প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির জন্মই হয়েছে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। সেই বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা।
বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের যাত্রা শুরু হয়েছে, জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে। তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না। তাদের কিছু প্রভু আছে, তারা একই সঙ্গে সুর মিলায় বাংলাদেশে নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। তাদের কাছে প্রশ্ন, জিয়ার হ্যাঁ-না ভোট, খালেদার ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচনের সময় গণতন্ত্র কোথায় ছিল? জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার নির্বাচন তো আমরা দেখেছি। আজ যারা বাংলাদেশে টর্চলাইট দিয়ে নির্বাচন খুঁজছেন, তখন তারা কোথায় ছিলেন? অন্ধ ছিলেন? তখন তো তাদের সোচ্চার দেখিনি!
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রক্ত দিয়ে এদেশের গণতন্ত্র এনেছে। আমাদের হাতে গণতন্ত্র সুরক্ষিত না। সুরক্ষিত মিলিটারি ডিক্টেটরদের দোসরদের হাতে? যারা শ্রমিকের অধিকার কেড়ে নেয়, কৃষকদের গুলি করে হত্যা করে, তারা এখন গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী? কিছু বুদ্ধিজীবী আছে, যারা বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে, তারাও তাদের পক্ষে কথা বলে।
খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট তো অনেকেরই জন্মদিন। কেউ কি পালন করে? কত বড় অমানুষ হলে জাতি যেদিন শোক দিবস পালন করে সেদিন সে জন্মদিন পালন করে! কতটা অমানবিক হলে শোক দিবসকে জন্মদিন বানিয়ে উৎসব করতে পারে। জিয়ার হাতে আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী হত্যা হয়েছে। একইভাবে খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছে। এখনো মনে পড়লে শিহরিত হতে হয়। অনেককে ধরে কোথায় নিয়ে গেছে কেউ বলতে পারে না। যখনই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে, হত্যা খুন ও গুম করেছে। জনগণের ভাগ্য তারা পরিবর্তন করতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তৈরি করা দল বিএনপি। তারা জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল। ভোট নিয়ে প্রহসন করেছে। এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া নির্বিচারে হাজার হাজার সেনা অফিসার হত্যা করেছে। তাদের লাশও গুম করে। নিহতদের পরিবার এখনও লাশ খুঁজে বেড়ায়। কেঁদে ফেরে তাদের স্বজনদের খোঁজে। পাপ বাপকেও ছাড়ে না। যেভাবে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়, সেভাবেই জিয়াকেও খুন করা হয়। তার লাশেরও খবর নাই। জেনারেল এরশাদ বলে গেছেন, জিয়ার লাশ পাওয়া যায়নি। জিয়ার লাশ খালেদা, তারেক ও কোকো দেখে নাই। একটা বাক্স এনে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে অবৈধ প্রক্রিয়ায় সংসদ এলাকায় দাফন করা হয়। বিএনপি নেতারা সেখানে গিয়ে ফুল দেয়। কিন্তু কাকে ফুল দেয়, তারা কি জানে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল খুনি মোশতাক এবং তার দোসর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না থাকলে, মোশতাক কখনোই এটা করতে সাহস পেত না। করতে পারত না। খুনি জিয়া যে জড়িত ছিল এটা সম্পূর্ণভাবে প্রমাণিত।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার করা হবে না এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। সে খুনিদের শুধু বিচার থেকে রেহাই দেওয়া হয়নি, তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। খুনিদের দূতাবাসের চাকরি দেওয়া হয়। এই খুনিরা যখন দূতাবাসের চাকরি পায়, অনেক দেশ নেয়নি। এই হত্যাকাণ্ড মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছিল।
পাপ কাউকে ছাড়ে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যেভাবে জিয়াউর রহমান জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল, জিয়াকেও একইভাবে খুন হতে হয়েছিল। সেও খুন হয়। তার লাশের কিন্তু খবর নাই। সংসদ ভবনে সেখানে যে কবরটা দেওয়া আছে, সেখানে জিয়াউর রহমানের কোন লাশ নাই। জেনারেল এরশাদ কিন্তু এই কথাটা বলে গেছে। বলেছিল তার লাশ তো পাওয়া যায়নি। কারণ জিয়ার লাশ খালেদা জিয়া দেখে নাই। জিয়ার লাশ তার ছেলে তারেক রহমান দেখে নাই। কোকো দেখে নাই, তার পরিবার-পরিজন আত্মীয়-স্বজন কেউ দেখে নাই। জেনারেল এরশাদ একটি বাক্স এনে জনগণকে ধোকা দিয়ে সংসদ ভবনের জায়গায় মাটি দিয়ে রেখে দিয়েছে। সেটাও অবৈধ স্থাপনা। বিএনপি নেতাকর্মীরা সেখানে ফুল দেয়। কাকে দিচ্ছে ফুল তারা কি সেটা জানে? জানে না।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সাদেক খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়, মিজবাউর রহমান ভূঁইয়া রতন, সাজেদা বেগম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি প্রমুখ।
এছাড়া আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তার হোসেন, গোলাম সারোয়ার কবির, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম মাজহার আনাম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহেরুন্নেসা মেরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী মোরশেদ কামাল প্রমুখ।
ভোরের পাতা/কে