মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
কৃষকের বদলে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান দিচ্ছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র!
উলিপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩, ৯:৪৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ


আব্দুল মালেক,
কুড়িগ্রামের উলিপুর সরকারি খাদ্য গুদামে কৃষকের বদলে সিন্ডিকেট চক্র ধান দিচ্ছে। এতে করে মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা সরকারের দেওয়া সুফল থেকে বি ত হয়ে আসছে। কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ধান ক্রয় নিয়ম ডিজিটালাইজড করা হলেও সেখানে রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। লটা‌রি‌র মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষককের তালিকাতে রয়েছে সিন্ডিকেট চক্রের স্বজনসহ জমি-জমা না থাকা কৃষকরাও। ফলে উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির পরোক্ষ যোগসাজ‌শে সি‌ন্ডি‌কেট চক্র লাখ লাখ টাকা হা‌তি‌য়ে নেওয়ার চিত্র উঠে আসে অনুসন্ধানে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, রবিবার (৯ জুলাই) দুপুওে উপজেলা খাদ্য গুদাম চত্বরে, প্রায় অর্ধশতাধিক ট্রলি, ট্রাক্টরে করে সরকারি সিলযুক্ত ধানের বস্তা নিয়ে অবস্থান করছে ধান ব্যবসায়ীরা। এসময় কোন কৃষকের দেখা পাওয়া যায়নি। মাঠ পর্যায় থেকে এক থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে কৃষকের নিকট হতে কৃষি কার্ড সংগ্রহ করেন এসব ধান ব্যবসায়ীরা। এসময় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একাধিক কৃষকের কৃষিকার্ড, এনআইডি এবং কৃষকের স্বাক্ষরিত ফাঁকা চেকের পাতা দেখা যায়। উপজেলা খাদ্য গুদামকে ঘিরে গড়ে ওঠা মিল চাতাল মালিকদেও সিন্ডিকেট চক্রের কারণে এসব ব্যবসায়ীদের ধান নিয়মবর্হিত হওয়ায় ফেরত পাঠায় গুদাম কর্তৃপক্ষ। 

অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেট চক্রটি নানা কারসা‌জির মাধ‌্যমে ভূ‌মিহীন, দিনমজুর ও অস্বচ্ছল ব‌্যক্তিদের লটা‌রি‌তে বিজয়ী দে‌খি‌য়ে তা‌দের না‌মে গুদা‌মে ধান দি‌চ্ছে ওই চক্রটি। গত র‌বিবার অসাদুপায় অবলম্বন করে ট্রলি এবং ট্রাক্টরের মাধ্যমে ধান গুদা‌মে ঢোকা‌নোর চেষ্টা কর‌লে বিষয়‌টি জানাজা‌নি হয়। 

তা‌লিকার সূত্র ধ‌রে উপ‌জেলার ধাম‌শ্রেণী, গুনাইগাছ ও থেতরাই ইউনিয়‌নসহ পৌরসভা এলাকায় অনুসন্ধান কর‌লে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। 

লটারিতে উপ‌জেলা মিল চাতাল মা‌লিক স‌মি‌তির সাধা‌রণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান বু‌লে‌টের প‌রিবা‌রের একাধিক সদস‌্যও নাম রয়েছে। তারা হলেন, তালিকার তিন নম্বরে মাহফুজার রহমান বু‌লেট, ৭৬, ৭৭ ও ৭৮ নম্বরে তিন চাচা, ৭৫ ও ৭৯ নম্ব‌র তা‌লিকায় দুই ভাই রয়েছেন। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে প্রভাশালী সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের স্বজন, প্রতিবেশি, বাড়ির কাজের লোকসহ অনেকেই। 

