পৃথক দুই মামলায় আসন্ন আশুলিয়া প্রেসক্লাবের আজ শনিবার (৩রা জুন) অষ্টম দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন স্থগিত করেছেন আদালত। বুধবার (৩১ মে) দুপুরে এক আদেশের পর বৃহস্পতিবার (১ জুন) ১২ টায় সিনিয়র সহকারী জজ জাকির হোসেন আরেকটি স্থগিতাদেশ দেন।
বিশয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী মো.আব্দুল লতিফ বিশ্বাস।
একই অভিযোগে আদালতে দুই মামলায় পরপর দুইবার নির্বাচন স্থগিতাদেশ দেওয়ার ফলে প্রেস ক্লাবের নির্বাচনী প্রক্রিয়া পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থায় থাকবে। এ জন্য উভয়পক্ষকে আদালত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তফসিল অনুযায়ী আজ ৩রা জুন অগঠনতান্ত্রিক ভাবে আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত ছিল।
স্থগিতাদেশের পাশাপাশি বিবাদীরা যেন এই আদেশ অমান্য করতে না পারে সেই কথা ভেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
প্রকৃত বৈধ ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে অগঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অষ্টম দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে ১৯ মে ৪৬ সদস্যের নাম উল্লেখ করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করলে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে ২৫মে দৈনিক আলোকিত কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং আশুলিয়া প্রেসক্লাবের বর্তমান কমিটিসহ তিন-বারের নির্বাচিত সহ-সভাপতি মো: ওমর ফারুক (সদস্য নং ১৭) সহ তার সমর্থিত ৫ জন ভুক্তভোগী সাংবাদিক বাদী হয়ে মামলা (নং-৪৫২/২৩) দায়ের করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও সভাপতি-সম্পাদক-কে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১জুন) শুনানির দিন ধার্য ছিল। বিবাদীদের সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া নির্বাচন স্থগিত করে আদেশ দেন আদালত।
এর আগে একই অভিযোগে বুধবার (৩১ মে) আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও এশিয়ান টেলিভিশনের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার শাহ আলম (সদস্য নং-১৪) এবং দৈনিক এশিয়া বাণী পত্রিকার সাংবাদিক ও আশুলিয়া প্রেসক্লাবের (সদস্য নং-৪২) ওবায়দুর রহমান কালাম যৌথভাবে আদালতে মামলা (নং -৪৬৮/২৩) করলে নির্বাচন স্থগিত রাখার আদেশ দেন আদালত।
এক মামলায় তারা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে তারা সাংবাদিকতা করছেন এবং বিগত দিনে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচিত হয়ে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আশুলিয়া প্রেসক্লাবের মোট ভোটার সংখ্যা ৫১ জন হলেও অষ্টম দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে মামলার বাদী ওমর ফারুক সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ায় তাকে সহ তার সমর্থিত আরও ৫ জনকে বাদ দিয়ে চলতি বছরের ১৯ মে ৪৬ সদস্যের নাম উল্লেখ করে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। একই তারিখে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের ২০২৩-২০২৪ সালের কার্যকরী পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ৩ সদস্যের গঠিত নির্বাচন কমিশন।
মামলায় তারা আরো উল্লেখ করেছেন,বর্তমান সভাপতি-সম্পাদক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের পছন্দের লোকদের-কে আশুলিয়া প্রেসক্লাবের কার্যকরী পরিষদের অষ্টম দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে জয়ী করার উদ্দেশ্যে এবং ওমর ফারুক যাতে উক্ত নির্বাচনে সভাপতি পদে অংশগ্রহণ করতে না পারে এবং তার সমর্থিত সদস্যরা যাতে তাকে ভোট দিতে না পারে এবং প্রচার প্রচারণা চালাতে না পারে সেই অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়,বেআইনি ও অবৈধভাবে ৫ জনকে বাদ দিয়ে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সদস্য পদ অর্ন্তভুক্ত করার আগে নির্বাচন হলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও সুবিধাবি ত হবেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আরেক মামলার এজাহারে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সাংবাদিকতা করছেন তারা। প্রতিষ্ঠা কালীন সদস্য ও পেশাদার সাংবাদিক হয়েও একটি চক্রের কারণে বার বার আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য পদ থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আসছেন। ক্লাবের স্বার্থ রক্ষায় অবৈধ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় অবৈধ ও বেআইনিভাবে তৎকালীন সভাপতি মোজাফফর হোসেন জয় ও সাধারণ সম্পাদক ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি শাহ আলম ও ওবায়দুর রহমান কালামকে বহিষ্কারের নোটিশ দেয়। পরে বহিষ্কারের নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এই দুই সাংবাদিক তাদের সদস্য পদ ফিরে পেতে আদালতে মামলা দায়ের করলে (মামলা নং ৩৬/১৯) দীর্ঘদিন শুনানির পর ২০২২ সালের ২০ জুলাই শাহ আলম ও কালামের সদস্য পদ বৈধ ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ অবৈধ বলে রায় দেন আদালত। এরপর থেকে নির্বাচনী ভোটার তালিকায় সদস্যপদ অর্ন্তভুক্তির চেষ্টা চালিয়ে আসেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু ওই চক্রটি নানা ষড়যন্ত্র ও বিরোধিতা করে আদালতের রায় উপেক্ষা করে আসছে।
মামলার বিবাদীরা হলেন,আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মোজাফফর হোসেন জয়,সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম লিটন,সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম,আশুলিয়া প্রেসক্লাবের অষ্টম দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্কুল শিক্ষক ফারুক আহমেদ,সহকারী নির্বাচন কমিশনার এবং ঢাকা জেলা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ এনামুল হক মুন্সী ও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
প্রসঙ্গত, আজ ৩রা জুন আশুলিয়া প্রেসক্লাবের অষ্টম দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। এরই মধ্যে ২০ মে হতে ২২ মে বর্তমান কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। পৃথক দুই মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হচ্ছে না।