চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরেন্দ্র অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামে পাঁকা সড়ক না থাকায় ভোগান্তিতে ছিল কয়েক হাজার বাসিন্দা। পাঁকা সড়ক পেতে কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে পাড়ি দিয়ে যেতে হতো। সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের ধীনগর হতে জলাহার পর্যন্ত এই সড়কের কাজ শুরু হচ্ছে। বুধবার (১৯ জুলাই) ২.৩ কিলোমিটার পাঁকা সড়কের কাজের উদ্বোধন করেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ।
দুই কিলোমিটার রাস্তা নির্মানের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় খুশি ও উচ্ছ্বসিত স্থানীয়রা। স্থানীয় ষাটোর্ধ আজিজুর রহমান বলেন, প্রায় ৪০ বছর থেকে জলাহার গ্রামে বসবাস করি। কিন্তু শহরে যেতে হেঁটে পাড়ি দিতে হয় দুই কিলোমিটার পথ। বর্ষার সময়ে কাঁদায় লুটোপুটি খেতে হয়। আর অন্যান্য সময়ে ধুলায় অতীষ্ট হয় জীবন।
স্কুলছাত্র আসমাউল হক জানায়, স্কুল যেতে হেঁটে যেতে হয়। কাঁদার সময়ে পিছলে অনেকবার পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে এই এলাকার অনেক শিক্ষার্থী। এমনকি পোশাক নষ্ট হওয়ায় আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। রাস্তাটি পাঁকা হয়ে গেলে আর এমন ভোগান্তি পোহাতে হবে না। অনেক উপকার হলো আমাদের জন্য।
গৃহবধূ সায়েমা বেগম বলেন, এখানকার অসুস্থ রোগীদের জন্য আমাদেরকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। রোগী নিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য পুলসিরাত পার হওয়ার সমান কষ্ট-দুর্ভোগের ছিল। কাঁচা সড়ক হওয়ায় কোন যানবহন চলাচল করে না। ফলে দুই-তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যেতে হতো। পাঁকা রাস্তা হয়ে গেলে এই কষ্ট থাকবে না।
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাসিন্দা হাসদা টুডু জানান, এই বরেন্দ্র এলাকায় মূলত আদিবাসীদের বসবাস। আমরা এমনিতেই অনেক পিছিয়ে। চলাচলের রাস্তায় না থাকায় একপ্রকার বিছিন্ন ছিলাম। সরকারের এই উদ্যোগের ফলে আমাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কম সময়ে ও সহজেই জেলা শহর ও স্থানীয় বাজারে যেতে পারব।
উদ্বোধন করে স্থানীয় সাংসদ আব্দুল ওদুদ বলেন, নির্বাচনের আগে আ.লীগের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে। এই সড়কের কাজ শেষ হলে জলাহার, জৈবনকৈবন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এতোদিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, রাস্তাটি পাঁকাকরনের৷ আজকে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়ন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই এলাকায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস বেশি। বরেন্দ্র এই অঞ্চলে পানির তীব্র সংকট রয়েছে। সড়ক নির্মানের মতো করেই পানির সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক ৮টি বাড়ির জন্য একটি করে পানির পাম্প নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাহার আলী প্রাং, ঝিলিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর ইফতেখার আহমেদ রঞ্জুসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।