প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০২৩, ৯:৫৩ পিএম আপডেট: ১১.০৭.২০২৩ ৯:৫৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
স্বাধীনতার সুখ চিরায়ত বাংলার কবিতাখানি মনে হলে, মনে পড়ে যায় সেই শৈশবের মধুময় অনেক স্মৃতি। নিখুঁত শিল্পের কারুকাজ মন্ডিত কারিগর বাবুই পাখির নাম। নানা কারণেই পাখিদের মধ্যে বাবুই পাখিই সেরা। এ জন্য এই পাখিকে শিল্পের কারিগর বলা হয়ে থাকে। এক সময় ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বসতবাড়ি কিংবা সড়কের পাশে উঁচু নারকেল, খেজুর, তালসহ বিভিন্ন গাছের মগডালে অসংখ্য বাবুই পাখি ও দৃষ্টিনন্দন বাসার দেখা মিলতো।
কালের বিবর্তণে এসব পাখি উপস্থিতি আর তেমন চোখে পড়ছেনা। কবি রজনীকান্ত সেন রূপক অর্থে শিল্পের কারিগর বাবুই পাথিকে কেন্দ্র করে লিখেছেন তার অমর ছড়া কবিতাখানি। বাবুই পাখির দেখা মিললেই পড়ে পড়ে যায় বিখ্যাত সেই কবিতার লাইন ‘বাবুই পাখিকে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থেক কর, শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্রালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি ঝড়ে। এছাড়া বাবুই পাখিকে নিয়ে রচিত হয়েছে বিভিন্ন কবিতা, ছড়া জনপ্রিয় গানও। বিভিন্ন তথ্যমতের ভিত্তিতে জানা গেছে, পৃথিবীতে প্রায় ১১৭ প্রজাতির বাবুই পাখি রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে ৩ প্রজাতির বাবুই পাখির বাস রয়েছে। এগুলোর মধ্যে দেশী বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই। দক্ষিণ এসিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও এ ধরণের বাবুই পাখির বিচরণ নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার শ্যামসিদ্ধি, কুকুটিয়া, বাড়ৈখালী, হাঁসাড়া, ষোলঘর, রাঢ়িখাল এলাকার বিভিন্ন বসতবাড়ি কিংবা সড়কের পাশে উঁচু গাছে বাবুই পাখির উপস্থিতি। এর মধ্যে বেশীর ভাগ তালগাছের পাতায় বাবুইরা বাসা বেঁধেছে। বাবুই পাখিরা তালগাছ-খেজুর গাছে বাসা বাঁধতে পছন্দ করলেও এসব গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অন্যান্য গাছেও বাস বাঁধতে দেখা গেছে।
বাবুই পাখিরা ঠোট দিয়ে বিভিন্ন ঘাসপাতার আস্তরণে নিপুন কারুকাজে বাসা বুনছে। প্রবাদে আছে পুরুষ বাবুইর বুনা বাসা পছন্দ হলেই স্ত্রী বাবুই ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাতের আঁধারে বাসা আলোকিত করার জন্য জোঁনাকি পোকা ধরে বাসায় এনে রাখে। স্থানীয়রা বলছেন, বর্তমানযুগে কোন কোন স্থানে বাবুই পাখি দেখা তার সংখ্যা খুবই কম। কালের বিবর্তণে ঐতিহ্যবাহী বাবুই পাখি দিনদিন বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে।
এর কারণ হিসেবে সচেতন মহল বলেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে মানুষের কবলে পড়ে দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামগঞ্জের চিরচেনা রূপ। কমতে শুরু করেছে উঁচু গাছপালা। এই অঞ্চলে হ্রাস পাচ্ছে সবুজ বৃক্ষের সমারোহ। তাই আমাদের একটু সচেতনতা অবলম্বনের মধ্যেই টিকে থাকতে পারে বাবুই পাখির বংশ।