মৌলিভীবাজারের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা কুলাউড়া থানার কর্মধা ইউনিয়নে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট সোয়াব উগ্রবাদী অভিযান শেষ করেছে। এ সময় ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠনের ১০ সদস্যকে আটক করা হয়। শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল ১১টায় সিটিটিসি প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থল এলাকায় অভিযান শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।
তিনি জানান, বাংলাদেশে যেসব নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আছে সেগুলোর বাইরে এটি একটি নতুন সংগঠন, যার নাম ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’। কুলাউড়ার এই গহীন পাহাড়ে নতুন এই উগ্রবাদী সংগঠনটি ৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করে এখানে আস্তানা গড়ে তোলে। মূলত তাঁরা এখানে সমবেত হয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশে প্রশিক্ষণ সামগ্রী বিস্ফোরক দ্রব্য ইত্যাদি সংগ্রহ করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে চেয়েছিল। এ ধরনের খবর পেয়ে ঢাকা থেকে একজনকে গ্রেফতার করে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ও সোয়াট টিমের ইন্টিলিজেন্স টিম গত সাত দিনে কুলাউড়া এলাকায় তাদের আস্তানা নিশ্চিত করে। পরে জেলা ও কুলাউড়া পুলিশের সহযোগিতায় সোয়াট টিম শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাত থেকে এই বাড়িটি ঘিরে রাখে। আজ ভোরে সোয়াট টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে বিনা বাধায় ছয়জন মহিলা ও চারজন পুরুষসহ ১০ জনকে আটক করে, এ সময় তাদের সাথে তিনটি শিশু বাচ্চাও ছিল। এদের হেফাজতে নেওয়ার পর জঙ্গি আস্তানায় ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৩ কেজি বিস্ফোরক ও ৫০টির মতো ডেটোনেটর যা দিয়ে গ্রেনেডসহ হাই এক্সপ্লোসিভ তৈরি করা হয়, নগদ তিন লক্ষ ৬১ হাজার টাকা, কয়েক বস্তা জিহাদি বই, বক্সিং ব্যাগ, বিপুল পরিমাণ খাদ্য দ্রব্য ও প্রশিক্ষণ সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে, কাউন্টার টেররিজম প্রধান বলেন এই সংগঠনের যে মূল ব্যক্তি তার নামও আমরা পেয়েছি, আশা করি তার পর্যন্ত পৌঁছাতে আমরা সক্ষম হবো।
আটক ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ টিমের সদস্যরা সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর ও বগুড়া এলাকা থেকে কুলাউড়ায় আসেন। কুলাউড়ার পূর্ব টাট্টিউলি বাজারের চা দোকানদার শফিক মিয়া জানান, ওই বাড়ির বাসিন্দারা প্রায় মাসখানেক আগে এখানে এসে নতুন বাড়ি করেছেন। তার দোকানে এসে অল্প বয়সের দুই পুরুষ নিয়মিত চা খেতেন। তারা বলেছিল, তাদের বাড়ি বগুড়ায়। নদী ভাঙনে তাদের বাড়ি চলে গেছে, তাই এখানে এসে বসতি করেছেন। আরও পরিবার আসবে।
আটককৃতরা হলেন- সাতক্ষীরার তালার উপজেলার নলতা গ্রামের ওমর আলীর ছেলে শরীফুল ইসলাম (৪০), তার স্ত্রী আমিনা বেগম (৪০), তাদের মেয়ে হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০), কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার কালনার আবুল কাশেমের ছেলে হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা এলাকার রসুলপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম (২২), তার স্ত্রী মেঘনা (১৮), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মাইজবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে রাফিউল ইসলাম (২২), পাবনার আটঘরিয়ার শ্রীপুর গ্রামের আব্দুস ছাত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম (২২), নাটোরের চাঁদপুর গ্রামের সোহেল তানজীম রানার স্ত্রী মাইশা ইসলাম (২০) ও বগুড়ার সারিয়াকান্দির নিজবলাই গ্রামের সুমন মিয়ার স্ত্রী সানজিদা খাতুন (১৮)।
এদিকে সোয়াট টিমের বোমা নিস্ক্রিয় টিমের সদস্যরা কর্মধা আসকরাবাদ ফুটবল খেলার মাঠে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক নষ্ট করেছে। এছাড়াও এ অভিযানে জেলা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা থেকে ইন্টিলিজেন্স টিম কাজ করেছে বলে সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, কুলাউড়ার এই গহীন পাহাড়ি এলাকায় মাসখানেক আগে ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি গ্রুপ বসতি স্থাপন করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ ও বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে সোয়াট টিমের ইন্টিলিজেন্স টিম এ অভিযান শুরু করে।