা মিথ্যাচার করে থাকে একটা গোষ্ঠী,যা সত্যিই দুঃখজনক। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় একাধিক বার যাচাই-বাছাইের পরই সরকারি গেজেট প্রকাশ করেছে। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে আতাউর ভাইকে নিয়ে যে মিথ্যাচার করেছে তা পুরোটাই ভুল। মুক্তিযুদ্ধে তিনি আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সভাপতি আয়েশা জান্নাত তাহেরা বলেন, চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই করে গেজেট প্রকাশের পর কোনো আপত্তি থাকার কথা না ,যদি কারো কোন ব্যক্তির উপর আপত্তি থাকে তাহলে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করতে পারে কিন্তু অভিযোগ প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে ভূয়া বলা যাবে না। কারণ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় মাঠ প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যাছাই বাছায় করেই গেজেট প্রকাশ করেছে। অতএব এই বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি থাকতে পারে না।বয়সের ব্যাপারে তিনি আরো বলেন ,একজন ব্যক্তি যদি পড়াশোনা করতে গিয়ে গ্যাপ হয়ে যায় তবে সেটা তার প্রকৃত বয়স নির্ধারণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। প্রকৃত বয়স জাতীয় পরিচয় পত্র ,জন্ম নিবন্ধন এবং তৎকালীন ভোটার তালিকার মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। আট বছর বয়সের যে বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে তা সঠিক নয়।