বর্তমানে ঢাকার সবগুলো সরকারি হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার বেশি ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও এখন প্রতিদিন যত রোগী ভর্তি হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই ডেঙ্গু আক্রান্ত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলাতেই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশে যে সময়কালকে ডেঙ্গুর মৌসুম বলে ধরা হয়, তার আগেই আক্রান্তের সংখ্যা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
বিশেষ করে ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ঢাকা শহরের বাসিন্দা।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলছেন, ‘’তিনদিন আগে জ্বর এসেছিল। এরপর বমি শুরু হওয়ায় হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখালে ভর্তি হতে বলে। আমার আশেপাশে আরও যারা রয়েছে, তারা সবাই ডেঙ্গু রোগী।‘’
বেশিরভাগ রোগীকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, যশোর, বগুড়ায় খবর নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত নতুন নতুন রোগী ভর্তির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলছেন, ‘’ঢাকার বাইরে অধিকাংশ মানুষ প্রথমবারের মতো আক্রান্ত হচ্ছে, ফলে খুবই খারাপ ধরনের রোগীর সংখ্যা শহরের তুলনায় বা ঢাকার তুলনায় কম। তবে গত দুই বছরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু এভাবে যদি ডেঙ্গু ছড়াতে থাকে, তাহলে আগামীতে আমরা গ্রামাঞ্চলেও আরও খারাপ পরিস্থিতি দেখতে পাবো। কারণ আগামীকে গ্রামাঞ্চলে মানুষজন দ্বিতীয়বারের মতো আক্রান্ত হবে। তখন সেখানেও পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।‘’
শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতেই সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে এখন ৫৩টি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এসএসএসএমসি ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল, বেসরকারি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে অনেক রোগী ভর্তি রয়েছে। বড় হাসপাতালগুলোয় জায়গা না হওয়ায় অনেক রোগী মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে তথ্য দেয়া হয়, তাতে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত তথ্য আসছে না বলে খোদ কর্মকর্তারাই স্বীকার করেছেন। কারণ যারা আক্রান্ত হয়ে ঘরে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের তথ্য এখানে যুক্ত হয়না। এমনকি সব বেসরকারি হাসপাতালের তথ্যও এখানে নেই।
গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি সেমিনারে বক্তারা বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে এখন বিশেষ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি হিসাবে ঘোষণা করার সময় এসেছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, আশঙ্কাজনকভাবে ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও এখনো বিশেষ পরিস্থিতি ঘোষণা করার মতো সময় এসেছে বলে তারা মনে করেন না।
ডেঙ্গু হলে কখন হাসপাতালে যেতে হবে
চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দেহে জ্বর দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। এরপর পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হলে রোগীর অবস্থা বুঝে চিকিৎসক ওষুধ বা হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেবেন।
ডা. তৌফিক আহমেদ বলছেন, সব ধরনের ডেঙ্গুতেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। সাধারণ জ্বরের সাথে অন্য কোন উপসর্গ না থাকলে বাড়িতে বিশ্রামে থেকে আর ওষুধ খেয়েই সুস্থ হওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। তবে প্রচুর তরল খাবার, ডাবের পানি, লেবুর শরবত ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।‘’
ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ জ্বর। সাধারণত ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। জ্বরের সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথা ব্যথা, চামড়ায় র্যাশ বা ফুসকুড়ি ওঠা, চোখে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
"রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে, ডেঙ্গুর সঙ্গে সঙ্গে যদি পেটে ব্যথা বা বমি হয়, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি বা লিভারের সমস্যা, অন্তঃসত্ত্বা ইত্যাদি থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া ভালো। বিশেষ করে বমি বা খিঁচুনি হলে, নাক, মলদ্বার, মাড়ি দিয়ে বা প্রস্রাবের সাথে রক্তপাত হলে কোনরকম দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে," বলছেন ড. আহমেদ।
তিনি বলছেন, ডেঙ্গু জ্বর কমে গেলেও অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। তাহলে পরবর্তীতে অনেক জটিলতার এড়ানো যেতে পারে।
অনেক সময় রোগীর রক্তে প্লেটলেট কাউন্ট কমে গেলে বা রক্তপাত বেশি হলে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীর রক্তের গ্রুপের সম্ভাব্য রক্তদাতার খোঁজ বা যোগাযোগ করে রাখা যেতে পারে। সূত্র: বিবিসি বাংলা