পার্বত্য রাঙামাটি জেলায় বর্তমান সময়ে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অত্যন্ত দূর্গমতা এবং অরন্য নির্ভর রাঙামাটির ভারত সীমান্তবর্তী বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় প্রতিদিনই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুসারে গত দুই মাসে ১৫শ জনেরও অধিক রোগী ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে বিগত মাসগুলোতে রাঙামাটিতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা না বাড়লেও চলতি সপ্তাহে রাঙামাটি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার একদিনেই রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডাঃ নীহার রঞ্জন নন্দী। তিনি জানিয়েছেন, চলতি মাসে পুরো রাঙামাটি জেলায় সর্বমোট ২৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে।
সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, সারাদেশের ন্যায় রাঙামাটিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি নাপেলেও অত্রাঞ্চলে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬ সালের পর থেকে এপর্যন্ত কোনো রোগী মারা যায়নি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে।
আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্বোচ্চ বড় জেলা রাঙামাটির সাথে লাঘোয়া ভারতের মিজোরামের বর্ডার এলাকাগুলোতে ম্যালেরিয়ার আক্রান্তের হার বেশি মন্তব্য করে সিভিল সার্জন ডা: নীহার রঞ্জন নন্দী জানিয়েছেন, আমাদের বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলাগুলোতে আক্রান্তের হার সবচাইতে বেশি। এসব উপজেলার অধিকাংশ এলাকা ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় রাঙামাটিতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ রোগী উক্ত জায়গাগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
রাঙামাটি সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, চলতি বছরের জুন থেকে এখন(১৮ জুলাই মঙ্গলবার) পর্যন্ত রাঙামাটি জেলায় সর্বমোট ১৫৩০ জন রোগী ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
এদিকে, অন্যতম পর্যটন শহর রাঙামাটিতে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া রোগের বিস্তার ঠেকাতে রাঙমাটি পৌরসভার উদ্যোগে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মশক নিধন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া যেসব স্থানে এডিস মশা ডিম দেয়, তা পরিষ্কার করা হচ্ছে।
রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী বলেন, ম্যালেরিয়া রোগী দেশের ২৯ ভাগ রাঙামাটিতে। যার মধ্যে দুর্গম এলাকায় সবচেয়ে বেশি। ইতোমধ্যে সাড়ে তিন লাখ মশারি বিতরণ কর হয়েছে। ব্র্যাকের সহযোহিতায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থসেবা কাজ চলমান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গুর রক্ত পরীক্ষা আগামী ১ মাস ফ্রিতে করা যাবে। জ¦র হলেই যেন সবাই রক্ত পরীক্ষা করায়। এবং বাড়ির আসে পাশে পরিষ্কার করার অনুরোধ জানান তিনি।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ শওকত আকবর খান জানিয়েছেন, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের রোগী তেমন একটা বেশি নাই এবং বর্তমানে হাসপাতালে ১৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে, তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠা কয়েকজন শীঘ্রই বাসায় চলে যাবে। তিনি জানান, মূলত রাঙামাটির দূর্গম উপজেলা গুলোতে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দূর্গমতার কারনে চিকিৎসা সেবা পেতে একটু সময় লাগছে।