আমদানি করে ডিমের দাম কমাতে চাইলে উল্টো আরও দাম বাড়বে। তখন ১২ টাকার ডিম ২০ টাকায় খেতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্রিডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট আনোয়ারুল হক।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) আয়োজিত কর্মশালায় এ কথা বলেন তিনি। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইআরএফের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মৃধা। সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
তিনি বলেন, বর্তমান সংকট দূর করতে গিয়ে ডিম আমদানি করা হলে প্রান্তিক খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়বে। খামার বন্ধ করে দেবে, দেশীয় উৎপাদন কম যাবে। এর ফলে ভোক্তাদের একটি ডিম ২০ টাকায় কিনতে হবে।
আনোয়ারুল হক বলেন, বর্তমানে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ডিমের উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে দিয়েছে ১০ টাকা ৫০ পয়সা। তার সঙ্গে ৫ শতাংশ মুনাফায় বিক্রি করার নির্দেশনা দিয়েছে খামারিদের। সব মিলিয়ে ডিম ১২ টাকা বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা সরকারের এই নির্দেশনা মানব। আমরা চাই- ভোক্তারা ১২ টাকায় ডিম পাক। বছরের পর বছর লাভ-লস দিয়ে ব্যবসায় টিকে আছি। আমরা যেন এই ব্যবসায় টিকে থাকতে পারি।
হঠাৎ করে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার পেছনে কোনো সিন্ডিকেট নেই বলে দাবি করেন বিএবি নেতারা। তারা বলেন, মুরগির ফিডের দাম না কমালে ডিমের উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব না। এজন্য ফিডের আমদানি মূল্য কমানোর দাবি জানাই।
‘সিন্ডিকেটের খপ্পরে ডিম-মুরগির বাজার’- বক্তব্যটিকে অপপ্রচার বলে দাবি করেন বিএবি’র সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, লেয়ার মুরগির চাহিদা ১১ লাখ থেকে কমে হয়েছে সাড়ে ৯ লাখ। ডিম-মুরগির বাজারে সিন্ডিকেট! এমন অপপ্রচার ছড়ানোর কারণে বিভ্রান্তি দিন দিন আরও ঘনীভূত হয়েছে। তাছাড়া ‘প্রান্তিক খামারি’ বনাম ‘করপোরেট খামারি’র বিতর্ক সৃষ্টির মাধ্যমেও দেশীয় খামারি ও উদ্যোক্তাদের অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অপচেষ্টা হচ্ছে।
ডিম-মুরগি আমদানি করা হলে তা দেশেরই ক্ষতি করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একদিন বয়সী ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার সাপ্তাহিক চাহিদা ছিল প্রায় ১ কোটি ৭০-৮০ লাখ, বর্তমানে তা ১ কোটি ৩০ লাখে নেমে এসেছে।
অনুষ্ঠানে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, বর্তমানে দেশের ডিম মুরগির বাজারের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ প্রান্তিক খামারিদের অংশ। আর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করপোরেট ব্যবসায়ীদের হাতে। এ অবস্থায় কিভাবে করপোরেট ব্যবসায়ীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করবেন? আমদানিনির্ভর কাঁচামালের ফলে দেশে পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়েছে। তাই দাম বেড়েছে মুরগি আর ডিমের।
অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, গত তিন বছরে পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। এই দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে মুরগির বাজারে। তার পরও খামার পর্যায়ে এক কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম পড়ে ১৪৫ টাকা। কিন্তু ভোক্তাকে কেন ২০০ টাকায় খেতে হয়? এ জন্য দায়ী মধ্যস্বত্বাভোগীরা। তারাই এই অযৌক্তিক দাম বাড়াচ্ছে। মাঝখানে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কারা নিয়ে যাচ্ছে সেটি সরকারকে খুঁজে দেখতে হবে।