প্রকাশ: বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩, ৬:৪৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ভিসা শাখার বিতর্কিত উপ-পরিচালক নাদিরা আক্তারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও দু’ধাপ উপড়ের পদে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন। উত্থাপিত অভিযোগ সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তিনি এই দপ্তরের ইতোপূর্বে উপপরিচালক পাসপোর্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন কালীন ভুয়া ও জাল এনওসির উপর ভিত্তি করে মোটা অংকের বিনিময়ে সাধারণ পাসপোর্টকে অফিসিয়াল পাসপোর্ট রূপান্তরিত করেন।
পাসপোর্ট নং ওসি ২১২৫৮৯৯ যা স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও প্রমাণিত হয়। কিন্তু অদৃশ্য শক্তিবলে তিনি এহেন গুরুতর অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান। অথচ এই অভিযোগটি সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩ (খ) ও (ঘ) বিধির পরিপন্থী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৫ (গ) ও (ঙ) মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তা সত্ত্বেও গত ১৪ ডিসেম্বর ২০ ইং তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক অফিসাদেশে তাকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। একই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইতোপূর্বে গত ২০১৭ সালে একজন পরিচালক একজন সহকারী পরিচালকসহ ৩জন অফিস কর্মচারী মোট পাঁচজনকে চাকুরীচ্যুত করা হয়।
প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা যায় নাদিরা আক্তারের বিরুদ্ধে তদন্ত চলাকালীন তিনি ২০১৭ সালে চাকুরীচ্যুত ঐ ৫ কর্মকর্তা কর্মচারীর শাস্তির নথি গায়েব করে রাখার কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ ইতোপূর্বকার কোন রেকর্ড না পাওয়ায় বিভ্রান্ত হন। সম্প্রতি ছামিউল আলম প্রধান নামের একজন আইনজীবি তথ্য অধিকার আইনে উল্লেখিত জাল এনওসি’র ৫টি অনুলিপি চেয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি পাঠালে অধিদপ্তর থেকে মূল নথি খুঁজে পাওয়া গেছে বলে জানায়। মূল নথিতে অনুসন্ধানে দেখা যায় ড়ব২১২৫৮৯৯ নং পাসপোটটির আবেদনপত্র নাদিরা আক্তার গ্রহণ করেন এবং পাসপোর্ট ইস্যুর আদেশ দেন। অথচ একই অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ সালে ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরীচ্যুত করা হয়।
উল্লেখ্য ২০১৪ সালের এক শ্রেণীর অসাধু লোক ভুয়া এনওসির মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবী সেজে অফিসিয়াল পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ গমন করে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছিল। এরকম অসংখ্য সাধারণ জনগণ সরকারি চাকরির পরিচয়ে এনওসি দিয়ে আফিসিয়াল পাসপোর্ট করে বিদেশ গমন করেছে এবং বিভিন্ন দেশে তাদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছ। তুরস্কের পুলিশ কর্তৃক আটকৃত এরকম এক ব্যক্তির একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার এই ভুয়া এনওসিধারীদের পাসপোর্ট এর পাওয়ার বিষয়টি অনুসন্ধান করে এবং অনুসন্ধানের তৎকালীন ঢাকার বিভাগীয় পরিচালক জনাব মুন্সি মুহিত ইকরামের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়।
যার ফলশ্রুতি তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং একই সময় একজন সহকারী পরিচালক জামান হোসেনকেও একই অপরাধে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি তদন্ত ও কার্যক্রম শুরু করে ওই দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার পাশাপাশি আরো এক নারী কর্মকর্তা তৎকালীন উপ-পরিচালক জনাব নাদিরা আক্তারের সরাসরি সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়। সেই প্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয় তদন্তে জনাব মুন্সি মোহিত একরাম সাবেক পরিচালক বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস ঢাকা এবং তার অধীনস্থ সহকারি পরিচালক মোঃ জামান হোসেন এই দুইজনকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয় কিন্তু কিন্তু অন্য আরেকজন অভিযুক্ত উপ-পরিচালক জনাব নাদিরা আক্তার তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। নাদির আক্তার তদন্ত টিমের কাছে অনেক অসত্য তথ্য দিয়েছে এবং সঠিক কাগজপত্র তাদেরকে প্রোভাইড করেনি যেমন পাঁচটি নথি তলফ করা হয়েছিল যে পাঁচটি নথি নাদিরা আক্তার জমা করে অফিসিয়াল পাসপোর্টের জন্য রিকমেন্ড করেছিলেন পরবর্তীতে ওই নথিগুলি রেকর্ড পত্র চাওয়া হলে নাদিরা আক্তার জানান যে এই নথিপত্র গুলি সঠিক না এবং এর কাগজপত্র কোথাও পাওয়া যায়নি অথচ পাসপোর্ট অফিস থেকে একটি নথির সঠিক পাওয়া গেছে মর্মে পত্র দিয়েছেন যেটা নাদিরা আক্তারের জমা করা ফাইল কিন্তু তিনি অন্তকারি কর্মকর্তাদের কাছে সেটি উপস্থাপন না করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করেছেন। একই ঘটনায় জনাব মুন্সিময়ী একরাম এবং জামাল হোসেনের ক্ষেত্রে ঘটেছে এবং তাদের নথিগুলি প্রমাণিত হয়েছে কিন্তু নাদিরা আক্তার যে সকল আবেদনকারীদেন সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে পাসপোর্ট পাইয়ে দেওয়ার জন্য ফরম জমা করেছিল উনি ওই তথ্য গোপন করে তদন্ত কমিটির কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করতে সক্ষম হয়েছে অথচ পাসপোর্ট আফিস থেকে চিঠি লিখে জানানো হয়েছে যে এই রেকর্ড পাওয়া গেছে তা তিনি তদন্ত কমিটির কাছে হস্তান্তর করে নাই।
প্রাপ্ত তথ্য মতে আরো জানা যায়, তিনি ২০০১ সালের এপ্রিলে এই অধিদপ্তরে যোগদান করার পর দীর্ঘ ২২ বছরে ঢাকায় কর্মরত আছেন। সাবেক মহাপরিচালকগণের সাথে সখ্যতা থাকার কারণে কোনদিনই তার ঢাকার বাইরে পোস্টিং হয়নি। বর্তমানে তিনি প্রধান কার্যালয়ে ভিসা শাখার উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার পরবর্তী পদোন্নতি পদ হচ্ছে অতিরিক্ত পরিচালক। কিন্তু তিনি ঐ পদে পদোন্নতি না নিয়ে সরাসরি পরিচালক পদে পদোন্নতি নেয়ার জন্য উচ্চ মহলে দেনদরবার অব্যাহত রেখেছেন। এহেন দু’ধাপ উপরের পদে পদোন্নতির বিষয়টি সম্পূর্ন অনিয়মতান্ত্রিক বলেও একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন। তাদের মতে এই অনিয়মতান্ত্রিক পদোন্নতি দিলে অধিদপ্তরের চেইন অফ কমান্ড ভেঙ্গে পড়বে। সূত্র মতে এই উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে দুদকে অভিযোগ দায়ের হলেও তিনি মোটা অংকের বিনিময়ে অব্যাহতি পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সমূহের মধ্যে রয়েছে অফিসিয়াল পাসপোর্ট কেলেঙ্কারি করে টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট প্রদান, উত্তরা অফিসের দায়িত্ব পালনকালে অনিয়মের মাধ্যমে পাসপোর্ট প্রদান করে প্রতিদিনই ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা হারে ঘুষ আদায়, প্রতাপশালী বর্তমান ভিসা শাখায় যোগদানের পর এনভিআর প্রতি ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা হারে ঘুষ প্রবর্তন। প্রতিমাসে আফ্রিকান মাদক চোরাকারবারীদেরকে এনভিআর এর মাধ্যমে থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন এবং এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে প্রচার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তিনি ইতোপূর্বে কলেজ শিক্ষক স্বামীর কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত বলে চিকিৎসার নামে পাসপোর্ট অফিস থেকে ৩ (তিন) কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে দীর্ঘ ৯ (নয়) মাস ভারত ও সিঙ্গাপুরে অবস্থান করেন। বৈশ্বিক মান্দার সময় অধিদপ্তরের কেউ বিদেশ যেতে না পারলেও তিনি ২বার সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেন। মালয়েশিয়াতে তিনি সেকেন্ডহোম করেছেন। দুর্নীতিতে রেকর্ড সৃষ্টিকারী এই উপপরিচালক এত কিছুর পরও ভিসা শাখায় পোস্টিং নিয়ে এনভিআর’র নামে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা অবৈধ উপার্জন করেও থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবৈধ অর্থের জোরে দোর্দান্ত প্রভাবশালী এই উপপরিচালক দু’ ধাপ উপরের পদে পদোন্নতির বিষয়টি গোটা অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে তার পদোন্নতি বিবেচনার পূর্বে ইতোপূর্বকার ধামাচাপা দেয়া অনিয়মের বিষয়টি পুনরায় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার যোগাযোগ করেও কারো বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।