নির্বাচনী আইন ও নির্বাচনের বৈধতা সংক্রান্ত সংবিধানের ১২৫(ক) অনুচ্ছেদের বিধান মনে করিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত আইন কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
বুধবার (১৪ জুন) নোয়াখালী-১ আসনের সীমানা নির্ধারণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিটের শুনানিতে এ মন্তব্য করেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ।
গত ৩ মে প্রকাশিত নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সোনাইমুড়ীর বজরা ইউনিয়নকে নোয়াখালী-১ আসন থেকে কেটে নোয়াখালী-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। সোনাইমুড়ীর বারগাঁও, নাটেশ্বর ও অম্বনগর আগে থেকেই নোয়াখালী-২ আসনের সঙ্গে ছিল।
পরিবর্তনের পর বজরা, বারগাঁও, নাটেশ্বর ও অম্বনগর ইউনিয়ন ছাড়া সোনাইমুড়ীর বাকি অংশ ও চাটখিল উপজেলা নিয়ে নোয়াখালী-১ আসন। সেনবাগ উপজেলা ও সোনাইমুড়ীর বজরা, বারগাঁও, নাটেশ্বর ও অম্বনগর ইউনিয়ন নিয়ে নোয়াখালী-২ আসন।
সম্প্রতি এ প্রজ্ঞাপনটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন নোয়াখালী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
রিটের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সংবিধানের ১২৫(ক) অনুচ্ছেদ তুলে ধরে বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না বা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
এটা সংবিধানের ১২৫(ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে। তিনি বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত ২০২১ সালের যে আইন হয়েছে ওই আইনেও বলা হয়েছে, সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কোনো আদালতে মামলা করা যাবে না বা প্রশ্ন তোলা যাবে না।
জবাবে রিটকারী আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ২০২১ সালের সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত যে আইন হয়েছে, সেটাকে আমরা চ্যালেঞ্জ করিনি বা আইন নিয়ে প্রশ্ন তুলিনি। এই আইনের অধীনে নির্বাচন কমিশন গত ৩ জুন যে সীমানাটা নির্ধারণ করেছে এই নির্ধারণের প্রক্রিয়াকে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি।
মূল আইনটাকে আমাদের রিটে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করা সংবিধানে কোনো বাধা নেই।
আইনজীবী খোকন বলেন, নোয়াখালী-১ আসনের যে সীমানা আছে সেখান থেকে একটি ইউনিয়নকে কেটে নোয়াখালী-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই অন্তর্ভুক্তির আগে এলাকার ভোটার বা নাগরিকদের আপত্তি অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে রিটকারী আইনজীবী বলেন, সাধারণত আদালত যখন একটা রুল জারি করেন, সে রুলের শুনানিতে বিবাদিরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
যেহেতু এখনো এ বিষয়ে রুল জারি হয়নি তাই অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে পারেন না। বা আপত্তি জানাতে পারেন না।
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন বলেন, রুল জারির আগেই রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তারা যেকোনো শুনানিতে অংশ নিতে পারেন। আপত্তি জানাতে পারেন। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ আদালতে এই প্র্যাকটিস চলছে।
তখন আদালত মাহবুব উদ্দিন খোকনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা আপনার রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিচ্ছি। আপনি অন্য বেঞ্চে এটা নিয়ে যেতে পারেন।
এরপর এ আইনজীবী রিটে কোনো আদেশ না দেওয়ার আরজি জানিয়ে বলেন, আমরা রিটের পক্ষে আরো শুনানি করতে চাই। আজ কোনো আদেশ দেবেন না। পরে আদালত শুনানি মুলতবি করেন।
সংবিদানের ১২৫(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এই সংবিধানের ১২৪ অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত বা প্রণীত বলিয়া বিবেচিত নির্বাচনী এলাকার সীমা নির্ধারণ, কিংবা অনুরূপ নির্বাচনী এলাকার জন্য আসন-বণ্টন সম্পর্কিত যে কোনো আইনের বৈধতা সম্পর্কে আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
শুনানির সময় আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ। আর রিটের পক্ষে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও এইচ এম সানজিদ সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।