প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (৪আইআর) সংশ্লিষ্ট সরঞ্জামগুলো যেন মানবতাকে আঘাত বা ক্ষুণ্ন করতে না পারে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব যেন আমাদের সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে না পারে। এ উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কার্যকর সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে।
বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) আয়োজিত ‘নিউ ইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটি ইন স্মার্ট বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার তরুণদের ৪আইআর ও ভবিষ্যৎ কাজের জন্য তৈরি করতে শুরু করেছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা শুধু ৪আইআর অনুসরণই করবে না, এর নেতৃত্বও দেবে। দেশের শিক্ষার্থীরা রোবোটিক্সে উদ্ভাবনী কাজ করছে। এ বিষয়ে তাদের মাঝে দারুণ উৎসাহ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই ডব্লিউইএফ’র সঙ্গে অংশীদারিত্বে একটি স্বাধীন ৪আইআর কেন্দ্রকে স্বাগত জানাবে। সরকার এরই মধ্যে বাংলাদেশে ৪আইআর’র জন্য যথাযথ আইন, নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরির জন্য কাজ করছে। আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অব থিংস, ন্যানো টেকনোলজি ইত্যাদি বিষয়ে পৃথক জাতীয় কর্মকৌশল তৈরি করেছি। এ লক্ষ্যে দেশে বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট স্থাপন করছে সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, স্মার্ট গভর্নেন্সের জন্য ভবিষ্যতের রাজনৈতিক নেতাদের বিকাশের জন্য আমরা স্মার্ট লিডারশিপ একাডেমিও চালু করেছি। বাংলাদেশ একটি গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট তৈরির বিষয়ে জাতিসংঘের কাজে আগ্রহী। এ গ্লোবাল কমপ্যাক্টে ডিজিটাল ও সীমান্ত প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ও উৎপাদনশীল ব্যবহারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সরকার প্রধান বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি ব্লেন্ডেড শিক্ষার অপার সম্ভাবনার বিষয়ে সরকারের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা মহামারির সময়ে দেশব্যাপী ডিজিটাল কাঠামোর সম্পূর্ণ সুবিধা গ্রহণ করেছি। অনলাইনে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, সরকার সারাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে দৈনিক লেকচার সেশন সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে সংসদ টিভি চ্যানেলকে একটি শিক্ষা চ্যানেলে পরিণত করেছে। এটি নিয়মিত স্কুলে না যাওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারে। সরকার সব পাঠ্যপুস্তক অনলাইনে আপলোড করে বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। শিক্ষার বিষয়বস্তু এবং মডেল ক্লাস লেকচার আপলোড করার জন্য ‘মুক্তপথ’ অ্যাপ চালু করেছে।
তিনি বলেন, আমরা শিক্ষকদের অনলাইন শিক্ষার পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের অভিযোজন করার ব্যবস্থা করেছি। মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যথাযথ পরিবর্তন আনার জন্য শিক্ষক ও প্রশাসকদের পরামর্শ দিয়েছি। এ উদ্যোগগুলো অনেকাংশে শিখন ক্ষতি কমাতে পারে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে গঠনমূলক চিন্তভাবনা ও সৃজনশীলতার ওপর জোর দিতে সরকার দেশের স্কুল পাঠ্যক্রমকে নতুন করে সাজিয়েছে। প্রি-স্কুলিংয়ের পাশাপাশি স্নাতকোত্তর গবেষণা ও উন্নয়নকেও গুরুত্ব দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত বছর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ মহাসচিবের ট্রান্সফর্মিং এডুকেশন সামিটে বাংলাদেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমাদের সরকার মানসম্পন্ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং রূপান্তরমূলক শিক্ষা অর্জনের জন্য সেই দূরদর্শী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে।