নামে মোস্তাক থাকায় সাতক্ষীরা-২ আসনের এমপি রবির নাম পাল্টানোর অনুরোধ প্রতিমন্ত্রীর
কুমিল্লার টাউন হলে মাঠে এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠেই বক্তব্যের শুরুতে সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবির নাম পরিবর্তনের অনুরোধ করেছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি বলেছেন, ‘আপনার নামটা মীর আহমেদ মোস্তাক করা যায় কি না- আমি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করে বলছি। কেন জানি এই নামটার সঙ্গে কুমিল্লার কলঙ্ক জড়িয়ে আছে। আমি বারবার বলেছি, আপনার নামটি পরিবর্তন করুন।’ প্রসঙ্গত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি খন্দকার মোশতাকের বাড়ি কুমিল্লায় ছিল।
শুক্রবার (২ জুন) কুমিল্লার টাউন হল মাঠে বাংলা সংস্কৃতি বলয়ের প্রথম বিশ্ব সম্মেলনের প্রথম দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লাই থেকে গেছেন। বারবার তাকে বের হয়ে যেতে বলা হয়েছে। তিনি বলেছেন, কোন আইনে আছে? একজন জনপ্রতিনিধি তার এলাকায় নির্বাচনে আরেকজন জনপ্রতিনিধির পক্ষে কেন থাকতে পারবেন না? আমারও প্রশ্ন, জনগণ আমাদের নির্বাচিত করেছে। জনগণ আরও যাদের নির্বাচিত করবে তাদের পক্ষে কাজ করতে গেলে কেন আমাদের নিরুৎসাহিত করা হবে। বহু চেষ্টা করা হয়েছে আ ক ম বাহাউদ্দিনকে কুমিল্লা থেকে বের করে নেওয়ার জন্য। বের করলে আমার মনে হয়, আরফানুল হক রিফাত (বর্তমান মেয়র) বিপদে পড়তে পারতেন।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘ভারত বিভক্তির ফলে পাকিস্তান হয়েছে। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়েছে। কথা হলো যে ত্রিপুরা ভাগ হয়েছে। এটি একটি সীমানা ভাগ হয়েছে, হৃদয় ভাগ হয়নি। এ দেশের পাখি এখনও ত্রিপুরা যায়, ত্রিপুরার পাখি এ দেশে আসে। বর্ডার আমাদের কী ক্ষতি করলো? এটি শুধু একটি সীমানা।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২৩ বছরের ইতিহাসে কোথায়, কোন জায়গায় জিয়াউর রহমানের নাম আছে? কোথায় পাবো আমরা জিয়াউর রহমানের নাম? যেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো সেদিন জানলাম, হত্যাকারী দলের নেতা জিয়াউর রহমান। ক্ষমতায় আসার পর জিয়া ও এরশাদ এই সংস্কৃতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে।’
এ সময় সরকারের এক অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিবের উদাহরণ টেনে কে এম খালিদ বলেন, ‘তিনি অবসরে যাওয়ার পর মসজিদে ফতোয়া দিলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাওয়া যাবে না। অবসর যাওয়ার পরপরই বলছেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা ইসলামে পারমিট করে না। তুই চাকরি করাকালীন বলতি! দেখতাম তোর সাহস কেমন! চাকরিটা যাওয়ার পর জুমার দিনে এক মসজিদে এই ওয়াজ করলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যাদের ওপর আস্থা রেখেছেন সবাই আপনার ওপর আস্থা রাখেনি। তার প্রমাণ সদ্য অবসরে যাওয়া এই সচিব। সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য যে শোভাযাত্রা সেটিই মঙ্গল শোভাযাত্রা। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান আসলো কীভাবে? স্বাধীনতা যুদ্ধেতো কোন ভেদাভেদ ছিলো না।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হাসান পাখী।
বাংলা সংস্কৃতি বলয়ের সাময়িক বিশ্ব কমিটির সদস্য সচিব দীপক চন্দ্র ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কাজী মাহতাব সুমন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলা সংস্কৃতি বলয়ের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ হাসান ইমাম মজুমদার ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেবক ভট্টাচার্য।
উল্লেখ্য, ‘সংস্কৃতি মনন গড়ে, বাংলা বলয় বিশ্বজুড়ে’ এই স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালির অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্যসমূহকে ধারণ, লালন ও সংরক্ষণের জন্য ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বাংলা সংস্কৃতি বলয় আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম বিশ্ব সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বাংলা সংস্কৃতি বলয়ের ১২টি সাংস্কৃতিক অঞ্চলের ১৫০ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।