টিন ও কাঠের তৈরী বিভিন্ন ডিজাইনের নান্দনিক ঘর যুগযুগ ধরে বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জের জনপথের ঐতিহ্যবহন করে আসছে। এক তলা, দেড় তলা ও দু’তলার ঝুলন্ত বারান্দা সংযুক্ত চৌচালার এসব টিনের ঘরের জৌলুস ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। এ অঞ্চলের প্রতিটি বসত বাড়িতেই দেখা মিলবে ঐতিহ্যবাহী কারুকাজ সম্পন্ন বিলাশবহুল ঘর। যেকোন পরিবেশ ও প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে স্থানন্তরযোগ্য এসব রেডিমেট ঘরের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বালাশুর, ভাগ্যকুল, কামারগাঁও, রাঢ়িখালের বালাশুর, নতুন বাজার, বাঘড়া, বীরতারার সাতগাঁও, কোলাপাড়ার ফুলকুচি, ষোলঘর, কুকুটিয়া, শ্যামসিদ্ধি ও হাঁসাড়া পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন ফারুক মোল্লার বাড়িতে গড়ে উঠেছে ঘর শিল্প।
এসব ঘর তৈরীর কাজ শতশত মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও রেডিমেট এসব টিনের ঘর যাচ্ছে ফরিদপুর, দোহার, নবাবগঞ্জ, নারিসাসহ দেশের বিভিন্ন নদীর তীরবর্তী এলাকায়। সরেজমিন দেখা যায়, শ্রীনগর-দোহার আঞ্চলিক সড়কের বালাশুর, বটতলা, দক্ষিণ কামারগাঁও ও মধ্য কামারগাঁও সড়কের পাশে রেডিমেট ঘরের মেলা খোলা আকাশের নিচে। খোলা আকাশের নিচে সমতল জমিতে ঝকঝকে টিন ও কাঠের কারুকাজ সম্পন্ন রেডিমেট ঘরগুলো মানুষের দৃষ্টি কাড়ছে। দেখা গেছে, ঘর তৈরীর কাজে কাঠ মিস্ত্রি ও শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এ শিল্পে প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। জানা যায়, ঘর নির্মাণ কাজে ব্যবহার হচ্ছে ঢেউটিন, প্লেনশিড, দেশী-বিদেশী লোহা কাঠসহ অন্যান্য জাতের কাঠ।
আজিজুল মোল্লা নামে এক কাঠমিস্ত্রি বলেন, মহাজনদের চাহিদা অনুযায়ী ঘর তৈরীর অর্ডার নেন তারা। সাধারণত ২১, ২৩ ও ২৫ বন্ধরের ঘরের চাহিদা বেশী। একেকটি ঘর তৈরীর কাজে ৪-৫ জন শ্রমিকের এক মাস সময় লাগে। ঘর ব্যবসায়ীরা তাদের কাজের মজুরী দেন। ভাগ্যকুলে লিটন ফকির, শাহআলম শেখ, মো. শহিদ, মো. দুলাল মিয়া, আনোয়ার শেখসহ বেশ কয়েকজন রেডিমেট ঘরের ব্যবসা করছেন।
মো. বাবু সারেং বলেন, গত ২৬ বছর ধরে ঘর তৈরীর কাজ করছি। এ বছর বেশ কয়েকটি ঘর বিক্রি হয়েছে। হাঁসাড়া এলাকার কানু মন্ডল জানান, ক্রেতাদের পছন্দমত যেকোন ডিজানের নতুন ঘর তৈরী করেন। রেডিমেট ঘর বিক্রির জন্য অস্থায়ীভাবে ফিটিংস করে রাখা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দাম হাকানো হয় ঘরের উচ্চতা, টিন-কাঠের মান এবং ডিজাইন ও সাইজের ওপর ভিত্তি করে। এক তলা একটি ঘরের দাম ধরা হয় ২ লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা, দেড় তলা ৩ লাখ থেকে ৪ লাখা টাকা, দু’তলা ঘর বিক্রি করা হয় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত। মহাজন ও ক্রেতাদের আলাপ আলোচনা সাপেক্ষে ঘরের দরদাম কিছুটা কম বেশীও হতে পারে। এছাড়া ক্রেতাদের চাহিদা অনুসারে ঘর তৈরীর অর্ডার নেওয়া হয়। প্রতিটি ঘরে একাধিক কক্ষ রয়েছে।
ঘরের খুঁটি, বেড়া, আড়াসহ অবকাঠামোতে নাইজেরিয়ান, সুপার, বাচালু, ওকান ও মিমবাসু নামক লোহা কাঠের ব্যবহার হচ্ছে। পাটাতনে দেওয়া হচ্ছে কড়ইসহ অন্যান্য জাতের কাঠ। বেড়া প্লেনশিড ও চালে সাদা ঢেউটিনের ব্যবহার করা হয়। বসবাসের জন্য একটি ঘরের স্থায়ীত্ব ধরা হয় ৫০ থেকে ৭০ বছর।
দৃষ্টিনন্দন এসব টিনের ঘর বিক্রমপুরের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পছন্দের রেডিমেট ঘরের সন্ধানে দূরদুরান্ত থেকে মানুষ এ অঞ্চলে আসছেন। মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী লৌহজং উপজেলায় মালিরঅঙ্ক, ঘৌড়দৌড়, কনকসারসহ বিভিন্ন স্থানে রেডিমেট ঘরশিল্প গড়ে উঠেছে।