পৌরসভার মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, শনিবার রাত ১১টা থেকে আমি ১৫০ বস্তা ধান নিয়ে খাদ্য গুদামে পড়ে ছিলাম। রাত থেকে আমরা পড়ে থাকলেও গুদাম কর্তৃপক্ষ গেট খুলে না। কিন্তু সকাল বেলা সিন্ডিকেট চক্র আর বড় ব্যবসায়ীরা আসার পর গেট খুলে দেওয়া হয়। মিল মালিকরা পরীক্ষা করার পর আমার ধানের মান খারাপ বলে ধান নিতে অস্বীকৃতি জানায়। 
একই এলাকার বাসিন্দা সেকেন্দার আলী বলেন, আমি দু’হাজার টাকার বিনিময়ে কৃষকের নিকট হতে কৃষিকার্ড সংগ্রহ করেছি। সেই কার্ড ধরে খাদ্য গুদামে ধান দিতে আসছি। কিন্তু ধানের ময়েশ্চারের আদ্রতা দেখিয়ে ধান ট্রলি ফেরত দিলেন ওসিএলএসডি। আমার ধানের চেয়ে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নি¤œ মানের ধান ক্রয় করে গুদামে ভরিয়েছে ওসিএলএসডি। 

ট্রলি চালক জহুরুল হক বলেন, আমি এর আগেও ধান নিয়ে এসেছি ব্যবসায়ীদের। এখানে কোন কৃষক ধান দেয় না। সব বড় বড় ব্যবসায়ীরা ধান দিচ্ছে। 

গুনাইগাছ ইউনিয়নের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, আমি এবার ৫০শতক জমিতে ধান আবাদ করেছি। প্রায় ৩০মণ ধান পেয়েছি। সেখান থেকে কিছু ধান বাজাওে বিক্রি করেছি এবং খাওয়ার জন্য কিছু রেখেছি। খাদ্য গুদামে আমি এবং আমার পুত্রবধূ কোন ধান বিক্রি করেনি। তালিকায় আমাদেও নাম কিভাবে আসলো এটা আমরা বলতে পারি না। 

ওই ইউনিয়নের নাগড়াকুড়া টি-বাঁধ এলাকার বাসিন্দা ছাদিকুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে অগ্রণী ব্যাংকের ওখানে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ওবায়দুল আমাকে এক হাজার টাকা দিয়ে কৃষি কার্ডটি নেয়। এ ছাড়া আমি খাদ্য গুদামে কোন ধান বিক্রি করেনি। আমার যা ধান ছিল তা বাজারে বিক্রি করেছি। 

এ বিষয়ে উপ‌জেলা মিল চাতাল মা‌লিক স‌মি‌তির সাধা‌রণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান বুলেট ফোনে বলেন, আমি একটা মিটিংয়ে আছি। পরে এই বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলবো। পরে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। 

উপ‌জেলা খাদ‌্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) শফিকুল ইসলাম জানান, চল‌তি মৌসুমে আমন-বোরো খাদ্য শস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় গত ১৮মে। আগামী ৩১ আগষ্টের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ৩০ টাকা কেজি দরে কৃষক প্রতি তিন টন করে ধান এবং ৪৭জন চুক্তিকৃত মিলারের নিকট হতে ৪৪ টাকা দরে চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। এবারে উপজেলায় এক হাজার ৯৬০মে‌ট্রিক টন ধান এবং এক হাজার ৪৮১ মেট্রিক টন চাল লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৯ জুলাই পর্যন্ত ৪০২মে‌ট্রিক টন ধান এবং এক হাজার ২৪০মেট্রিক টন চাল অর্জিত হয়েছে। নিয়মঅনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ হচ্ছে বলেও দাবি এ কর্মকর্তা। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, অকৃষক তালিকাভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহমুদুল হাছান বলেন, কৃষকের তালিকা কৃষি বিভাগ তৈরি করে। সেইতালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচিত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কৃষক প্রতিনিধি। খাদ্য বিভাগ শুধু তালিকা অনুযায়ী নির্বাচিত কৃষকের নিকট হতে বিধি মোতাবেক ধান সংগ্রহ করে থাকে। যেহেতু অনিয়মের বিষয়টি জানতে পারলাম সেটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা বলেন, বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি, তবে খোঁজ নিচ্ছি।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]