দেশের সংবিধান অনুযায়ী এই সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) নেতৃত্বাধীন জোট গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ।
শনিবার (২৬ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালুর সভাপতিত্বে ‘সংবিধান অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্যমূলক নির্বাচনের দাবি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবি জানান।
এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, আপনারা জানেন গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ আত্মপ্রকাশ করেছিল একটি লক্ষ্য নিয়ে। সেই লক্ষ হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র বিকাশ এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা।
তিনি বলেন, আগস্ট মাস শোকের মাস। এই মাসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। ৭১-এর পরাজিত শক্তি জামায়াত ও মুসলিম লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় তৎকালীন সর্বহারা পার্টির সিরাজ শিকদার বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করেছিলো। এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল আমি তাদের ধিক্কার জানাই। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে যারা এখনো পলাতক রয়েছে তাদের আটক করে সাজা কার্যকর করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আমি বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকলকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন।
শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, বিএনপিসহ কিছুদল তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাচ্ছে। কিন্তু ২০০৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করে বিএনপি তত্ত্বাবধায়কের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল এবং সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিলো। আবার অনেকে জাতীয় সরকার চাচ্ছে। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই না- আমরা জাতীয় সরকারও চাই না। আমরা সমৃদ্ধ, উন্নত এবং আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান সংবিধানের আলোকে নির্বাচন চাই। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলবো তারা যেন, তাদেরকে দেওয়া আইনি ক্ষমতা যথাযথভাবে প্রয়োগ করে জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়। এর পাশাপাশি প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাই প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন নির্বাচন কমিশনকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে। সর্বোপরি নির্বাচন কমিশন এবং সকল পর্যায়ের প্রশাসন যেন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে সক্ষম হয় সেজন্য বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে আন্তরিক সহায়তা প্রদান করার আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য এবং গণতন্ত্র বিকাশ করার জন্য, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে ইনশাআল্লাহ৷ বিগত ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনপিপি ৮৩টি আসনে প্রার্থী দিয়ে সারাদেশে সাংগঠনিক ভিত্তি প্রমাণ করেছে। এইবার আমাদের জোট আরো অন্যান্য দল সম্পৃক্ত হওয়ায় আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার লক্ষে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও বলিষ্ঠ ভূমিকার মাধ্যমেই অবাধ, সুষ্ঠূ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামিক আন্দোলন বাংলাদেশের পরেই এনপিপির অবস্থান। আমরা পঞ্চম দল হিসেবে বিবেচিত হয়েছি। এরপরে আছে কমিউনিস্ট পার্টি। বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত এনপিপি ও গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চের নেতা-কর্মী আছেন। বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় আমাদের কমিটি আছে এবং ৪০টি জেলাতে দলীয় কার্যালয় আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে সৎ এবং আদর্শ জোট হিসেবে গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এনপিপির তৃণমূল থেকে সর্বস্তরের সকল নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানান তিনি।
ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কখনো ডিমের দাম, কখনো চিনির দাম, কখনো সয়াবিন তেলের দাম; আবার কখনো পেয়াজের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে মেহনতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই অসৎ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জণগনের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানাই।
ভোরের পাতা/কে