প্রকাশ: শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৩, ৫:২২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
মেরুদণ্ডের গুরুতর রোগে আক্রান্ত আবু হাসেমের কোমর থেকে দুই পায়ের পুরোটাই অবশ। একা হাঁটতে পারেন না। দাঁড়ালেই দুই পা কাঁপতে থাকে। কিন্তু এই প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তাকে। বাবার কাঁধে চড়ে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে আসেন তিনি।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সরকারি আদর্শ কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি।
জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার রাজনগর গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর উসমান গনি ও গৃহিণী মাহমুদা বেগমের ছেলে আবু হাসেম। তার দুটি পা অবশ অবস্থায় থাকায় একা দাঁড়াতে না পারায় চলাফেরায় স্বজনদের সহযোগিতা নিতে হয়।
আবু হাসেমের বাবা উসমান গনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে দেখলে আমার ছেলেকে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবেই মনে হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। ২০১৭ সালে হঠাৎ পিঠে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। এরপর আকস্মিকভাবে কোমর থেকে তার দুই পা অবশ হয়ে যায়। পরে আমরা তাকে শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাই। সেখানে মেরুদণ্ডের অপারেশন করেও ছেলেটা সুস্থ হননি। সেখানের ডাক্তার ছেলেটাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও টাকার অভাবে সম্ভব হয়নি।
আবু হাসেম বলেন, বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) আমার প্রথম পরীক্ষা হয়েছে। আমার শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও আমি সমাজের বোঝা হতে চাই না। ভালো কোনো কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে একজন সরকারি কর্মকর্তা হতে চাই।
তিনি আরও বলেন, শারীরিক সমস্যার জন্য একা চলাফেরা করতে না পারায় একটি হুইল চেয়ার কেনার সামর্থ্য নাই বাবার। তবে সুস্থতার জন্য টাকা নয় দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা সহায়তার দাবি করেন সরকারের কাছে।
এ ব্যাপারে শেরপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রশীদ বলেন, আমার দেখা মতে অনেক অভিভাবক আছেন যারা তাদের সন্তানদের পড়ালেখা করাতে চান কিন্তু সন্তানরা করে না। এক্ষেত্রে হাসেম উল্টা। শত প্রতিকূলতার মাঝে তার চেষ্টা অন্য ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনুকরণীয়। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করা হলে তারা দেশ ও সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।