#আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছে নামজারি ও আমমোক্তারনামা।
#ওই প্লটের কার্যক্রমের ওপর রয়েছে স্থগিতাদেশ।
#মালিকানা-সংক্রান্ত উচ্চ আদালতে বিচারাধীন তিনটি মামলা।
#বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অসাধু চক্র তৎপরতা চালাচ্ছে।
উচ্চ আদালতের রায়ে প্লটের নামজারি ও আমমোক্তারনামা বাতিল হয়েছে। ওই প্লটের ওপর রয়েছে স্থগিতাদেশ। এরপরও নতুন করে ওই প্লটের মালিকানা হস্তান্তরের সুপারিশ করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে উচ্চ আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করলেও অসৎ উদ্দেশ্যে মূল বিষয়গুলো উল্লেখ করেনি। অথচ ওই বিষয়গুলো আমলে নিলে ওই শিল্প প্লটের মালিকানা হস্তান্তরের সুপারিশ করার কোনো সুযোগ নেই।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে শিল্প এলাকায়। ২৬৬ নম্বরের ৬০ কাঠা আয়তনের শিল্প প্লটটির ড়্গেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করেই এমন সুপারিশ করেছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুই প্রকৌশলী। তারা হলেন– ঢাকা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে সাঈখ এবং তেজগাঁও গণপূর্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান। আর সে সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এসব কাজে তাদের সহযোগিতা করেছেন তৎকালীন শাখা-১৪-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসচিব মো. শাহিনুর ইসলাম; বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন। এ নির্দেশনা ছাড়াও ওই প্লটের মালিকানা বিষয়ে উচ্চ আদালতে তিনটি মামলা চলমান রয়েছে। এরপরও গণপূর্ত অধিদপ্তর ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি অসাধু চক্র উচ্চ আদালতের রায় ও বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে একটি পক্ষকে মালিকানা হস্তান্তর করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিপুল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তারা এসব করছেন বলে জানা গেছে। ওই ফাইলের তথ্য গোপন ও জমাকৃত আদালতের কাগজপত্র সরানোর কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন ওই শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মনসুর আলী শাকিদার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ওই প্লটের বিষয়ে হাইকোর্ট রিট পিটিশন মামলার রায় ঘোষণা করে। আদালতের রায়ের কপি তাদের কাছে থাকার পরও মূল বিষয়গুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি। বরং সেখানে রায়ের খণ্ডিত অংশ উপস্থাপন করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, উচ্চ আদালতের রায়ে বলা মন্ত্রণালয়কে উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে দুই মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে বলা হয়েছে। গত বছরের ৩ আগস্ট গণপূর্ত থেকে এই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার পর অসাধু চক্র বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ফাইল অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, তেজগাঁও শিল্প এলাকার ২৬৬ নম্বর প্লটের দখলদার মো. জিবরান গং। সেখানে তাদের এবং তাদের কাছ থেকে বায়নাসূত্রে মালিকরা পুরো প্লটের দখলে রয়েছেন। এরপরও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেমিপাকা ফ্যাক্টরি শেডে মেসার্স শওকত আলী অ্যান্ড ব্রাদার্সের পক্ষে নিযুক্ত আমমোক্তার মাইনুল হাসান রুম্মান এবং রাবার প্লাস্টিক তৈরির মেশিন রয়েছে। বাস্তবে যার কোনো সত্যতা নেই।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ৬০ বছর ধরে দখলে থাকা পক্ষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রয়েছেন। তারা উচ্চ আদালতে মামলার বিচারের মাধ্যমে জমির মালিকানার জটিলতার নিরসন করতে চাচ্ছেন। কিন্তু অন্যপক্ষ কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে মন্ত্রণালয়ের অসাধু চক্রকে ম্যানেজ করে অবৈধ প্রক্রিয়ায় মূল্যবান জায়গাটি আত্মসাৎ করতে মরিয়া। অবৈধ প্রক্রিয়ায় ওই জায়গা নিজের করে নিতে অনৈতিক পথে হাঁটছেন মইনুল হাসান রুম্মান গং। আর আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতে বিচারের জন্য লড়ছেন ৬০ বছর ধরে দখলে থাকা মো. জিবরান গং।
জানতে চাইলে মইনুল হাসান রুম্মান দৈনিক ভোরের পাতাকে বলেন, ‘এখন আমি ব্যস্ত আছি। আপনাদের অফিসে এসে দেখা করব। তিনি অফিসে এসে দেখা করেননি এবং আর ফোনও রিসিভ করেননি।’
আর দখলদার মো. জিবরান দৈনিক ভোরের পাতাকে বলেন, ‘আমরা আইনি লড়াইয়ে আছি। উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আমরা মালিকানার বিষয়টি সুরাহা করতে চেষ্টা করছি। কিন্তু, একটি অসাধু চক্র গণপূর্ত অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে প্রভাব বিস্তার করছে। তারা উচ্চ আদালতের রায় ও বিচারাধীন মামলাকে থোড়ায় কেয়ার করছে।’
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, গত ২৫ জুন আইনি লড়াইয়ে থাকা মো. জিবরান গংদের পক্ষ থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী ও সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এরপরও অসাধু চক্র নানা যুক্তি দেখিয়ে জাল-জালিয়াত চক্রের পক্ষে সাফাই গাইছেন। বিষয়টির যৌক্তিক এবং আইনগত সমাধান দিতে বদ্ধপরিকর মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রতিমন্ত্রী। এ ড়্গেত্রে গণপূর্ত অধিদপ্তরের উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে দেওয়া একপেশে প্রতিবেদনকে শক্ত দলিল হিসেবে উপস্থাপন করছে অসাধু চক্র। আর মন্ত্রণালয়ও সেটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
জানতে চাইলে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে সাঈখ দৈনিক ভোরের পাতাকে বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছেন তেজগাঁওয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান (এখন সচিবালয় গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন)। আমি শুধু স্বাক্ষর করেছি।’
মালিকানা হস্তান্তরের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এভাবে দেওয়াটা যৌক্তিক হয়েছে কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ভাই, অনেক আগের ব্যাপার। এত কিছু আমার মনে নেই।’ আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে এমনটি করা হয়েছে কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কারও পক্ষে প্রতিবেদন দিই না। কোনো কারণে ভুল হলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে তা সংশোধন করারও সুযোগ রয়েছে।’
একই বিষয়ে গণপূর্তের তেজগাঁওয়ের তৎকালীন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান দৈনিক ভোরের পাতাকে বলেন, ‘ঘটনাটি প্রায় এক বছর আগের। প্রতিবেদনে কী লিখেছি; সেটিও ভুলে গেছি। উচ্চ আদালতের রায় অমান্যের বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি বলেন, মনে করতে পারছি না।’ আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে এমনটি করা হয়েছে– এমন অভিযোগের জবাবে বলেন, ‘এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। যা ঘটনা আমরা প্রতিবেদনে সেটা তুলে ধরেছি।’
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শাখা-১৪-এর তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপসচিব মো. শাহিনুর ইসলাম একপেশে প্রতিবেদন প্রণয়নে মন্ত্রণালয় থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে তার ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল করে এবং এসএমএস (খুদেবার্তা) পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। আর ওই ফাইলের তথ্য গোপন ও জমাকৃত আদালতের কাগজপত্র সরানোর কাজে সহযোগিতাকারী ওই শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মনসুর আলী শাকিদার দৈনিক ভোরের পাতাকে বলেন, ‘কোনো ভুল হলে অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়ে থাকতে পারে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে সংক্ষুব্ধরা সংশোধনের আবেদন করতে পারেন। সেটা পুনরায় বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে।’