জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বিয়ে। আর তাই ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। বিশেষ করে স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত। বিয়ের আগে হবু জীবন সঙ্গীর কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কি না তা জেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
বিয়ের আগে কী ধরনের পরীক্ষাগুলো করানো দরকার? চলুন জেনে নিই-
রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা
রক্তের বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। যেমন- এ, বি, এবি এবং ও। সঙ্গে আছে পজিটিভ বা নেগেটিভ। যেমন- বি পজিটিভ,ও নেগেটিভ। যেকোনো গ্রুপের রক্তের কেউ অন্য যেকোনো গ্রুপের মানুষকে বিয়ে করতে পারবেন। একই রক্তের গ্রুপ হলেও সমস্যা নেই। তবে পজিটিভ-নেগেটিভ রক্তের মিলনের ফলে জন্ম নেওয়া শিশুর ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।
বিশেষত স্ত্রী যদি নেগেটিভ এবং স্বামী যদি পজিটিভ গ্রুপের হন, তবে সন্তান হতে পারে নেগেটিভ বা পজিটিভ রক্তের গ্রুপের। সন্তান নেগেটিভ গ্রুপের হলেও সমস্যা নেই, তবে পজিটিভ হলেই বিপদ। প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা কম।
সন্তান প্রসবের সময় সন্তানের রক্ত মায়ের শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্নভাবে। ফলে মায়ের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়। এ এন্টিবডি মায়ের শরীরে বাসা বাঁধে। ফলে পরবর্তী সন্তান যদি পজিটিভ গ্রুপের হয় তবে সেই এন্টিবডিপ্লাসেন্টার মাধ্যমে ভ্রূণে প্রবেশ করে তার রক্তকণিকাগুলো ধ্বংস করে ফেলে। এমন ঘটনা ঘটলে গর্ভস্থ শিশু গর্ভেই মারা যেতে পারে। কিংবা জন্মের পর মারাত্মক জন্ডিস, মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। স্ত্রীর নেগেটিভ ও স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হলেও ভয়ের কিছু নেই। এমনটি হলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর তার রক্ত পরীক্ষা করান। সন্তান পজিটিভ হলে মায়ের শরীরে এন্টি-ডি ইনজেকশন দিয়ে নিতে হবে। এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে নিন।
মানসিক রোগ রয়েছে কি না
আমাদের সমাজে মানসিক সমস্যাকে খুব একটা পাত্তা দেওয়া হয় না। এটি কিন্তু মোটেও এড়িয়ে যাওয়ার বিষয় নয়। অনেকসময় পরিবার বিষয়টি লুকিয়ে বিয়ে করিয়ে দেন। ভাবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। আসলে এভাবে কিছুই ঠিক হয় না। বরং সমস্যা আরও বাড়ে। তাই হবু জীবনসঙ্গীর কোনো মানসিক সমস্যা আছে কি না আগেই জেনে নিন।
আপনার যদি আগে এ ধরনের রোগ থেকে থাকে এবং পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে থাকেন সেটিও তাকে জানাতে ভুলবেন না।
এইডস
এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা এই দেশে খুব বেশি নয়। তবুও ঝুঁকিমুক্ত থাকাই উত্তম। অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচারের কারণে দেখা দিতে পরে এইডস। সেইসঙ্গে হতে পারে সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি, সি, গনোরিয়াসহ নানা ভয়াবহ সব অসুখ। সঙ্গীর যেকোনো একজনের এই শারীরিক অসুস্থতা থাকলে তা ছড়াবে অপরজনের শরীরেও। তাই আগেই পরীক্ষা করানো ভালো।
সিমেন পরীক্ষা
নারী কিংবা পুরুষ যে কারোর বন্ধ্যাত্বের সমস্যা থাকতে পারে। বিয়ের আগেই পুরুষের সিমেন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো। একইসঙ্গে দুজনের রক্তের হরমোন যেমন এফএসএইচ, টিএইচএস, টেস্টেটেরোন, ইস্ট্রোজেন, প্রোল্যাকটিন পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন। নারীরা করিয়ে নিন পেলভিক আলট্রাসনোগ্রাম। এতে বিয়ের পরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেছে নেয়া সহজ হয়।
নারীর ওভারি পরীক্ষা
বর্তমানে অনেক নারীই বেশি বয়সে বিয়ে করেন। সেসঙ্গে জীবনযাত্রাতেও এসেছে পরিবর্তন। আবার অনেক নারীই এখন ধূমপান, মদ্যপান বা অন্যান্য নেশায় আসক্ত। তাই বিয়ের আগে ওভারি টেস্ট করানো একান্ত প্রয়োজন। ওভারিতে সমস্যা থাকলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণু তৈরির পরিমাণ কমতে শুরু থাকে। এক্ষেত্রে সন্তান ধারণে সমস্যা হতে পারে।
জেনেটিক টেস্ট
বিয়ের আগে হবু বর ও কনে দুজনেরই জেনেটিক পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। এর মাধ্যমে জানা যাবে হবু সঙ্গীর কোনো জিনঘটিত সমস্যা আছে কি না।
ব্লাড ডিসঅর্ডার পরীক্ষা
বিয়ের আগে নারীর ব্লাড ডিসঅর্ডার পরীক্ষা করানো উচিত। এই পরীক্ষা করালে জানা যাবে হবু কনে রক্তাল্পতায় ভুগছেন কি না। সেসঙ্গে পুরুষ ও নারী উভয়েরই থ্যালাসেমিয়ার পরীক্ষাও জরুরি।
শারীরিক সমস্যা নিয়ে সংশয় নয়, বরং আলোচনা জরুরি। এতে সঠিক চিকিৎসা বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হয়।