চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনুমতি ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে বাণিজ্য মেলা আয়োজনের অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, সরকারী কলেজের বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে মেলার প্রধান ফটক। এটিকে অবৈধ বাণিজ্য মেলা উল্লেখ করে বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
মেসার্স সাব্বির ট্রেডার্স নামে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের প্যাডে নবাবগঞ্জ সরকারী কলেজ মাঠের একটি অংশ ব্যবহারের জন্য অধ্যক্ষ বরাবর আবেদন করেন, প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী সুলতানা খাতুন। গত ২৩ মে কলেজের অধ্যক্ষ ড. শংকর কুমার কুন্ডু নিজেদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের শর্তে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেন। প্রেক্ষিতে কলেজ মাঠের উত্তর-পশ্চিম কর্ণারে ষ্টল নির্মাণ ও বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রাইড স্থাপন শুরু করে। বর্তমানে এটি নির্মানের প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে, মেলায় প্রবেশ পথের জন্য ভেঙে ফেলা হয়েছে কলেজের উত্তর দিকের বাউন্ডারি দেয়াল। সেখানে মেলার মুল ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। তবে আয়োজক বলছেন, এটি বাণিজ্য মেলা নয়, নারী উদ্যোক্তা হস্ত কুটির শিল্প ও ঈদ বাজার।
অভিযোগ রয়েছে, এর আগেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে বাণিজ্য মেলার নামে এধরণের আয়োজন করা হয়েছে। তবে এসব মেলায় বাণিজ্য মেলার কোনো ঐতিহ্য লক্ষ্য করা যায়নি। বিভিন্ন কোম্পানির নিম্নমানের পণ্য মাত্রাতিরিক্ত মুনাফায় বিক্রি করে ভোক্তা ও ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এই মেলার আয়োজন হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন জেলার ব্যবসায়ীরা।
মেলার আয়োজক সুলতানা খাতুন জানান, এটি বাণিজ্য মেলা নয়। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য নারী উদ্যোক্তা হস্ত কুটির শিল্প ও ঈদ বাজার আয়োজন করা হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ বিশ্বাসের সুপারিশ রয়েছে। প্রিন্সিপাল কলেজের শহীদ মিনারের পেছন দিকের ফাঁকা মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের কাছে মেলার অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। সব নিয়ম মেনেই জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য কাঁসা-পিতল, নকশি কাঁথা, আমের আচার, হস্ত ও কুটির শিল্প পণ্য বিক্রি ও শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য মেলার আয়োজন করেছি। সরকারী প্রতিষ্ঠানের দেয়াল ভেঙ্গে ফটক নির্মানের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিন্সিপাল স্যারের মৌখিক অনুমতি রয়েছে বলে জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার অনুযায়ী, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেলার আয়োজন করা যাবে না। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে এটি করা হচ্ছে। আর বাণিজ্য মেলা চেম্বার ছাড়া অন্য কেউ আয়োজন করতে পারবে না। এই বিষয়ে আমি ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছি, প্রশাসনের বিষয়টি দেখা উচিত।
নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. শংকর কুমার কুন্ডু বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশের প্রেক্ষিতে কলেজের জায়গায় মেলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের অনুমতি আছে কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আয়োজকরা মেলার অনুমতি নেবে বলে জানিয়েছে। অনুমতির বিষয়টি আন্ডার প্রসেসিং বলে জানিয়েছে। আমি ছুটিতে ছিলাম বাউন্ডারি দেয়াল ভাঙ্গার বিষয়টি আমি জানতাম না।
জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, আপনারা জানেন জেলায় এধরণের মেলার কোন অনুমতি কখনও দেয়া হয়নি। এই নারী এর আগেও অনুমতি ছাড়াই মেলার আয়োজন করেছিল। জানার পর আমি তা ভেঙ্গে ফেলি। সরকারি কলেজ মাঠে মেলার প্রস্তুতি চলছে কি না আমার জানা নেই। কাউকে অনুমতিও দেয়া হয়নি। তবে একটা আবেদন আমরা পেয়েছি, নিয়ম অনুযায়ী সেটি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু এটি কলেজের ভেতরে হচ্ছে এ বিষয়ে প্রিন্সিপাল ভালো বলতে পারবেন।