শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত ও আগামী দ্বাদশ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক করতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা একটি করেছেন খোলা চিঠি লিখেছেন।
ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ীসহ রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের অগ্রগণ্য ব্যক্তিরা।
সোমবার (২৮ আগস্ট) স্বাক্ষরকারীদের একজন, রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডেলি-হ্যারিস একটি বিজ্ঞপ্তিতে খোলা চিঠিটি প্রকাশ করেন।
প্রকাশিত সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি তাকে (ড.ইউনূস) লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করায় আমরা উদ্বিগ্ন এবং এটি তাকে বিচারকভাবে তাকে হেনস্তা করার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বলে আমাদের বিশ্বাস।’
এর আগে চলতি বছর মার্চ প্রথমবারের মতো ড. ইউনূসের 'নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন ৪০ জন বিশ্বনেতা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে ছাপা হয়েছিল সেই চিঠিটি।
গতকাল ২৭ আগস্ট রোববার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে চিঠি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার একদিন পরই ১৬০ জন বিশ্ব নেতার চিঠি নিয়ে ফের আলোচনায় উঠে এল ড. ইউনূস ও আসন্ন নির্বাচন।
এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলাচিঠি লিখেছিলেন রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের ৪০ জন বিশ্বনেতা। ওই খোলাচিঠির ধারাবাহিকতায় এবার ১৬০ জন বিশ্বনেতা ফের চিঠি পাঠালেন।
১৬০ জন বিশ্ব নেতার মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা প্রেসিডেন্ট, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের মতো ব্যক্তিত্ব। ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের একজন, রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডেলি-হ্যারিস এক বিজ্ঞপ্তিতে চিঠিটি প্রকাশ করেছেন।
চিঠির শুরুতে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ সম্বোধন করে লেখা হয়েছে- আমরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতার পাশাপাশি বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনাদের জাতি যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে আমরা তার প্রশংসা করি।
কিন্তু, সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি দেখেছি তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনে প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তা হলো- নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন, সম্প্রতি তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি বলেই আমাদের বিশ্বাস। এর আগে ৪০ জন বিশ্বনেতা তার নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আপনার কাছে যে আবেদন করেছিলেন এই চিঠিটি তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলারই চেষ্টা।
আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আপনি অবিলম্বে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন।
তারপর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা রাখার সুযোগসহ আপনার দেশের মধ্য থেকে নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেল দ্বারা অভিযোগের পর্যালোচনা করা হবে। আমরা নিশ্চিত, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী এবং শ্রম আইনের মামলাগুলোর যে কোনো পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনার করলে তিনি খালাস পাবেন। আপনি জানেন, ‘কীভাবে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ আন্তর্জাতিক অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হতে পারে’- এ নিয়ে প্রফেসর ইউনূসের কাজ আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণামূলক।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিরা কীভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন তিনি তার একটি প্রধান উদাহরণ। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি তিনি যেন নিপীড়ন বা হয়রানি মুক্ত হয়ে তার উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
চিঠির সমাপ্তি টানা হয়েছে এভাবে ‘আমরা আশা করি, আপনি এই আইনি সমস্যাগুলোর সমাধান একটি সমীচীন, নিরপেক্ষ এবং ন্যায়সংগত পদ্ধতিতে নিশ্চিত করবেন। এর পাশাপাশি আসছে দিনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং সব ধরনের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান (প্রদর্শন) নিশ্চিত করবেন। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে এই বিষয়গুলোর সমাধান করা হয় তা ঘনিষ্ঠভাবে নজরে রাখার জন্য আমরা বিশ্বের লাখ লাখ উদ্বিগ্ন নাগরিকদের শিবিরে যোগ দেব’।