বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব   নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি   নির্বাচনে ২১ সদস্যের মনিটরিং সেল গঠন ইসির   দেশজুড়ে যে তিনদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা!   মির্জা ফখরুলের জামিন শুনানি ৯ জানুয়ারি   প্রাথমিকের ছুটি বাড়ল ১৬ দিন (তালিকা)   নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রচারণা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
রায়পুরায় দুই শিক্ষকের দ্বন্দ্বে দুই শিক্ষার্থী কারাগারে
রায়পুরা পৌর প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩, ৯:১৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

নরসিংদীর রায়পুরার চরসুবুদ্ধি ফাজিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এর দ্বন্দ্বের কারণে এবার দুই শিক্ষার্থীকে কারাগারে যেতে হয়েছে। 

এরা হলেন, রায়পুরা উপজেলার চরসুবুদ্ধি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মোঃ নজরুল ইসলামের ছেলে মোঃ হৃদয় হোসেন (১৭) ও শিবপুর উপজেলার মুরগীবের গ্রামের জজ মিয়ার ছেলে মোঃ মেহেদী হাসান (১৬)। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ মে (শনিবার) দাখিল পরীক্ষার ইংরেজি ১মপত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত পরীক্ষায় মোঃ মেহেদী হাসান চরসুবুদ্ধি ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২০২৩ সালের দাখিল পরীক্ষার্থী ছিলেন। সে রোল- ১১০৩৫১. রেজি:নং- ২০১৮৯৭৭২৩৪. শিক্ষাবর্ষ-২১-২২ এর নিয়মিত পরীক্ষার্থী হয়ে সৈয়দপুর মোহাম্মদীয়া মাদ্রাসায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীর বদলে মোঃ হৃদয় হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। বিষয়টি কেন্দ্র পরিদর্শক প্রভাষক মোহা: আছিয়া বেগমের সন্দেহ হলে তিনি পরীক্ষার্থীকে চ্যালেঞ্জ করলে ওই শিক্ষার্থী ভূয়া পরীক্ষার্থী হিসেবে প্রমানিত হয়। পরে তিনি বিষয়টি কেন্দ্র সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানালে ভূয়া পরীক্ষার্থী হৃদয় ও মেহেদীকে পুলিশে সোপর্দ করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, চরসুবুদ্ধি ফাজিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক এবি এম গাজিউর রহমান এবং একই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান সম্পর্কে শ্যালক। গাজিউর রহমানের শ্বশুর বাড়ি শিবপুর উপজেলার মুরগিরবের গ্রামে এবং শ্যালক হওয়ার সুবাদে মেহেদী ওই মাদ্রাসা থেকে বাড়তি সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষক ও স্থানীয়রা। 

এবিষয়ে তিনি অস্বীকার করলেও পরে তিনি স্বীকার করে বলেন, আমার দূরসম্পর্কের শ্যালক। আমি গত একমাস যাবত অসুস্থ। নিয়মিত মাদ্রাসায় আসা হয় না। কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলো বা না করলো তা আমার দেখার বিষয় না। আমার অনুপস্থিতিতে এটা দেখেন মাদ্রাসার সহকারী প্রধান শিক্ষক। তিনি কেন্দ্র পরিদর্শন এবং স্বাক্ষর করে থাকেন। এখানে কিভাবে ভূয়া (প্রক্সি) পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করলো তা আমি জানি না। এটা সম্পূর্ণ দায়িত্ব সহকারী প্রধান শিক্ষকের উপর। আমি শুধু দেখি মাদ্রাসার শিক্ষকদের। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাকে সহকারী প্রধান শিক্ষক  সামসুউদ্দিন বিপদে ফেলার জন্য এসব কথা বলে বেড়াচ্ছে। সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। মাদ্রাসার বিভিন্ন অনিয়মের কারণে পরিচালনা কমিটি তাকে বেশ কয়েকটি দায়িত্ব হতে অব্যাহত রাখে। এতে সে ঈষার্নিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছেন বলে তিনি দাবী করেন। তিনি আরও বলেন, আমি যদি এবিষয়ে সাথে যুক্ত থাকতাম তাহলে আমার শ্যালকের বিরুদ্ধে আমি বাদী হয়ে মামলা করলাম কেন?  

অপরদিকে সরকারী প্রধান শিক্ষক মাওলানা সামসুউদ্দিন খোকন বলেন, মেহেদী হাসান প্রধান শিক্ষকের শ্যালক। সে নিয়মিত মাদ্রাসায় আসে না। তাকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতেও দেখি নাই। কে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলো না করলো তা আমার দায়িত্ব না। এটা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব। ২০১৪ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থাকাকালিন আমি ওই প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ দিয়েছিলাম। বর্তমানে তার একক সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। পরিচালনা কমিটিকে আমার বিরুদ্ধে ভূলবাল বুঝিয়ে তিনি যা ইচ্ছে তাই করেন। নেন না কোনো শিক্ষককের মতামত। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আপনারা তদন্ত করে সত্যটা বের করুন। আমি চাই সত্য বের হয়ে আসুক। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষক বলেন, প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব আগে দুইজনেরই ছিল। প্রধান শিক্ষকের কথা শুনে পরিচালনা কমিটি হঠাৎ করে সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব কিছুটা শিথিল করেন। এতে করে দু'জনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে আজ দু'জন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন শেষ। আজ তারা কারাগারে বন্দী।

স্থানীয়রা বলেন, মেহেদী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক গাজিউর রহমানের শ্যালক। তার শ্যালক বলেই সে এত সাহস দেখিয়েছে। আর এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। তাদের এই কান্ড জ্ঞানহীন কারণে আজ দু'জন ছাত্রকে  কারাগারে যেতে হলো।

কেন্দ্র সচিব তাজ উদ্দিন বলেন, এ কেন্দ্রে ১১টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়। প্রত্যেক মাদ্রাসার প্রধানগন এসে তাদের শিক্ষার্থীদের নিশ্চিত করে আমাদের কাছে স্বাক্ষর করে যান। প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের যাচাই করার মতো সুযোগ আমাদের নেই। অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি চরসুবুদ্ধি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক এবিএম গাজিউর রহমান এর শ্যালক এর পরিবর্তে হৃদয় নামে অন্য এক ছেলে এতদিন পরীক্ষা দিয়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আজগর হোসেন বলেন, অন্যের হয়ে পরীক্ষা (প্রক্সি) দিতে আসা হৃদয়কে আটক করি। সে ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শ্যালক মেহেদীর হয়ে প্রক্সি দিতে আসে। অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদে সে সব স্বীকার করেছে। প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়ায় মোবাইল কোর্টের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তবে পাবলিক পরীক্ষার প্রচলিত আইনে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শনিবার (২৭ মে) সকালে উপজেলার সৈয়দপুর মোহাম্মদীয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী সেজে প্রক্সি পরীক্ষা দিতে এসে পুলিশের নিকট আটক হোন। সে মেহেদীর হয়ে পরীক্ষা দিতে আসেন।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]