মোংলা পৌর শহরে জোর পুর্বক একটি বাড়ি দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে-১৩ জন রক্তাক্ত জখম হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার ১১ আগষ্ট সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শহরের ৭নং ওয়ার্ড পুর্ব শেহালাবুনিয়া জয়বাংলা সড়ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দখলের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করেছে মোংলা থানা পুলিশ। এরাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী সোহেল শেখ জানায়, স্থানীয় মৃত শেখ আব্দুল বারি’র মেয়ে জালিয়া জাহান ডালিয়ার কাছ থেকে ০.৩৬৪০ একর (১৪) কাঠা জমি ক্রয় করে ২০১২ সাল থেকে ওই জমিতে মাটি ভরাট ও ঘরবাড়ি তৈরি করে সেই থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত ছেলে মেয়ে ও পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছিলাম। কিন্ত ২০১৮ সালের শেষের দিকে সোনাইলতলা ইউনিয়নের আমড়াতলা গ্রামের মৃত ইলিয়াস হাওলাদার’র ছেলে সাইফুজ্জামান প্রিন্স হাওলাদার তার ক্ষমতার বলে অন্য এক শরিকের কাছ থেকে একটি ভুয়া দলিলে জমি ক্রয় করে বলে অভিযোগ সোহেলের। সে সময় থেকে বেশ কয়েকবার আমার বসতবাড়ি দখল করার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয় প্রিন্স সহ তার লোকজন। আমি এ সকল সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচাতে ও নিরাপদে বসবাস করার লক্ষে বাগেরহাট আদালতে ২০২০ সালে ১ নভেম্বর “মোকাম ল্যান্ড সার্ভে ট্র্যাইবুনাল” যার মামলা নং-১১৫২/২০ এবং গত ৩০ জুলাই বিবাদীর ভুয়া দলিল বাতিল প্রসঙ্গে দেঃ ১০/২৩ মামলা রুজু করি, যা আদালতে এখনও চলমান রয়েছে।
আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় পুনরায় আমার বাড়ি জোর পুর্বক দখলের জন্য ১১ আগষ্ট শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হঠাৎ এক থেকে দেড় শতাধিক লোক নিয়ে জয়বাংলা সড়কে আমার বসত বাড়িতে প্রবেশ করে লুটপাট, ভাংচুর ও ঘরে থাকা নারী ও শিশুদের মারধর করতে থাকে সাইফুজ্জামান প্রিন্স ও তার লোকজন। পরে ঘর থেকে সকলকে জোর পুর্বক বের করে দিয়ে বাড়ি দখলে নেয় প্রিন্স সহ তার সাথের লোকেরা। এসময় তিনি সহ তার পরিবারের সদস্য বাড়ি দখলে বাধা দিলে প্রিন্স ও তার দলবল সোহেরকে বেদরক মারধর করে। ঘরে অন্যান্য সদস্য তাকে বাঁচাতে গেলে তাদেরও মারধর ও ঘরে লুটপাট ও ভাংচুর চালায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এতে সোহেল শেখ, তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম, বোন মিনারা বেগম, মরিয়ম বেগম, ভাই জসিম ভুইয়া, তুহিন শেখ ও খালা রহিমা বেগম, মা-আনজিরা বেগম ও ৬ বছরের শিশু সন্ত্রান মেহমেদ রক্তাক্ত জখম করে।
অন্যদিকে সাইফুজ্জামান পিন্সের সোবাহান, আবুল কাশেম, সুমি বেগম ও মোঃ রাসেল সহ উভয়ের ১৩ জন আহত হয়। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে সোহেল শেখ ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমের অবস্থা আঙ্কাজনক। এনিয়ে আদালতে দুইটি মামলাও চলমান থাকলেও তা অবমাননা করে জোর পুর্বক বাড়ি দখল করেছে বলে জানায় ভুক্তভোগী সোহেল ও তার পরিবারের স্বজনরা।
অপরদিকে, সাইফুজ্জামান প্রিন্স’র ছোট ভাই টিপু হাওলাদার বলেন, ভাই প্রিন্স ও আমাদের ক্রয়কৃত বাড়িতে দীর্ঘদিন সোহেল সহ তার লোকজন ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিল। আজ সেই বাড়িটি ছেড়ে দেয়ার জন্য আমরা জিজ্ঞেস করতে গেলে আমাদের উপর হামলা ও মারধর করেছে সোহেল সহ তার লোকজন। জোর পুর্বক দখলে রয়েছে তারা, এখন আমাদের বাড়ি ছাড়তে চাচ্ছেনা। এ ব্যাপারে আমরা সকলের কাছে সুবিচার চাই।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র মেডিকেল অফিসার ডাঃ মেহদী হাসান বলেন, সকালে বেশ কয়েকজন লোক মারামারীর ব্যাপারে আহত হয়ে হাসপাতালে আসে। তাদের এখানে ভর্তি করা হয়েছে। তবে অবস্থা অবনতি হলে খুলনা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে।
মোংলা-রামপাল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার বলেন, জয়বাংলা সড়কে জোর পুর্বক বাড়ি দখল ও মারধর করার সাথে জড়িত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া, এ ঘটনা যেন পুনরাবিত্তি না ঘটে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামরার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানায় পুলিশের এ কর্মকর্তা।
একটি কুচক্রি মহল গত ৬ মাসে মোংলা পৌর শহরে ৫টি বসত বাড়িতে দখল প্রক্রিয়া চালিয়ে একটি দখল করতে পারলেও ৪টি বাড়ি দখলে র্ব্যাথ হয়েছে, যা নিয়ে থানা ও আদালতে মামলা হয়। কিন্ত আদালতে মামলা চলমান থাকলেও জমি ও বাড়ি নিয়ে আতংকিত পৌরবাসী।