জাতীয় নির্বাচনের আর কয়েক মাস বাকি। দেশ-বিদেশে আলোচনা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্বের প্রবল চাপ। র্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নয়া ভিসা নীতি ঘোষণা।
সর্বশেষ মার্কিন শান্তি বিষয়ক ফেডারেল সংস্থা ‘ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিস’ বাংলাদেশের নির্বাচনে তিনটি মৌলিক বিষয়ে নজর রাখার বিষয়ে অভিমত দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) এ বিষয়ে দীর্ঘ এক প্রতিবেদনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকটসহ বিরোধী দলগুলো বড় বড় সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে পতনের হুমকি দিচ্ছে।
টানা ১৫ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার পর গণতন্ত্র নিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড়। ফলস্বরূপ ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিরোধীদের কোন্দল বাড়ছে।
‘ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিস’–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচন যখন আর মাত্র ছয় মাস বাকি—এ অবস্থায় আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নজরে থাকবে তিনটি বিষয়।
প্রথমত, কীভাবে নির্বাচন পরিচালিত হবে
এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোর দিয়ে বলছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। তবে এই কমিশনকে বিরোধীরা পক্ষপাতদুষ্ট বলে দাবি করে।
এ অবস্থায় ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক বাতিল করা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দাবি করছে বিরোধী দল বিএনপি। তা না হলে তারা সব নির্বাচন বয়কট করার অনড় অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এর আগে ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে তিনটি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ২০০৬ সালে এই ব্যবস্থা নিয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি ও বিরোধী দল আওয়ামী লীগের টানাপোড়েনের জেরে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও সামরিক হস্তক্ষেপের বিষয়টিরও উল্লেখ আছে।
বলা হয়েছে, সামরিক হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি নড়বড়ে হয়ে যায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তিন বছরের মধ্যেই এই ব্যবস্থাটিকে সংবিধান থেকেই মুছে ফেলে। আর তখন থেকেই বিএনপি এই ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছে। আওয়ামী লীগ তা বরাবরই প্রত্যাখ্যান করছে।
এ অবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহালের বিতর্ক এড়াতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুটি কৌশল অবলম্বন করছে বলে মত দেওয়া হয়েছে। প্রথম কৌশলটি হলো—রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবার জন্য উন্মুক্ত এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে তা প্রমাণ করা।
এদিক থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে বিএনপির বিশাল সমাবেশ নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি ইঙ্গিত করছে আওয়ামী লীগ। ২০২২ সালে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ নয় এমন প্রার্থীদের জয়লাভ করার কিছু উদাহরণও টানছে দলটি। এ ছাড়া সাম্প্রতিক পৌর নির্বাচনগুলোতে কিছু সমস্যা দেখা গেলেও তুলনামূলক বেশি ভোটারের উপস্থিতি, সহিংসতা হ্রাস এবং কিছু এলাকায় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার বিষয়গুলোকে তারা সামনে নিয়ে আসছে। জানুয়ারিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদেরও স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
তা সত্ত্বেও, বিরোধী সমর্থকেরা বলছেন, (ভোট কেন্দ্রে) সহিংসতা ও বাধা সৃষ্টি নির্বাচনের পরিবেশকে আওয়ামী লীগের পক্ষে নিয়ে গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর নিপীড়নের অসংখ্য ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।
বিএনপি দাবি করছে, দলটির চেয়ারপারসন, মহাসচিব এবং নির্বাসিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দেওয়াসহ জেল-হাজতের সাজা ভোগ করানো হচ্ছে। পরিবহন সংস্থাগুলো কাকতালীয়ভাবে বিএনপির সমাবেশগুলোর সময়ই ধর্মঘট ডেকে সমর্থকদের উপস্থিতিতে বাধা সৃষ্টি করেছে।
বিএনপি অভিযোগ করছে, এসব নিপীড়ন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকালীন পরিস্থিতিরই পুনরাবৃত্তি। সেসময় স্বতন্ত্র দলগুলো ক্ষমতাসীনদের ভোট জালিয়াতির শিকার হয়েছিল। এমন পরিবেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ অর্থহীন।
আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় কৌশলটি হলো—সীমিত আকারে সমঝোতার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রত্যাবর্তনে বিএনপিকে প্রলুব্ধ করা। গুঞ্জন রয়েছে, নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থান থেকে বিএনপিকে সরিয়ে আনতে ভেতরে-ভেতরে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা চলছে। গত মে মাসেই বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে একটি বহুদলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের ধারণা হাজির করেছিল আওয়ামী লীগ। দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় একটি রাজনৈতিক সংলাপেরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বর্তমানে উভয় পক্ষই প্রকাশ্যে মুখোমুখি অবস্থানে যেতে ইচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে না। তবে বিকল্পপথে আলোচনার সম্ভাবনা অব্যাহত আছে।
দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণের বিষয় হলো—বিরোধী দল কতটা শক্তিশালী?
