প্রকাশ: শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩, ৯:১১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমা লের ৪টি বিভাগের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লালমনিরহাট বিভাগ। এই বিভাগে প্রায় ৯শত ১০টি আবাসিক কোয়ার্টার রয়েছে। যেখানে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে মাঠ পর্যায়ের তার চিত্র ভিন্ন। আবাসিক কোয়ার্টারগুলো অবৈধ দখলদারের হাত থেকে রক্ষা করে কোয়ার্টারগুলো মেরামতসহ নতুন ভবন নির্মাণ করে রেল কর্মচারীদের বরাদ্দ দিলে বাংলাদেশ রেলওয়ের আর্নিক ফান্ড বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারের কোটি টাকার রাজস্ব বেড়ে যাবে। কিন্তু এ বিভাগের কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের ফাইল যুগ যুগ ধরে লালফিতায় বন্দী হয়ে পড়ে আছে।
জানা গেছে, লালমনিরহাট রেল বিভাগ হলেও জেলাটি লম্বালম্বি ১শ কিঃমিঃ সীমানা জুড়ে বিভিন্ন রেল স্টেশন রয়েছে। সেই সাথে এ বিভাগের আওতাধীন ৭৩টি স্টেশনকে ঘিরে বৃটিশ আমলের তৈরি ৯ শত ১০ লাল রংগের ভবনগুলো অধিকাংশ জীর্ন এবং বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রেল কর্মচারীরা কোয়ার্টার গুলোয় না থাকায় দখল করে নিয়েছে বহিরাগতরা। সেই সাথে চুরি হয়ে যাচ্ছে ভবনের ইটসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। ক্ষতি হচ্ছে সরকারি অর্থ এবং লুটপাট হচ্ছে রেলের বিভিন্ন যন্ত্রণাংশ যা দেখেও কোন প্রতিকার করছেন না রেল কর্তৃপক্ষ। এসব স্টেশন সংলগ্ন আবাসিক কোয়াটার গুলোয় স্টেশন মাষ্টারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের বসবাসের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগ কোয়ার্টার গুলো তৈরি করেন। এতে করে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগের আর্থিক আয় ও সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে। কিন্তু রেল কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও সঠিক তদারকির অভাবে কোটি-কোটি টাকা আয় থেকে বি ত হচ্ছে রেলবিভাগ আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আয়। বর্তমানে অধিকাংশ কোয়ার্টার রয়েছে বহিরাগতদের দখলে।
সেখানে বসবাস করছেন প্রভাবশালী ব্যক্তি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, মোহুরী, মুদি-দোকানদার, বাস-ট্রাক চালক, হেলপার, হকার, এনজিও কর্মী, শ্রমিক ও দিনমজুররা। বছরের পর বছর ধরে আছেন তারা। ওই সব বসবাসকারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এক শ্রেণির রেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে অলিখিত ভাবে মাসিক ভাড়া চুক্তি হিসাবে বসবাস করছেন। যার ভাড়ার টাকা কোন দিনও রেলের আর্ণিক ফান্ডে বা সরকারের রাজস্ব ফান্ডে জমা হবে না। আবাসিক কোয়ার্টারগুলো শুধু অবৈধ দখলে নয়, তার সাথে যুক্ত রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। বেশির ভাগ কোয়ার্টার গুলোয় নেই বিদ্যুৎ এর মিটার। পৌর শহরের আনাচে-কানাচে বেশিরভাগ রেল কোয়ার্টারে মিটার বিহীন বিদ্যুৎ সংযোগ। রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারি মার্সিক মাসোহারা হিসেবে বিদ্যুতের লাইন সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। শহরের সাহেবপাড়া, বাবুপাড়াসহ বেশির ভাগ কোয়ার্টারে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ, এভাবে চলছে দিনের পর দিন।
অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন রেল কর্মকর্তা বলেন, রেলের বেশ কিছু কোয়ার্টার বসবাসের জন্য উপযোগী নয় অথচ সেখানেও বসবাস করছে সাধারণ মানুষ। আবার সেগুলো কেনা-বেচাও হচ্ছে। রেলের সম্পদ সাধারণ জনগন কি ভাবে কেনা-বেচা করে তা আমার বোধগম্য নয়। কতৃপক্ষের অযন্তে অবহেলায় দীর্ঘদিনের রেলের ঐতিহ্য হোসেন শহীদ ইনস্টিটিউট আজ নষ্ট হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, জানালা-দরজা চুরি হয়ে গেছে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে। আরও একটি রেলের ঐতিহ্য নষ্টের দারপ্রান্তে দাড়িয়েছে রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাবটি। দীর্ঘদিনেও হচ্ছে না কোন সংস্কার। ক্লাবটির আয়কৃত অর্থের নেই হদিস। যে কোন সময় দেয়াল ধ্বসে বড় ধরনের দূর্ঘনা ঘটতে পারে সে দিকে নজর নেই রেল কতৃপক্ষের। রেলের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে একদিকে ক্ষতি হচ্ছে রেলের, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি-কোটি টাকার রাজস্ব আয়।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট রেল বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডি-ই-এন) আহসান হাবিবের সাথে দেখা করলেও তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, রেলওয়ের কিছু কিছু কোয়ার্টার আছে যেগুলো বসবাসের উপযোগী নয় পরিত্যাক্ত, মেরামত বা সংস্কার বাবদ বরাদ্দ আসে কি না খোঁজ নিয়ে দেখবো এবং অবৈধ দখলদারের হাত থেকে কোয়ার্টাগুলো উদ্ধারসহ মেরামত করা হবে।