মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ভ্যাকসিন নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কারসাজি
উৎপল দাস
প্রকাশ: বুধবার, ১২ জুলাই, ২০২৩, ৮:২৭ পিএম আপডেট: ১২.০৭.২০২৩ ৮:২৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

আফ্রিকার গবাদি পশুর জন্য তৈরি করা ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন আমাদানী করা হচ্ছে বাংলাদেশে। এ সম্পর্কে জাতিসংঘের বিশ্ব প্রাণি স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউওএএইচ’র সুস্পষ্ট গাইডলাইন থাকলেও, মানা হচ্ছে না তা। অভিযোগ উঠেছে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের অসাধু কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানজে করে ওয়ানফার্মা নামের একটি কোম্পানী এই ভ্যাকসিন আমদানি করে, সেটি দেশীয় বাজারে ছাড়ছে। এতে করে আফ্রিকার দেশগুলোয় যে ধরনের রোগ দেখা দেয়, বাংলাদেশের গরুরও সে ধরণের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

জানা গেছে, জাতিসংঘের বিশ্ব প্রাণি স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউওএএইচ'র নীতিমালা না মেনে ওষুধ প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে দেশে গরুর ক্ষুড়া রোগের ওরাল ভ্যাকসিন-এফএমডি আমদানি ও বিপনন করা হচ্ছে। যা এ দেশে আমদানি নিষিদ্ধ। ডব্লিউওএএইচ'র নীতিমালা অনুযায়ী এটি শুধুমাত্র আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য বা তৈরি করা হয়। কারণ বিশ্বজুড়ে গরুর ক্ষুড়া রোগ নিরাময়ে পরিবেশ ও জলবায়ু অনুযায়ী আফ্রিকা, এশিয়া, মধ্য এশিয়া, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলের জন্য পৃথক পৃথক ভ্যাকসিন উৎপাদন ও ব্যবহার বিধি নির্ধারণ করেছে বিশ্ব প্রাণি স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউওএএইচ। 

ভিন্ন অঞ্চলের ভ্যাকসিন আমদানি ও বিপননের ফলে দেশের প্রাণী সম্পদে এর দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে আফ্রিকান দেশসমূহের ভাইরাসের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে এখানকার পশু সম্পদে। ছড়িয়ে পরতে পারে দেশের সকল গবাদি পশুতে। সেই সঙ্গে মানবদেহেও দেখা দিতে পারে, অজানা কোনো না কোনো রোগের উৎস। 

এদিকে ওয়ান ফার্মার আমদানিকৃত ভ্যাকসিনটি সরকারি পর্যায় সরবরাহ করা হয় জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে। এর উৎপাদক কোম্পানী হলো রাশিয়ার আরিয়াহ। যারা আন্তর্জাতিক ভেটনারি ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান। তবে বাংলাদেশে আমদানিকৃত তাদের ওরাল ভ্যাকসিনটি কোনোভাবেই ডব্লিউওএএইচ'র গাইডলাইন মেনে উৎপাদিত টিকা নয়। শুধু তাই নয়, ভ্যাকসিনটি প্রথম পর্যায় ওরাল হিসেবে আমদানি করা হলেও পরবর্তিতে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর ওরাল শব্দটি কেটে ‘ইনজেক্টেবল’ করা হয়। কিন্তু কাগজে পরিবর্তন ঘটলেও ভ্যাকসিনটি থেকে যায় তরল বোতলজাতকৃত ওরাল। আন্তর্জাতিক ওষুধ নীতিমালা মতে, মুখে খাওয়ার ওষুধ আর ইনজেকটেবল ফর্মূলা কোনোভাবেই এক নয়। 

এ অবস্থায় সম্প্রতি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে এফএমডি নামক ওই ভ্যাকসিন আমদানী ও বিপণন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। সংস্থাটির দাবি বাংলাদেশের জন্য এফএমডি ভ্যাকসিন কি ধরনের ভাইরাস দ্বারা তৈরি করা হবে, তা বিশ্ব প্রাণি স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমাদের দেশের প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের চাহিদা অনুযায়ী এশিয়া-১ ভ্যাকসিনটি দেশে উৎপাদন ও টেন্ডারের মাধ্যমে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। কিন্তু ওয়ানফার্মা লিমিটেড নামক কোম্পানিটির রেজিষ্ট্রেশনকৃত এফএমডি ভ্যাকসিন পোল-৪ (Vaccine Pool-4 (O. A. Sat 1.2.3), Pool-5, (O.A. Sat 1,2) Pool-6 (O. A. Sat 1.2.3) ব্যবহৃত ভাইরাস রয়েছে, যা বাংলাদেশের প্রাণীসম্পদ ও জনস্বাস্থের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর। 
কারণ হিসেবে তারা বলছে, Sat 1.2.3 virus সমূহ শুধুমাত্র আফ্রিকা মহাদেশে মহামারি আকারে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার উপর রোগ বিস্তার করলে সেখান থেকে উৎপাদিত ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করে। সেই জীবন্ত ভাইরাসগুলো যদি Pool- 1 & Pool-2 তে ব্যবহার করা হয়, তাহলে বাংলাদেশে আফ্রিকান ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে যেতে পারে। 

এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো.সালাউদ্দিন বলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাজ রেজিস্ট্রেশন দেওয়া। আমরা কোম্পানিটিকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদনের প্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রেশন দিয়েছি। এখন তারা যা আমদানি করছে সেটি দেখার দায়িত্ব প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের। কেননা এ বিষয়ে তাদের টেকনিক্যাল টিম রয়েছে। তিনটি বিশেষজ্ঞ টিম বিষয়টি পর্যালোচনা করে ভ্যাকসিনটি কিনেছে, সুতরাং এর ভালোমন্দের বিষয়টি তারাই ভালো বলতে পারবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

এফএমডিকে মারাত্মক ধরণের রোগ উল্লেখ করে পরিচালক মো. সালাউদ্দিন জানান, এই রোগে গবাদিপশু শুকিয়ে যায়, দুধ কমে যায়। কোনো কারনে যদি সেটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে তবে অবশ্যই সেটি ক্ষতির কারণ হবে। তবে এ বিষয়ে মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে মেসেজ দিয়েও তার কাছ থেকে কোনো প্রতিউত্তর পাওয়া যায়নি।  

এবিষয়ে ওয়ান ফার্মার হেড অফ অপারেশন ডা. মোমেন সিদ্দিকী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গরুর ক্ষুড়া রোগের জন্য একই ধরনের ভ্যাকসিন ব্যবহার হয়ে থাকে। আর আবহাওয়ার কারণে ভাইরাসের কোনো ভেদাভেদ হয় না। সকল দেশেই একই ধরনের কাজ করে থাকে। তাই আমাদের দেশেও কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পশুর যত ঔষধ আমদানি করা হয়, তার মধ্যে ওয়ান ফার্মা সবচেয়ে বেশি পরীক্ষিত। সে কারণে সরকারের বেশ কয়েকটি প্রজেক্টের সঙ্গে আমরা কাজ করছি।   

এদিকে ওয়ান ফার্মার আমদানিকৃত গরুর ক্ষুরারোগের ভ্যাকসিনটি কোনোভাবেই বাংলাদেশের জন্য তৈরিকৃত নয় দাবি করে গত ১৪ মে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পক্ষে এর উপদেষ্টা ড. ‍সুফি সাগর সামস ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে দেশের প্রাণি সম্পদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এ ভ্যাকসিন আমদানি অতি দ্রুত নিষিদ্ধের পাশাপাশি ওয়ানফার্মা নামক কোম্পানিটির রেজিস্ট্রেশন বাতিলেরও আবেদন জানানো হয়। 

জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গবাদি পশুর ক্ষুরা ও মুখের অসুখের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি ও এর প্রযোজ্য ক্ষেত্র হিসেবে পুরো পৃথিবীকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মরিশাস, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা রয়েছে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে। এছাড়া উত্তর আফ্রিকা, পূর্ব আফ্রিকা ও পশ্চিম/মধ্য আফ্রিকা শিরোনামে পুরো আফ্রিকা মহাদেশকে আলাদা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশে বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে এফএমডি ভ্যাকসিনটি উৎপাদন করে ইনসেপটার ভেটনারি বিভাগ ও এফএনএফ ফার্মা। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়াতে ভারতের ৬ টি ভেটনারি ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান  এই ভ্যাকসিন উৎপাদন করে থাকে। আর রাশিয়ার আরিয়াহ কোম্পানী পাকিস্তানে তাদের একটি কারখানার মাধ্যমে এ অঞ্চলের গাইডলাইন মেনে এফএমডি ভ্যাকসিন তৈরি করে।

এদিকে ওয়ান ফার্মার আমদানিকৃত এফএমডি ভ্যাকসিনকে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে উল্লেখ করে প্রাণি সম্পদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশ অঞ্চলের আবহাওয়া, পরিবেশ ও জলবায়ুগত পার্থক্যের কারনে গবাদি পশুর রোগেও ভিন্নতা রয়েছে। এসব বিবেচনায় ভ্যাকসিনে কোন ধরণের উপাদান থাকবে সেটি জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নির্ধারণ করে দেয়। তাই এক অঞ্চলের জন্য প্রস্তুতকৃত ভ্যাকসিন আরেক অঞ্চলে ব্যবহার অবশ্যই বড় ধরণের বিপর্য়য় ডেকে আনতে পারে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]