এ ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে-বিএনপির জনপ্রিয়তা ও অভ্যন্তরীণ সংহতির বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
বলা হয়েছে, ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে জনমত নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য খুবই কম। বর্তমানে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মীদের নড়াচড়া এবং রাজনৈতিক সমাবেশ কত বড় হলো—তা দিয়ে দলগুলোর শক্তি সম্পর্কে মূল্যায়ন করছেন বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক। এ ধরনের মূল্যায়ন যথাযথ না হলেও দেখে মনে হচ্ছে, বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। করোনা মহামারির আগে বিরোধীদের সমাবেশে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম দেখা গেলেও বর্তমানে তাদের সমাবেশগুলোতে মানুষের ঢল নামছে। কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমান বিএনপিকে অনেক বেশি জনপ্রিয় দেখাচ্ছে।
প্রতিবেদনে লন্ডনে অবস্থান করা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সঙ্গে কিছু বিষয়ে ঢাকার দলীয় নেতাদের মতভেদেরও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তবে এ ধরনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ‘গুজব’কে বিএনপির অস্বীকার এবং নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি দেশজুড়ে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টির জন্য বিএনপির জনপ্রিয়তা অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের নির্বাচন বিএনপি বয়কটের হুমকি দিলেও পরে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের দিন সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে দলটির বেশির ভাগ প্রার্থীই ভোটের মাঠ ত্যাগ করে। ফলস্বরূপ মাত্র ৬টি আসনে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হন।
২০২১ সালে নির্বাচন বর্জনের নীতিতে আবারও ফিরে আসে বিএনপি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সংসদ থেকে দলটির সাত এমপি পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। তবে এই কৌশলেও কিছুটা গলদ দেখা যায়, যখন দলটির পদত্যাগ করা এমপি আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে নিজের আসনে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। এ ছাড়া চলতি জুনেও বিএনপির কিছু প্রার্থী দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মেয়র নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। বিএনপি এসব বিদ্রোহী সদস্যকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। তবে এটা স্পষ্ট যে, দলটির অনেকেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে হলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না।
এসব ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক বৈধতা বাড়াতে বিএনপির আগ্রহী প্রার্থীদের উৎসাহ দিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে টেনে আনছে বলেও প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। আর যেসব নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত সদস্যরা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সেসব নির্বাচন অবাধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে ক্ষমতাসীনেরা। ফলে প্রায় সময়ই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়ে যাচ্ছে। এমপি হিসেবে সাত্তারের পুনর্নির্বাচন এর একটি উদাহরণ।
বলা হয়েছে, এ ধরনের ফলাফল দিয়ে নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতাদের প্রলুব্ধ করারও কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া একটি নির্বাচনকালীন ঐক্য সরকার প্রতিষ্ঠার নামে বিএনপিকে আবারও নির্বাচনে আনার কৌশলও হাতে আছে দলটির। নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে বিএনপিতে ভাঙনের চেষ্টাও হচ্ছে।
তৃতীয় পর্যবেক্ষণের বিষয়—আমেরিকান চাপের প্রভাব কতটুকু?
যুক্তরাষ্ট্র তার বাংলাদেশ নীতিতে গণতন্ত্রকে সবার ওপরে রেখেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় ওয়াশিংটন। ২০২১ ও ২০২৩ সালের বিশ্ব গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি বাইডেন প্রশাসন। সর্বশেষ গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার’ সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাঁকে ভিসা দেওয়া হবে না।
গত এক বছরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ বেশ কয়েকজন মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে আরও ভালো নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সুরেই কথা বলছে। এ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এ ধরনের উদ্যোগে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ অধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলো খুশি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ আছে, চাপের মুখে বাংলাদেশের কিছু সরকারি কর্মকর্তা দেশের বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার এবং র্যাবের ‘কিছুটা বাড়াবাড়ি’র কথা স্বীকার করেছেন এবং তাঁরা তুলনামূলকভাবে নতুন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেসহ আওয়ামী লীগের অন্যরা মানবাধিকার লঙ্ঘনকে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাঁরা তির্যক মন্তব্যও করছেন এবং বাইডেন প্রশাসনকে বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের দায় দিচ্ছেন।
গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আরও বলা হয়েছে, ভারত নিরবচ্ছিন্নভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে দেখছে।
গত জানুয়ারিতে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সাবেক এক মন্ত্রী ঢাকায় বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা সম্পর্কে ভারতের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।’ শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ফেব্রুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, ‘আপনার এবং আপনার নেতৃত্বের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’
এ ছাড়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গড়ে তোলার বিষয়গুলোও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বলা হয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে র্যাব কিছুটা নমনীয় হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ অব্যাহত রাখলে তা আগামী ছয় মাসে দেশের রাজনীতিতে সহিংসতা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবুও দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের মধ্যে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত। এসব বিষয় বাংলাদেশে মার্কিন চাপের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনের গুরুত্ব
সবশেষে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রশাসনের ভূমিকা, রাজনৈতিক বিরোধীদের শক্তি এবং মার্কিন চাপের প্রভাব—এ তিনটি বিষয় বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণের বিষয়। ২০০৮ সালের পরে বাংলাদেশে সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ২০২৪ সালেও যদি এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে তবে পরবর্তী নির্বাচনের আগে পর্যন্ত আরও পাঁচ বছরের জন্য গভীরভাবে বিভক্ত এবং রাজনৈতিক সহিংস পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে। তাই বাংলাদেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করতে এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ভারত এবং চীন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলে প্রতিবেদনে মত দেওয়া হয়েছে।