বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান। এমনকি সংকটের জেরে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতেও পড়েছিল দেশটি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল বিপুল অংকের ঋণ সহায়তা। অবশেষে দেশটিকে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের জরুরি (বেইলআউট) ঋণ প্রদানের বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক সংকট-কবলিত পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) মার্কিন ডলারের বেলআউটের অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বোর্ড। এতে করে দেশটি এখন প্রায় ১২০ কোটি ডলার হাতে পাবে। বাকিটা আগামী নয় মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে দেওয়া হবে পাকিস্তানকে।
বিবিসি বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দেশটি ঋণ খেলাপি হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল এবং অর্থনৈতিক সংকট এতোটাই প্রকট আকার নিয়েছিল যে, এক মাসের আমদানির জন্যও পাকিস্তানের হাতে প্রয়োজনীয় বিদেশি মুদ্রা পর্যাপ্ত পরিমাণ ছিল না।
তবে চলতি সপ্তাহে দীর্ঘদিনের মিত্র সৌদি আরব থেকে ২০০ কোটি ডলার পেয়েছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টায় এই বেলআউট প্যাকেজটি একটি বড় পদক্ষেপ।
তিনি বলেছেন, ‘এই প্যাকেজ অতিজরুরি থেকে মধ্যমেয়াদী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। একইসঙ্গে এটি পরবর্তী সরকারকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেও পথ নির্ধারণের জন্য আর্থিক সুরক্ষা দেবে।’
মূলত পাকিস্তানের সংকটাপন্ন অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদী গুরুতর সমস্যাগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে আট মাসের কঠিন আলোচনার পর দেশটির সঙ্গে আইএমএফের এই চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছিল। আর এর মধ্যে ঋণদাতাদের ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল পাকিস্তান।
এছাড়া পাকিস্তানের বেশিরভাগ অংশ গত বছর বিধ্বংসী বন্যার কবলে পড়েছিল। এতে অর্থনৈতিক সংকট আরও বৃদ্ধি পায় এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাসহ দেশের অন্যান্য প্রধান সমস্যাও এর সঙ্গে যুক্ত হয়। আর এর জেরেই সংকট প্রকট আকার ধারণ করে পাকিস্তানে।
বিবিসি বলছে, এর আগে সৌদি আরব গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার জমা করে বলে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার জানান। মধ্যপ্রাচ্যের তেল-সমৃদ্ধ এই দেশটি চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই অর্থের প্রতিশ্রুতি দিলেও আইএমএফের বেলআউট চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তা হস্তান্তর বন্ধ করে দিয়েছিল।
সৌদি আরবের দেওয়া এই অর্থ এবং আইএমএফের সঙ্গে হওয়া চুক্তি পাকিস্তানের বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে সহায়তার জন্য আরও তহবিলের পথ উন্মুক্ত করবে। আর এই মাসের শেষ নাগাদ পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে জানিয়েছেন ইসহাক দার।