পেঁয়াজের দাম দিনেদিনে বেড়েই চলেছে। এই নিত্যপণ্যটির দামের ঊর্ধ্বগতির লাগাম কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। এতে বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার তুলনায় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। ফলে দাম বাড়ছে। পেঁয়াজ আমদানি করা ছাড়া এর দাম আর কমবে না। বরং সামনের দিনগুলোতে দাম আরও বাড়তে পারে, সে রকম ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
তবে ক্রেতারা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করে দাম বাড়িয়েছেন। তদারকির অভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (৩ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় তিনগুণ হয়েছে পেঁয়াজের দাম।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বাজারে মানভেদে ফরিদপুরের পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা, যা কেজিতে পড়ছে ৮০ থেকে ৮৪ টাকা। পাবনার পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৩০ টাকা, কেজিতে যা পড়ছে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা। আর রাজশাহীর পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকা, যা কেজিতে ৮৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অবৈধভাবে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৪ টাকায়।
অথচ দুই মাস আগেও কারওয়ান বাজারে মানভেদে প্রতি পাল্লা পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৭৫ টাকা বিক্রি হয়েছিল। কেজি হিসেবে যা পড়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে পাইকারি বিক্রেতারা বলেন, কাঁচামালের দামের কোনো ঠিক নেই। সকালে এক দাম থাকে তো বিকেলে আরেক দাম। এবার পেঁয়াজের উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। তাই দাম বেশি। আমদানি করা ছাড়া পেঁয়াজের দাম কমবে না, বরং আরও বাড়বে।
ফরহাদ নামের এক বিক্রেতা বলেন, হাটেই পেঁয়াজের দাম বেশি। আজকে কারওয়ান বাজারে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছি, কাল হাটে গিয়ে দেখব এর থেকে বেশি দাম। তখন আমাদের তো বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। হাটে কৃষকদের কাছে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলে, এবার উৎপাদন কম হয়েছে। আগে যেখানে প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ হতো, এবার সেখানে নাকি ৩০ থেকে ৪০ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।
‘কৃষক পর্যায়েই পেঁয়াজের দাম বেশি। কিন্তু বাজারে আমাদের সাথেই ক্রেতারা ঝগড়া করে। দাম কমলে এই অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে আমদানি করা ছাড়া পেঁয়াজের দাম কমবে না। বরং এই সপ্তাহেই পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।’
কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা চাকরিজীবী রায়হান বলেন, সরবরাহের ঘাটতি নেই। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করেই ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুত করে দাম বাড়িয়েছে। এখন সরকার যদি আমদানি শুরু করে তাহলে মজুদ করা পেঁয়াজ বের হয়ে আসবে, দামও কমবে।
চাকরিজীবী কামাল হোসেন বলেন, শুধু পেঁয়াজ নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এতে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হচ্ছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করার পর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। প্রতিকূল আবহাওয়াসহ নানা কারণে প্রায় ৩৫ শতাংশের মতো পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বর্তমানে মজুদ আছে প্রায় ১৮ লাখ টন। সে হিসেবে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয়, তবুও এক মাসের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়েছে।