তপ্ত ধরণীর বুকে বৃষ্টির পানি ঢেলে এই ঋতু প্রকৃতির রূপও বদলে দেয়। এই ঋতুতে নদ-নদীতে যেমন নতুন করে প্রাণ আসে, তেমনি গাছে ফোটে কদম, বকুল নানা রকমের ফুল। কদমকে তো আষাঢ়ের প্রতীকই ভাবা হয়।
বাঙালি সাহিত্যিকদের লেখায়ও বর্ষা যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। রবি ঠাকুরের ভাষায়— ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে... আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে...’।
তবে হঠাৎ বর্ষা যেমন আনন্দের, বর্ষার নির্মম নৃত্য তেমনই হঠাৎ বিষাদে ভরিয়ে তোলে জনপদ। যেমন— হঠাৎ করে আসা বৃষ্টি যেমন নগরবাসীকে স্বস্তি এনে দেয়, আবার জলাবদ্ধতার কারণে সেই বৃষ্টিই হয়ে দাঁড়ায় দুর্ভোগের কারণ। তবুও বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুনের আবাহন। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে আনে জীবনেরই বারতা। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাঙলা মায়ের নবজন্ম এই বর্ষাতেই। সারা বছরের খাদ্য-শস্য-বীজের উন্মেষতো ঘটবে বর্ষার ফেলে যাওয়া অফুরন্ত সম্ভাবনার পলিমাটি থেকেই।
আষাঢ় মাসের প্রথম দিনে দেশের বেশ কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। বুধবার (১৫ জুন) সন্ধ্যায় দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ হতে বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
অধিদফতরের পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; রংপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
তবে বর্ষা এলেও এখনও রাজশাহী, যশোর এবং খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপ প্রবাহ। এছাড়া ঢাকা ও বরিশাল বিভাগসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তারলাভ করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দেশের অন্যত্র তা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বর্ষাকে নিয়ে নানা মিথ রয়েছে, বিশেষ করে দেশের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে। কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় বর্ষাকে বরণ করে ভিন্ন রকমভাবে। প্রতিবছর তারা কক্সবাজরর সমুদ্র সৈকতে মাসব্যাপী বর্ষাবরণ উৎসবের আয়োজন করে থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকেরা এ বর্ষাবরণ উৎসবে যোগ দেন।