কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আ. লীগের কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের অসন্তোষ
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে অসন্তোষ বিরাজমান থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এতে সভাপতি করা হয় আ হ ম মুস্তফা কামালকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় মো. মুজিবুল হককে। সম্মেলনের চার মাসের মাথায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হলেও অনেক ত্যাগি নেতাকর্মীকে পদ দেয়া হয়নি বলে দাবি করেছে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা । নতুন কমিটিতে ১১ জনকে সহসভাপতি, ৩ জনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৩ জনকে সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৭ জনকে সম্পাদক ও সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে ৩৯ জনকে। যাদের অন্তত ২০ জনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিষয়ে জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর।
ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়- গত ৯ এপ্রিল কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশিত হওয়ার পর আমরা দেখতে পেলাম স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং দলের নিবেদিতপ্রাণ অনেক নেতাকর্মীকে বাদ দেয়া হয়েছে। যারা গত তিন দশকের অধিক সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলাধীন বিভিন্ন উপজেলায় স্থানীয় রাজনীতিতে নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে কাজ করছেন সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হকের ব্যক্তিগত অপছন্দের কারণে তারা পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছেন।
ওই চিঠিতে আরো বলা হয়, বর্তমান কমিটিতে অনেকেই আছেন যারা একাধিক পদে রয়েছেন, এমনকি অন্য সহযোগী সংগঠনের পদে থাকার পরেও অগঠণতান্ত্রিকভাবে জেলা আওয়ামী লীগে তাদের পদ দেওয়া হয়েছে। এমন লোককেও কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে যার পিতা যুদ্ধাপরাধী ও খুনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমিটিতে জায়গা পাওয়া অন্তত ২০ জনের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ কমিটিতে সহসভাপতি পদ পাওয়া শামসু উদ্দিন কালুর বিষয়ে।
অভিযোগ রয়েছে, তার বাবা আকবর আলী একজন যুদ্ধাপরাধী। ১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা করিমুল্লাহকে হত্যা করেছিলেন তিনি। এছাড়া অন্নদা, যশোদা ও জগতবন্ধুদের জমি আত্মসাৎ করেন। এর ফলে লাকসাম থানায় একটি মামলা হয়েছিল। মামলার নাম্বার ১৮/১৯৭২। এছাড়াও শামসু উদ্দিন কালু বিএনপি, জাতীয় পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে এসেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে জায়গা পাওয়া সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি বুড়িচং উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পলাশ হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি, মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে গোয়েন্দা সংস্থার তালিকাভুক্ত। এ ছাড়াও তিনি কুমিল্লা জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথি দত্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি মহানগরের বাসিন্দা অথচ তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পদে জায়গা পেয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক রূপম মজুমদারও অন্য জেলার বাসিন্দা।
অভিযোগ রয়েছে কমিটিতে জায়গা পাওয়া সহ-সভাপতি এ এম শাহাদাত হোসেন তসলিমের বিষয়ে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে আছেন। তারপরেও তাকে জেলা আওয়ামী লীগে সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে।
একসময়ে হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সফিউদ্দিন শামীম যিনি খাম্বা শামীম নামে খ্যাত ছিলেন তাকে সহ সভাপতি পদ দেয়া হয়েছে। একজন একাধিক পদে থাকার বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত বেশ কয়েকজনকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও অন্যান্য পদ দেয়া হয়েছে।
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খালেদ আহমেদ তালুকদার চঞ্চল চাঁদপুরের বাসিন্দা হয়েও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে জায়গা পাওয়া এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া রুমি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক পদে রয়েছেন। তারপরেও তাকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে পদ দেওয়া হয়েছে। সদস্য এমরানুল হক কামাল (ভার্ড কামাল), একজন হাইব্রিড নেতা। উনি জামায়াত সমর্থিত লোক। ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ করার কোন রেকর্ড নাই। কিন্তু তাঁকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে পদায়ন করা হয়েছে। অন্যধিকে আরো এক সদস্য মো: কামাল উদ্দিন, জীবনে কোনদিন ছাত্রলীগ বা দলের কোন পর্যায়ে কোন সহযোগী সংগঠনে কাজ করার প্রমাণ নাই। তাঁর একমাত্র যোগ্যতা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহোদয়ের ব্যবসায়িক পার্টনার। তাই তাকে দলের নিবেদিত কর্মীদের বঞ্চিত করে পদায়ন করা হয়েছে।
গত ২৭ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম সভা আহ্বান করা হলেও কমিটির সভাপতি আহম মুস্তফা কামাল, সহ সভাপতি মোঃ তাজুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সহ সভাপতি অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও কার্যনির্বাহী কমিটি এবং উপদেষ্টা পরিষদের প্রায় ৪০জন সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। শৃঙ্খলাবিহিন অগোছালো আয়োজনের কারণে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন কর্তৃক সহ সভাপতি এডভোকেট আবুল হাসেম খানের প্রতি বিষোদগার এবং অনেক সিনিয়র নেতার সঙ্গে অসদাচরণের কারণে নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন।
সাম্প্রতিক কালে চৌদ্দগ্রামে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ আহ্বানকে কেন্দ্র করে একজন খেতাবপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাহার উদ্দিন রেজা বীর প্রতীককে মারধর এবং নাজেহাল করার ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা হয়েছে। এছাড়াও চৌদ্দগ্রামে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীকে নির্যাতন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে এবং জেলা আওয়ামী লীগের এ কমিটি পরিবর্তন করা না হলে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বৃদ্ধি পাবে। এতে সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।