বরগুনার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে টিকিট কাউন্টার থাকলেও দুবছর এগুলো ব্যবহার করছেন না পরিবহন মালিকরা। পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গায় বরগুনা টু ঢাকাগামী পরিবহনের কাউন্টার ঘর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাস টার্মিনালে রয়েছে অর্ধশতাধিক বাস পার্কিং করে রাখার সুবিধা। এছাড়াও ১৬টি টিকিট কাউন্টার, দুটি ওয়েটিং, একটি অফিস কক্ষ, ছয়টি টয়লেট, একটি লেয়ার রুম, একটি কমার্শিয়াল রেস্টুরেন্ট এবং নামাজ পড়ার রুমসহ আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি চারদিকে রয়েছে নানা প্রজাতির সৌন্দর্যবর্ধক গাছের সমারোহ দৃষ্টি নন্দন ফুটপাত। তবে এই দৃষ্টিনন্দন বাস টার্মিনালে এসে সকল পেশাজীবী মানুষের খুশি থাকার কথা থাকলেও হতে হচ্ছে হয়রানির শিকার। যাত্রীরা স্ট্যান্ডে এলেই একদল মানুষ দৌড়ে চতুর্দিক ঘিরে টিকিট বিক্রির জন্য খোলা আকাশের নিচে টানাহেঁচড়া করতে থাকেন। ফলে বাধ্য হয়ে সেখান থেকেই টিকিট কিনতে হয় যাত্রীদের।
বরগুনা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুন মাসে বরগুনা সদর উপজেলার খেজুরতলা এলাকায় ৪ একর জমি নিয়ে বাস টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) যৌথ অর্থায়নে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় ১৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৩ টাকা। নির্মাণকাজ শেষে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে টার্মিনালটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নবনির্মিত এই বাস টার্মিনালটি ছাড়া বরগুনায় আর কোনো বাস টার্মিনাল নেই।
এ বিষয় বাস মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, বাস কোম্পানি যে কয়টি আছে তাতে এক একটি কোম্পানিকে এক একটি কাউন্টার দিলে তাতে কোন সমস্যা হয় না। কাউন্টারগুলো বাস মালিকদের বুঝিয়ে দিচ্ছে না।
এদিকে বরগুনা ঢাকাগামী যাত্রীদের রয়েছে নানা রকম অভিযোগ। বিভিন্ন সময় হয়রানির শিকার হয়ে কোথাও গিয়ে মেলেনি প্রতিকার।
কয়কজন বাসযাত্রী বলেন, বাস মালিকদের সিন্ডিকেটের প্রভাবে যাত্রীরা অস্থির। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে বাস স্ট্যান্ডের টিকিট কাউন্টার পায় না। টিকিট পেতে হলে ঘুরতে হয় ঘুরতে হয় পরিসরের বিভিন্ন স্থানে! এর একটা সুরাহা হওয়া জরুরি।
জেলা যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম টিটু বলেন, “বরগুনার স্থানীয় বাস মালিক সমিতির সিন্ডিকেটের কারণে উদ্বোধনের দুই বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত নতুন বাস স্ট্যান্ডের যাত্রীদের টিকেট কাউন্টার চালু করা সম্ভব হয়নি। এজন্য আমি বাস মালিক সমিতি এবং পৌরসভাকেও দায়ী করব। পৌরসভা যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এতদিনে চালু করা যেতে বলে আমি মনে করি। অবিলম্বে কাউন্টারগুলো খুলে দেওয়ার জন্য আমি যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি।”
জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা কিসলু বলেন, “এ বিষয়ে সমিতির সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নিবো।”
পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, কাউন্টারগুলো বাস মালিক সমিতির কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কেন তারা এগুলো ব্যবহার না করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে টিকিটগুলো বিক্রি করছে। এ বিষয়ে আমি বাস মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করব।
এ বিষয় বরগুনা জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। বাস মালিক সমিতির সাথে আমি কথা বলবো, বিষয়টি আমি দেখব।