মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে স্থানীয় হাট বাজারগুলোতে মিলছেনা কাঙ্খিত দেশীয় মাছ। বর্ষাকে মাছের ভরা মৌসুম ধরা হলেও এই অ লের বড় বড় মাছের বাজারে পর্যাপ্ত মাছের আমদানী হচ্ছেনা। দেখা মিলছেনা নদীর মাছেরও। আর যে সব মাছ পাওয়া যাচ্ছে অতিরিক্ত দামের কারণে বাজার থেকে শূণ্য হাতে ফিরতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।
এসব মাছ মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্মবিত্ত পরিবারের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। ভরা মৌসুমে খালে-বিলে কই, শিং, শোল, গজার, রুই, কাতল, পুঁটি, খলিসা টেংরাসহ দেশীয় প্রজাতির এসব মাছ বিলুপ্তির পথে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে নিষিদ্ধ চায়না দোয়াইর/ম্যাজিক চাই, কারেন্ট জাল, ভেসালকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
তারা বলছেন, জোয়ারের পানি আসার শুরু থেকেই খাল-বিলসহ নদী-নালায় নিষিদ্ধ ফাঁদে অবাদে নিধন হচ্ছে পোনাসহ মা মাছ। বিভিন্ন খালের মোড়ে ও সেতুর মুখ আটকিয়ে অবৈধভাবে স্থাপন করা হচ্ছে ভেসাল। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অসাধু ব্যক্তিরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ভেসাল বসাতে উৎসাহীত করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। অপর একটি সূত্র জানায়, নাটিপতবাড়ী, ভাগ্যকুল, বালাশুর,বানিয়াবাড়ী, কামারগাঁও পাঁকা ব্রীজ, মান্দ্রা, কবুতরখোলা, ছত্রভোগসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক চায়না দোয়াইর তৈরীর কারখানা। কারখানাগুলোতে প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে হাজার হাজার নিষিদ্ধ চায়না দোয়াইর। এসব নিষিদ্ধ জাল তৈরীর সাথে জড়িত স্থানীয় জন প্রতিনিধিসহ এলাকার প্রভাবশালীরা।
সরেজমিন ঘুরে দেথা যায়, হাঁসাড়া, আলমপুর, শ্রীনগর-গোয়ালীমান্দ্রা, খোদাইবাড়ি-জুরাসার, বীরতাঁরা-তিনগাঁও, সিংপাড়া-কুসুমপুর, শ্যামসিদ্ধি, কোলাপাড়া, ষোলঘর, আটপাড়া ও ভাগ্যকুল-বাঘড়া এলাকার পদ্মা নদীর শাখা খালে ভেসাল স্থাপন করে পোনা মাছ নিধন করা হচ্ছে। বির্স্তীণ আড়িয়ল বিলেই প্রায় দুই শতাধিক ভেসাল স্থাপন করা হয়েছে। এসব ভেসালের পাশাপশি বিল জুড়ে পাতা নিষিদ্ধ চায়না দোয়াই ও কারেন্ট জাল। নিষিদ্ধ জালে মাছের প্রজনন এখন হুমকির মুখে। উপজেলার বিভিন্ন মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, স্থানীয় হাটবাজারে চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতারা মাছ পাচ্ছেন না। বাজারগুলোতে মাছের আমদানী তলানীতে। আমদানী কম হওয়ায় মাছের দামও অতিরিক্ত হাকানো হচ্ছে। এতে মাছ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে।
মো. সুজন নামে এক ব্যক্তি বলেন, বালাশুর চৌরাস্তা মাছের বাজারে ঘুরে দেখলাম। মাছের যে দাম এতে আমার পক্ষে পছন্দের মাছ কেনা সম্ভব হচ্ছে না। মাঝারি সাইজের ইলিশের জোড়া দাম চাইছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এখানে মিঠা পানির কোন মাছের দেখা পেলাম না। নদীর কিছু মাছের দেখা পেলেও এর দাম আকাশ চুম্বি। গাদিঘাটের সিরাজ মিয়া বলেন, এই সিজনে বিল এলাকায় প্রচুর পরিমাণে মাছের আমদানী হতো। তবে এ বছর বিলেও তেমন কোন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। কুকুটিয়া এলাকার মৎস্যজীবী সুমন দাস বলেন, বাজারে দেশীজাতের মাছের আমদানী খুবই কম। খালে-বিলে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানী কম হওয়ায় মাছের বাজার চড়া। স্থানীয় আড়তগুলোতে চাষী মাছের বিকিকিনিও কম হচ্ছে।
সচেতন মহল মনে করছেন, মাছের প্রজননের সময় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিষিদ্ধ জাল/ফাঁদ দিয়ে মা মাছ ও পোনা নিধন করায় দেশীয় মাছ দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। এসব মাছের বৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য সকলের সচেতন হতে হবে। তা না হলে কালের বিবর্তণে একদিন দেশীয় জাতের মাছ বিলুপ্তির পথে যাবে।
এ ব্যাপারে শ্রীনগর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার বসাক জানান, অবৈধভাবে পোনা মাছ নিধন করা অপরাধ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও খুব শীঘ্রই মৎস্য অভিযান চালানো হবে। এর আগে বিভিন্ন ইউনিয়নে মা-মাছ ও পোনা মাছ নিধন থেকে বিরত থাকার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও চায়না দোয়াইর জব্দ করা হয়েছে।