৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাতের বিষয়ে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) আদালতে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, ‘টাকা কি বাতাসে খেয়েছে? কারা এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত, কারা এ টাকা আত্মসাৎ করেছে, সুনির্দিষ্ট করে তাদের নাম দিন।’
আদালত বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের টলারেট করা হবে না। দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে কোর্ট থেকে সরাসরি জেলে ঢুকায়ে দেবো।’
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
এর আগে ৫৮২ কোটি টাকার সার আত্মসাতের ঘটনায় বিসিআইসি চেয়ারম্যানকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে সার আত্মসাতের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
পাশাপাশি ৬০ দিনের মধ্যে এ অভিযোগের অনুসন্ধান করে দুদককে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গত ৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন।
ওইদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।
দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারিভাবে আমদানি করা ৭২ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার বন্দর থেকে খালাসের পর গুদামে পৌঁছে না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে পরিবহনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫৮২ কোটি টাকা। সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি বিসিআইসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মেসার্স পোটন ট্রেডার্স সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানের (পোটন) মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। কামরুল আশরাফ খান সার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) সভাপতি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, তিনিই মূলত দেশে সারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।
কামরুল আশরাফ খান একজন সাবেক সংসদ সদস্য। ২০১৪ সালে নরসিংদী-২ আসনে জাসদের প্রার্থী জায়েদুল কবিরকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন তিনি। জায়েদুল মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। কামরুল আশরাফ খান আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য তার ভাই আনোয়ারুল আশরাফ খান, যিনি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত।
পোটন ট্রেডার্স যে সার আত্মসাৎ করেছে, তা উঠে এসেছে সারের আমদানিকারক শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি প্রতিষ্ঠান রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) দুটি তদন্তে। সারগুলো খালাস হয়েছিল ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৫ মে’র মধ্যে। সার সরবরাহ না করার পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি বিসিআইসি। সর্বশেষ গত ২০ ডিসেম্বর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে বিসিআইসির পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন গণমাধ্যমকে বলেন, বিসিআইসির পাঠানো চিঠি তিনি এখনো পাননি। তবে সার গুদামে সরবরাহ না করার বিষয়টি জানার পরই মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের বিষয়ে তদন্ত করতে বলা হয়। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পোটন ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়কে দেওয়া বিসিআইসির চিঠিতে বলা হয়, পোটন ট্রেডার্স মৌসুম আসার আগে (২৯ আগস্টের মধ্যে) সব ইউরিয়া সার সরকারি গুদামে সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সার সরবরাহ করেনি। কামরুল আশরাফ খানের সঙ্গে বিসিআইসির কয়েক দফা সরাসরি আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু সার সরবরাহ করেননি।
এদিকে সার আত্মসাতের বিষয়ে কামরুল আশরাফ খানের বক্তব্য জানতে বুধবার সন্ধ্যায় তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এসএমএস পাঠানো হয়। হোয়াটসঅ্যাপেও তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে কোনোভাবেই সাড়া মেলেনি তার কাছ থেকে।